ঢাকা ও আশপাশে ৮ ‘আয়না ঘর’ এখনো নিখোঁজ ২শ’ জন
রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় অন্তত: ৮টি গোপন বন্দিশালার (আয়না ঘর) খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব বন্দিশালার কয়েকটি কক্ষে মাত্র তিন-চার ফুট জায়গার মধ্যে মানুষকে বন্দি রাখা হতো। হাসিনা উৎখাত হওয়ার পর এসব বন্দীশালার প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এ তথ্য জানিয়েছেন গুম কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মাঈনুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি আরো জানান, ভারতে পালিয়ে যাওয়া মাফিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপহৃত হওয়া অন্তত: ২শ’ জনের কোনো হদিস মেলেনি। তারা কোথায় আছেন, বেঁচে আছেন কী হত্যা করা হয়েছে- সেই তথ্য নেই কারো কাছে। এ তথ্য জানিয়েছে গুম অনুসন্ধানে গঠিত ‘গুম তদন্ত কমিশন’। কমিশন বলেছে, নিখোঁজ এসব ব্যক্তির কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। তাদের সন্ধান পাওয়া কমিশনের অন্যতম লক্ষ্য। কমিশন থেকে জানানো হয়, গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে তার টানা ১৬ বছরের কঠোর শাসনের অবসান ঘটে। হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে শত শত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা । আরও অনেককে বেআইনিভাবে অপহরণ ও গুম করার অভিযোগ।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের অধীনে গঠিত গুম তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, হাসিনার পতনের পর পাঁচজনকে গোপন বন্দিশালা থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তবে অনেকেই এখনো নিখোঁজ।
কমিশনের সদস্য নূর খান বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, কমপক্ষে ২০০ জনের এখনো খোঁজ মেলেনি। আমরা তাদের সন্ধানে কাজ করছি।
কমিশন জানিয়েছে, রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় অন্তত: ৮টি গোপন বন্দিশালার খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব বন্দিশালার কয়েকটি কক্ষে মাত্র তিন-চার ফুট জায়গার মধ্যে মানুষকে বন্দি রাখা হতো। কক্ষগুলোর দেয়ালে আটক ব্যক্তিদের হাতে আঁকা দিন গণনার চিহ্ন দেখা গেছে।
একজন কমিশনার জানান, হাসিনার পতনের পর অজ্ঞাত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব গোপন বন্দিশালার প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে।
কমিশনাররা বলেছেন, অধিকাংশ নিখোঁজের ঘটনায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)- কে দায়ী করে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০২১ সালে সিনিয়র সাত কর্মকর্তাসহ র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। শেখ হাসিনার শাসনামলের কিছু গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল।
তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হাসিনার শাসনামলে সরকারি ও বিচার ব্যবস্থার সাংগঠনিক ভাঙনের কারণে দায়মুক্তির সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জনস্বার্থে নয়, বরং নিজেদের এজেন্ডা ও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালিন সরকার গণতান্ত্রিক সংস্কারের অংশ হিসেবে এই তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তিনি একটি ‘সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া’ সরকারি প্রশাসন ব্যবস্থা পেয়েছেন। এটি নতুন করে সাজানোর প্রয়োজন, যেন ভবিষ্যতে স্বৈরাচারের প্রত্যাবর্তন রোধ করা যায়।