Hot

ঢাকা-ইসলামাবাদ সমুদ্র যোগাযোগ: ভারতের ওপর কী প্রভাব পড়বে?

১৯৭১ সালে নয় মাস ব্যাপী এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছে বাংলাদেশ। তখন ঢাকার পাশে ছিল নয়াদিল্লি। এরপর থেকে গত পাঁচ দশকে ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ হিসেবেই আখ্যায়িত হয়েছে ভারত। আর বৈরিতা ছিল ইসলামাবাদের সঙ্গে। তবে স্বাধীনতার তেপ্পান্ন বছর পর এসে এবার যেন সেই চিত্র পুরোপুরি পালটে গেল। 

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের বৈরিতা বেড়েছে। আর এদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন লেনাদেনা শুরু করেছে ঢাকা। সম্প্রতি দেশটির একটি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে। করাচি থেকে আসা জাহাজটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে সফলভাবে কন্টেইনার খালাস করেছে। 

বহু বছর পর পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ ভারতের ভারতের নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলবে বৈকি। 

সরাসরি করাচি থেকে চট্টগ্রামে জাহাজ

পানামার পতাকাবাহী ১৮২ মিটার (৫৯৭ ফুট) লম্বা কন্টেইনার জাহাজ ইউয়ান শিয়াং ফা ঝান পাকিস্তানের করাচি থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। চট্টগ্রামের শীর্ষ কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, গত ১১ নভেম্বর জাহাজটি বাংলাদেশে পণ্য খালাস করে বন্দর ছেড়ে যায়।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাহাজটি পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশের প্রধান পোশাক শিল্পের কাঁচামাল এবং মৌলিক খাদ্যসামগ্রীসহ পণ্য নিয়ে এসেছে। 

পাকিস্তানি পণ্য আগে সরাসরি এভাবে বাংলাদেশে আসতো না। সাধারণত ফিডার জাহাজে করে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশে আসতো। তবে সেপ্টেম্বরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে বাংলাদেশ পাকিস্তানি পণ্যের উপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে। 

সরাসরি সমুদ্র সংযোগ স্থাপনের বিষয়টিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পাকিস্তানের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপনের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এ নিয়ে ফেসবুকে এক পোস্টে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আহমেদ মারুফ লিখেছেন, দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরাসরি জাহাজ চলাচল রুট একটি ‘বড় পদক্ষেপ’।

হাসিনা ও পাকিস্তান

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বিভক্ত হয়। ওই যুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ বাঙালি নিহত হয়েছে। হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় মানসে এসব গভীরভাবে দাগ কেটে আছে। 

এসব স্মৃতির কথা স্মরণ রেখে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান পাকিস্তান একাধিকবার ক্ষমাও চাইতে বলেছিল শেখ হাসিনা সরকার। তবে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো তা করেনি। 

মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষত ঢাকায় শেখ হাসিনার শাসনামলে তা সবচেয়ে বেশি হয়েছে। যার কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক এজেন্ডা ছিল নৃশংস যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। তিনি তা করেছেনও। 

হাসিনা ও ভারত 

শেখ হাসিনা যখনই ক্ষমতায় ছিলেন বাংলাদেশকে ভারতের খুব কাছাকাছি নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নয়াদিল্লির সহায়তার সৌজন্যে বাংলাদেশিদের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তিনি। 

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সঙ্গে নেহরু-গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল বলে শোনা যায়। 

যখন তার শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লব সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে তার সম্পর্ক তাকে ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিল। আর স্বৈরাচারী হাসিনার সরকারের পতনের পর নয়াদিল্লির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

ভারতের ‘পুতুল’ হাসিনা

বছরের পর বছর হাসিনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিকিয়ে রাজনীতি করেছেন। এই বিপ্লবে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। জুলাই মাসে শেখ হাসিনা যখন বিক্ষোভকারীদের ‘রাজাকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন, তখন তা উল্টো ফল বয়ে আনে তার জন্য।

এ ছাড়া নয়াদিল্লির সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ থাকায় হাসিনাকে অনেক বাংলাদেশি ভারতের পুতুল মনে করেন। বাংলাদেশিদের মধ্যে ভারতের প্রতি অসন্তোষ জন্ম নিয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অনেকে মনে করেন দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত খুব বেশি হস্তক্ষেপ করেছে। 

বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ‘ভারত-বিরোধী’ মনোভাব প্রকাশ পায় যখন আগস্ট মাসে একটি জনতা পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজধানীতে ভারতীয় সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্রবিন্দু ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (আইজিসিসি) ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগও করে।

পাকিস্তান-বাংলাদেশ লেনাদেনা

শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকে ঝুঁকেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং ড. ইউনূস চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। 

বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ‘নতুন অধ্যায়’ নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস সম্প্রতি বলেন, আমাদের সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সমুদ্রসীমা সংযোগ অপরিহার্য।

বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দ দুটি বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। এই প্রস্তাবের ফলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি একটি ইসলামী রাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকতে পারে।

হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে বিপাকে ভারত

ভারতে নির্বাসিত শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণও চাইছে বাংলাদেশ। ঢাকা এরই মধ্যে ৭৭ বছর বয়সি এই নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে এবং ‘গণহত্যা, হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে তাকে ঢাকায় আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেছে।

জনাব ইউনূস বলেন, তার প্রশাসন হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আন্দোলন দমন করার জন্য দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার দিকে মনোনিবেশ করছে।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সি ইউনূসকে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের লৌহ-মুষ্টিবদ্ধ শাসনের অবসানের কয়েকদিন পর ৯ আগস্ট সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউনূস বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের সঙ্গে তার কথা হয়েছে।

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ইউনূস বলেন, আমরা ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসককে ভারত থেকে প্রত্যর্পণ চাইব। 

এ মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশ জানিয়েছিল, শেখ হাসিনার শাসনামলের পলাতক নেতাদের জন্য ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ অ্যালার্ট জারির অনুরোধ করবে তারা। 

নিরাপত্তাহীনতায় নয়াদিল্লি

পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা বেড়ে যাওয়ায় ইসলামাবাদ ও ঢাকার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। 

বছরের পর বছর ধরে, ভারত চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমের উপর নজর রাখার জন্য শেখ হাসিনার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেছে। এখন শেখ হাসিনা নেই। তাই শঙ্কিত ভারত। আইএসআইয়ের উৎপাত এ অঞ্চরে বেড়ে যেতে পারে শঙ্কা ভারতের। 

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ভারত। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে সহিংস বিক্ষোভে হিন্দুসহ ছয় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports