Bangladesh

ঢাকার মার্কেট আলো ঝলমল, রাত ৮টার মধ্যে মার্কেট বন্ধের নির্দেশনা মানছে না কেউ

ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা বন্ধের ঘোষণা কার্যকর হয়নি : বিদ্যুৎ খেকো ব্যাটারিচালিত হাজার হাজার রিকশা পাড়া-মহল্লার অলিগলি থেকে রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করছে :: বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, ডিপিডিসি ও সিটি কর্পোরেশন নির্দেশনা দিয়ে দায় সেরেছে : পুলিশ বলছে আমরাও নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি

দেশে বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা বেশি প্রচার করা হলেও লোডশেডিং বন্ধ হচ্ছে না। ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস ও কয়লা সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বিল দিতে পারছে না সরকার। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি সাশ্রয়ের পরিকল্পনায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে রাত ৮টার পর দোকানপাট-শপিংমল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)।্ একই নির্দেশনা দেয় ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এর আগে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দেয়। এই নির্দেশ অমান্য করা হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার আদেশও কার্যকর আছে। তবে সরকারের এই কঠোর নিয়ম রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মার্কেটগুলোতে মানতে দেখা যায়নি। বরং রাত ৮টা বাজলেই দোকানদাররা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘চোর-পুলিশ খেলায়’ ব্যস্ত হয়ে পড়েন। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে টহল দেওয়া হলেও কোথাও কোথাও এই টহলেও শিথিলতা দেখা গেছে। একই সঙ্গে অবৈধভাবে চলাচল করা ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি চার্জেও বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হলেও সেটাও কার্যকর হচ্ছে না।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন গত রাতে ইনকিলাবকে বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ডিপিডিসি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যে আহŸান জানিয়েছে, তা বাস্তবায়নে আমরা মাঠ পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ডিপিডিসি কিংবা সিটি কর্পোরেশন চাইলে পুলিশ আইনগত সহযোগিতা করবে।

গত বুধ ও গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা যাত্রাবাড়ী, টিকাটুলি, গুলিস্তান, পুরানা পল্টন, এলিফ্যান্ট রোড, মগবাজার, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার, রামপুরা, বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, গুলশান, বনানীসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ মার্কেট রাত ৮টায় বন্ধ হয়নি। মার্কেট, বিপণি বিতান, শপিংমল খোলাই রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ এলাকায় প্রধান প্রধান সড়কের দুই পাশের অধিকাংশ দোকানপাট রাত ৮টার পর খোলা দেখা গেছে। উত্তরার রাজল²ী, আজমপুর, হাউজ বিল্ডিং ও আব্দুল্লাহপুরের প্রধান সড়কগুলোর উভয় পাশের বিপুল সংখ্যক দোকানপাট খোলা দেখা গেছে রাত ৮টার পর। উত্তরার একজন দোকান-মালিক বলেন, ‘সন্ধ্যার পরই মূলত বেচা-বিক্রি বেশি হয়। তাই দোকান খোলা রাখার চেষ্টা করি আমরা।

রাজধানীর মগবাজারের বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট বন্ধে শিথিলতা দেখা গেছে। মগবাজার মোড় থেকে নয়াটোলার দিকে যাওয়ার সড়ক, ওয়্যারলেস রেললাইন এলাকা, মধুবাগ এলাকায় মুদি দোকান, ইলেকট্রনিক্স, হার্ডওয়্যার, লেপ-তোষকের দোকান খোলা রাখা হচ্ছে রাত বারোটা, সাড়ে বারোটা পর্যন্ত। যাত্রাবাড়ী, দোলাইরপাড়, দয়াগঞ্জ, টিকাটুলিতে একই চিত্র দেখা গেছে। কখনও কখনও পুলিশের টহল টিমের উপস্থিতিতে শাটার বন্ধ করা হলেও আবার বেচাকেনা শুরু হয়। গুলশান, বনানী, রামপুরা ও বাড্ডার দোকানপাটের বেশির ভাগই খোলা দেখা গেছে। বিশেষ করে মুদি দোকান, স্টেশনারি, খাবার হোটেল, শো-রুম ও গাড়ির স্পেয়ারের দোকান রাত ১০টায় খোলা দেখা গেছে।

