ঢাকায় পুলিশের বিশেষ অভিযানেও থামছে না ছিনতাই, ঘটছে প্রাণহানিও
ছিনতাই দমনে রাজধানীতে গত জুলাই মাসজুড়ে বিশেষ অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। অভিযানে প্রায় এক হাজার ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে লাগাম টানা যায়নি ছিনতাইয়ের। ছিনতাইকালে ঘটেছে হতাহতের ঘটনাও।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ১ জুলাই ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মনিরুজ্জামান নিহত হন। এরপর ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নিয়ে জরুরি বৈঠকে ছিনতাই প্রতিরোধে বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিএমপির আটটি অপরাধ বিভাগে প্রতিদিন রাত আটটা থেকে পরদিন ভোর ছয়টা পর্যন্ত এ বিশেষ অভিযান চালানো হয়। ডিএমপির একজন যুগ্ম কমিশনারের (অপরাধ) তত্ত্বাবধানে অভিযান তদারক করেন উপকমিশনার পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা।
বিশেষ অভিযানে প্রতিদিনই ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যে এলাকায় ছিনতাই হবে, সেই থানার ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
—খন্দকার গোলাম ফারুক, ডিএমপি কমিশনার
ডিএমপি সূত্র জানায়, জুলাইয়ের প্রথম ১৪ দিনে ৬৭৯ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি ১৭ দিনে গ্রেপ্তার হয় তিন শতাধিক ছিনতাইকারী। ডিএমপির সাসপেক্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেমের (এসআইভিএস) তথ্য বলছে, রাজধানীতে ৬ হাজার ১৯৮ জন ছিনতাই ও ডাকাতিতে জড়িত। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৩৭ জন ছিনতাইকারী।
এদিকে ডিএমপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১ থেকে ২২ জুলাই রাজধানীতে ৩৯টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। যদিও কয়েকজন ভুক্তভোগী সঙ্গে কথা বলে ও রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে গত মাসে রাজধানীতে শতাধিক ছিনতাইয়ের তথ্য পাওয়া গেছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে ডিএমপির কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের জোর তৎপরতার মধ্যেও ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া।
প্রায় প্রতিদিন পথচারীদের কাছ থেকে মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। মাঝেমধ্যে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে প্রাণহানিও ঘটছে। ১৬ জুলাই রাতে ধানমন্ডির শেখ জামাল মাঠের পূর্ব পাশের ফুটপাতে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন আদনান সাঈদ ওরফে রাকিব (১৮) নামের এক কলেজছাত্র। গত বুধবার গভীর রাতে গুলিস্তান এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে জাকির হোসেন (৪৩) নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর ছেলে জসিম উদ্দিন (১৭) আহত হন। কারওয়ান বাজারে তাঁদের মুরগির দোকান আছে। দুটি মোটরসাইকেলে করে আসা চার ছিনতাইকারী দুজনকে ছুরিকাঘাত করে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। একই দিন বিকেলে মোহাম্মদপুরের জাফরাবাদে ইমন মিয়া (১৭) নামের এক শিক্ষার্থীর গলায় ছুরি ধরে মুঠোফোন ও টাকাপয়সা নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এর আগে ১১ জুলাই রাতে ফকিরাপুল এলাকায় ভোরের কাগজ–এর সম্পাদনা সহকারী মাহমুদুল হাসান ছিনতাইয়ের শিকার হন।
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার শুক্রবার রাতে বলেন, বিশেষ অভিযানে প্রতিদিনই ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যে এলাকায় ছিনতাই হবে, সেই থানার ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও একটা সময়ে জামিনে বেরিয়ে পুরোনো পেশায় যুক্ত হচ্ছে ছিনতাইকারীরা। বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে আত্মসমর্পণের উদ্যোগ নিয়ে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা গেলে এ ধরনের অপরাধ কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছিনতাইকারীরা সাধারণত মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত তৎপর থাকে। তারা ভোরে বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশন থেকে বাসামুখী রিকশাযাত্রী অথবা বাসা থেকে স্টেশনমুখী যাত্রীদের নিশানা বানায়। কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন আড়তমুখী ব্যবসায়ীদেরও নিশানা করে তারা।
এ বিষয়ে ডিএমপির সাবেক কমিশনার নাইম আহমেদ বলেন, বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি পুলিশের টহল ও নিরাপত্তাচৌকি বসিয়ে তল্লাশি বাড়াতে হবে। এভাবে ছিনতাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।