Hot

ড. ইউনূসের সাজার স্থগিতাদেশ বাতিল: বিচার নিয়ে মন্তব্যের ক্ষেত্রে কূটনীতিকদের সতর্ক থাকা উচিত – পিটার হাসকে ইঙ্গিত করে হাইকোর্ট

শ্রম আইনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের অন্য কর্মকর্তাদের সাজা স্থগিতাদেশ বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের আপিলের শুনানি শেষে গতকাল সোমবার বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর ফলে ইউনূসকে দেয়া ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশই বহাল থাকলো। এ কথা জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

গতকাল শুনানিকালে আদালত বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা উচিত। সম্প্রতি পিটার ডি হাসের আতিথেয়তা গ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে এ বিষয়ে সামাজিক যাগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশস্থ মার্কিন দূতাবাস তার অফিসিয়াল পেইজে ড. ইউনূসকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ও অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের আতিথেয়তা করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। স্ট্যাটাসে আরো বলা হয়, ড. ইউনূস এবং তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এ মামলাগুলো বাংলাদেশের শ্রম আইনের অপব্যবহারের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে বলে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
মার্কিন দূতাবাসের এ বক্তব্য সম্পর্কে খুরশীদ আলম খান আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ প্রেক্ষাপটে আদালত জানতে চান, কোনো বিদেশি কূটনীতিক যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিচার নিয়ে মন্তব্য করেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার উপায় আছে কি না। জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত কোনো রাষ্ট্রদূত বা কূটনীতিকের বিরুদ্ধে কনটেম্পট প্রসিডিং ড্র করতে পারেন না এবং তলব করতে পারেন না। তবে পর্যবেক্ষণ দিতে পারেন। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া যাবে। তিনি বলেন, ড. ইউনূসের মামলা নিয়ে পিটার হাস যে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, তা আদালত অবমাননার শামিল। আমি তাকে আদালতে হাজির করার জন্য বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চাইছি না। তবে জেনেভা কনভেনশেন অনুযায়ী সরকার তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে। তারপরও বিষয়টি কোর্টের ওপর ছেড়ে দিলাম।

এ সময় ড. ইউনূসের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন আদালতকে বলেন, বাদীপক্ষের আইনজীবী কোর্টের মাথায় লবণ রেখে বরই খেতে চান। পিটার হাসের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা নিতে হয়, তাহলে জাতিসংঘ শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ও বিশ্বের বিশিষ্ট নাগরিক যারা ইউনূসের মামলা নিয়ে বক্তব্য- বিবৃতি দিয়েছেন, তাদেরও এ মামলায় আনতে হবে। আর এটা করলে কী হবে, তা সবাই জানে। বাদীপক্ষের আইনজীবী কোনো রকম ট্রেনিং ছাড়াই মামলা পরিচালনা করছেন। এতে সরকার ও আদালত সবারই ক্ষতি হচ্ছে।

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ কোনো বিদেশি ব্যক্তি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিচারব্যবস্থা নিয়ে কোনো কথা বলতে পারেন না। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে কূটনীতিকদের সতর্ক থাকা উচিত।

এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ৬ মাসের সাজার বিরুদ্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিদেশ যেতে হলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করে যেতে হবেÑ মর্মে আদেশ দেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূসের ৬ মাসের সাজা স্থগিতের আদেশ স্থগিত করেন। পাশাপাশি স্থগিতের আদেশ বাতিল প্রশ্নে রুল জারি করেন।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় ড. ইউনূসের ৬ মাসের সাজা স্থগিতের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। এছাড়া আদালতের অনুমতি ব্যতীত তিনি যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন সেই লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ আসামিদের ১ মাসের জামিন দেয় হয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করলে ট্রাইব্যুনাল তার দণ্ডাদেশ স্থগিত করেন। সেই সঙ্গে তাকে জামিন দেন। জামিন দেয়া হয় সাজাপ্রাপ্ত গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম ও মো: শাহজাহানকে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button