জানতে চাইলে ডিপিডিসির এনওসিএস অফিসের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শের আলী বলেন, রাত ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধের এই নির্দেশনা বছরজুড়েই থাকবে। মাইকিং করা ছাড়াও বিভিন্ন পদ্ধতিতে মার্কেট মালিক ও দোকানদারকে সতর্ক করার পরও যারা এই নির্দেশনা মানবে না তাদের প্রথমে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হবে, এরপর নির্দেশনা অমান্যকারীদের প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, রাত ৮টার পর থেকে দোকানপাট, বিপণি বিতান ও শপিংমলগুলো বন্ধের ব্যাপারে এই মুহূর্তে কোনো অভিযান চলছে না। তবে এখন রাত ৮টার পর থেকে দোকান ও শপিংমলগুলো কারা খোলা রাখছে এ ব্যাপারে তদারকি ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তদারকি ও পর্যালোচনা শেষে যারা যারা নির্ধারিত সময়ের পর দোকানপাট, শপিংমল ও বিপণি বিতান খোলা রাখছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা শহরকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে যা যা করা দরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন করবে।

জনসাধারণের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাত ৮টার পর শপিংমল ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। রাজধানীতে এ নির্দেশ অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিপিডিসি) সঙ্গে নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কিন্তু বাস্তবে বিদ্যুৎ বিভাগের এ নির্দেশ মানছে না অনেকেই। ঢাকার বিভিন্ন শপিংমল ও মার্কেট ঘুরে দেখা যায় রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত অনেক মার্কেটে বেচা-কেনা চলছে। ঢাকার অদূরে নারায়ণগজ্ঞের চিত্রও একই। সম্প্রতি ৭টি নির্দেশনাসহ এক বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, গরমের দিনে বিদ্যুৎ সংকট বেশি হয়। বিজ্ঞপ্তিতে সংকট মোকাবিলা করতে ও লোডশেডিং কমাতে রাত ৮টার পর থেকে মার্কেট ও দোকান বন্ধসহ পেট্রোল পাম্প, সিএনজি স্টেশনে অতিরিক্ত বাতি ব্যবহারে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির পর নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে মাইকিং করেও সতর্ক করা হয়। তবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন পোশাকের শো-রুমসহ বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে। তবে নিয়মের মধ্যে রয়েছে নবাবপুর ইলেকট্রিক মার্কেট।

ঢাকার একাধিক মার্কেট পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, রাত ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধের জন্য সরকারের দেয়া নির্দেশনা তারা সকল ব্যবসায়ীকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। অনেকেই নিয়মের মধ্যে রয়েছেন। তবে অনেকের মধ্যে রয়েছে গা-ছাড়া ভাব। গতকাল বৃহস্পতিবার উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর পলওয়েল কারনেশন শপিং সেন্টারের ডায়মন্ড টাচ ঘড়ির দোকানসহ অনেকেই বলেন, ৮টায় মার্কেট বন্ধ হওয়ার নির্দেশ থাকলেও বন্ধ হতে হতে তাদের রাত ৯টা পর্যন্ত লেগে যায়। হাউজ বিল্ডিং নর্থ টাওয়ার দ্বিতীয় তলার ১১২ নং কাপড়ের দোকান ওয়াফা-এর বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন রাত ৯টায় আসলেও জামাকাপড় কিনতে পারবেন। মাসকাট প্লাজার দোকানদারগণও জানান, রাত ৯টা পর্যন্ত তাদের মার্কেট খোলা থাকে। উত্তরা জোনে রাত ৮টার মধ্যে বড় বড় শপিং কমপ্লেক্স ও দোকান বন্ধের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন উত্তরা অঞ্চল-৭ এর সহকারী প্রকৌশলী রাজুউদ্দিন রাজিব বলেন, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই, এটি ডিপিডিসি নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে এ বিষয়ে কোনো ধরনের নির্দেশনা পেলে তারা কাজ করবেন।

মোহাম্মদপুর এলাকার জেনেভা ক্যাম্পে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি অবহেলা। দোকানপাট খোলা থাকে প্রায় শেষ রাত অবধি। প্রশাসনের কোনো টহল টিম সেখানে গেলেও কোনো প্রভাব পড়ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় একজন বাসিন্দা। অনেক ব্যবসায়ী রাত ৮টার পর দোকান বন্ধের ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
গুলশান, বনানী, রামপুরা ও বাড্ডার দোকানপাটের বেশির ভাগই বিশেষ করে মুদি দোকান, স্টেশনারি, খাবার হোটেল, শো-রুম ও গাড়ির স্পেয়ারের দোকান বন্ধ হতে দেখা যায় ১০টা থেকে ১১টার দিকে। তবে বিদ্যুতের লোকজন আসে না, সংযোগও কাটে না।

তবে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকা শহরে রাত ৮টার পর শপিংমল ও মার্কেট খোলা রাখার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ও শহরের স্বস্তির জন্য এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই স্বাগতম জানাচ্ছেন। যারা এ সিদ্ধান্তের ব্যতিক্রম করবে বা রাত ৮টার পর দোকানপাট খোলা রাখবে, মার্কেট খোলা রাখবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা ৮টার পর দোকানপাট খোলা রাখবে, বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করার চেষ্টা করবে, আমরা ডিপিডিসিকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করব। চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ নিশ্চিতে শপিংমল ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রাত ৮টার পর বন্ধ রাখার যে আহŸান বিদ্যুৎ বিভাগ রেখেছে, তা সবাইকে মানতে হবে। রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ রাখার এ নিয়ম যে নতুন নয়, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা কয়েক বছর আগেই এ ঘোষণা দিয়েছি। আমরা অভিযান পরিচালনা করব। এখন থেকে প্রত্যেক অঞ্চলে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এদিকে আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নির্দেশনা অমান্য করে রাত ৮টার পর সকল মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও মানছে না নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ মার্কেট মালিকরা। দেখার যেন কেউ নেই। অভিযোগ রয়েছে, মার্কেটগুলো তাদের সাপ্তাহিক বন্ধও রাখছেন না। সপ্তাহজুড়ে মার্কেট খোলা রাখছে। সরেজমিন রাত ৯টার পর জেলার কয়েকটি উপজেলা শহর ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ দোকানপাটই খোলা রাখা হয়েছে। জেলার চাষাড়া বঙ্গবন্ধু সড়কের প্যানোরমা প্লাজা, লুৎফা টাওয়ার, সায়েম প্লাজা, হাসান প্লাজা, সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া, আড়াইহাজার উপজেলার জাঙ্গালিয়াসহ বিভিন্ন মার্কেট খোলা দেখা গেছে। শুধু চাষাড়া এলাকায় নয়, শহরজুড়ে বিভিন্ন মার্কেট খোলা দেখা গেছে। তবে কোনো কোনো মার্কেট ৮টার মধ্যেই বন্ধ করতে দেখা গেছে। এর আগে ২৪ এপ্রিল রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়কে ডিপিডিসির পক্ষ থেকে মাইকিং করে দোকানিদের সতর্ক করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ী তা আমলে নিচ্ছেন না।

দেখা যায়, সারাদেশে অবৈধ রিকশার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, সেই সাথে এসব অটোরিকশা গ্যারেজে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের সংখ্যাও বাড়ছে। একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে অটোরিকশা চার্জ করে বিদ্যুতের অপচয় করা হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা ও অটোরিকশা চার্জ দিতে গিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‹প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে গ্রামাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ যত দ্রæত পারা যায় ব্যবস্থা করতে। তেল ও অর্থের সংকটে দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে লোডশেডিং করতে হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অনেক জায়গায়। তবে এখন সার্বিকভাবে আমাদের পরিস্থিতি আগের থেকে ভালো।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d