Bangladesh

ঢাকা নিয়ন্ত্রণে রাখার চিন্তা আ’লীগের

ঢাকা: বিএনপির সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনকে দলীয়ভাবে মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি দলটির সরকার আন্দোলনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও সহিংস পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হলে প্রশাসনিকভাবে প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিয়েছে।

জাতীয় নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনীতির মাঠ ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিএনপি ও তার মিত্রদের দাবি দীর্ঘ দিনের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দাবিটি আদায়ের জন্য নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি আজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে বিএনপি। যদিও বিএনপির এই আন্দোলনকে গুরুত্বহীন হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তারপরও নেতাকর্মীদের রাজপথে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেয়া হয়েছে নির্দেশনা। পাশাপাশি পাল্টা কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পালনের মাধ্যমে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার চিন্তা রয়েছে শাসকদলের।

দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করেন, বিএনপির সরকার পতনের জন্য যে আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার তার সক্ষমতা এবং শক্তি কোনোটাই নেই। এ লক্ষ্যে ঢাকার বাইরে বড় ধরনের সমাবেশ করলেও আওয়ামী লীগ সেটি নিয়ে তেমন মাথা ঘামাবে না। তবে ঢাকায় বিএনপি বড় ধরনের কোনো সভা সমাবেশ গড়ে তুলতে পারলে সেটি সরকারের জন্য হুমকি রয়েছে। তা ছাড়া বিএনপি ও তার মিত্ররা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে, তাদেরও চিন্তাভাবনা ঢাকা দখলে নেয়ার। এ জন্য আওয়ামী লীগও ঢাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য ঢাকায় যাতে বিএনপি বড় ধরনের কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে সে জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশপাশি দলের নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।

যার ফলে আজ বুধবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বেলা ৩টায় অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশ সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোকে বাড়তি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনার আলোকে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এবং ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করেছে। এর আগের দিন সোমবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বর্ধিত সভা করে। ওই বৈঠকগুলোতে প্রত্যেকটি থানা-ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীদের শান্তি সমাবেশে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেও কেন্দ্রীয় নেতারা বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার নির্দেশনা দেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে। ওই কর্মসূচিতে বড় ধরনের সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতির তথ্য আওয়ামী লীগের কাছে রয়েছে। আওয়ামী লীগও শান্তি সমাবেশ নিয়ে রাজপথে সক্রিয় থাকবে। তবে সমাবেশে কত হাজার বা কত লাখ নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো টার্গেট নেই আওয়ামী লীগের। এর আগের যে সমাবেশগুলো হয়েছে তার থেকে কিছু বেশি উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য থানা-ওয়ার্ড সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের ফোন করা হচ্ছে। মহানগর নেতারা বলছেন, বিএনপি আগে কর্মসূচি ঘোষণা করুক, তাদের কর্মসূচির নমুনা দেখে আমরাও সেভাবেই প্রস্তুতি নেবো। এখনই লাখ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা নেই।

বিএনপির এক দফা আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, গত ১৪ বছরে বিএনপি অনেক দফা দিয়েছে, আমরাও সেটি শুনে আসছি। তারা কোনোবারই আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি, ব্যর্থ হয়েছে। এখন এক দফার কথা বলছে। আমরা অতীতের মতো ওইভাবেই দেখছি। তিনি বলেন, আমরা জানি, বিএনপি নির্বাচন ভণ্ডুল করার জন্য অতীতের মতো অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সেই অপচেষ্টা সফল হবে না। বিএনপি আন্দোলনের নামে অতীতের মতো পেট্রলবোমা মেরে ও অগ্নি সন্ত্রাস করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে তাদের সে সুযোগ দেয়া হবে না। কারণ রাজপথ কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। তারা যেখানেই আগুন সন্ত্রাস চালাবে, নৈরাজ্য কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করবে জনগণকে সাথে নিয়ে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ চায়, বিএনপি তাদের দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করুক। তবে সেই আন্দোলন শুধু বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে সীমাবদ্ধ থাকুক। নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করলে কেউ বাধা দেবে না। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও নমনীয় নীতি দেখাবে। তাদের আন্দোলনের গতিধারা অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়–ক সেটি চায় না আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করেন, দীর্ঘ দিন ধরেই বিএনপি সরকার পতন আন্দোলনের কথা বলে আসছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আন্দোলন দাঁড় করাতে পারেনি। এমনকি তাদের নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে বড় ধরনের কোনো মিছিল বা সভা সমাবেশ করে দেখাতে পারেনি। সর্বশেষ গত ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ নিয়ে বিএনপির নেতারা অনেক লম্ফঝম্প করেছিল। তারা বলেছিল, ১০ তারিখে ঢাকা দখল করে ফেলবে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে। বিএনপির এক নেতা তো বলেই ফেললেন, ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। কিন্তু সেটি কি হয়েছে! ওই সময় তাদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে, অনেকেই গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেরিয়েছে। এভাবে তারা তাদের কর্মীদেরও ধোঁকা দিয়েছে। এতে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। ফলে বিএনপি যে সরকার পতনের এক দফার দাবি তুলেছে, সেগুলো আমলে নেয়ার কোনো কারণ দেখছি না। তবে ঢাকায় একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার পরিকল্পনা বিএনপির রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার দেয়া তথ্যের মাধ্যমে সরকার সেটি জানতে পেরেছে। সে জন্য আমরা সরকারি দল হিসেবে সতর্ক আছি। অন্তত ঢাকায় বিএনপিকে বড় ধরনের আন্দোলন কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ গড়ে তুলতে দেবে না। এর আগেও বিএনপির রাজপথ দখলের ঘোষণা দেয়ার পরই রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে শক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে। এরই মাধ্যমে বিএনপিকে একটি বার্তা দেয়া হয়েছে তা হলো- আওয়ামী লীগ রাজপথ ছাড়ে নাই। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে রাজপথ দখলে রাখবে।

শান্তি সমাবেশের প্রস্তুতি ও বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলা প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি আন্দোলন করতে হয় বলে তারা করছে। কিন্তু আন্দোলন সফল হওয়ার মতো যে সক্ষমতা থাকা দরকার, যে শক্তি থাকা দরকার তার কোনোটাই তাদের নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো- তারা যে সফল হবে তাদের আন্দোলনের নেতা কে, তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবে? এ বিষয়ে তারা সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা দিতে পারে নাই। যার ফলে নেতাকর্মীরাও হতাশ। তা ছাড়া আন্দোলন সফল করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ লাগে। তারা জনগণকে এমন কোনো স্বপ্ন দেখাতে পারে নাই যে, সাধারণ জনগণ তাদের সাথে থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্দোলন করার অধিকার বিএনপির আছে। তারা করতেই পারে। তবে আন্দোলন কিভাবে ঠেকাতে হয় তা আমরা জানি। আমরা আন্দোলন করেই এখানে এসেছি। আমরা বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত আছি।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: মিরাজ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি ২০১২-১৩ সালেও সরকার পতনের জন্য আন্দোলন করেছিল; কিন্তু তারা তখন সফল হয়নি। আন্দোলনে সফল হওয়ার ইতিহাস বিএনপির নাই। নির্বাচন সামনে আসলেই তারা একটু চাঙ্গা হয়, নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখে, এ জন্য আন্দোলনের কথা বলে। তিনি বলেন, বিএনপির মনে হয়েছে, তাই নির্বাচন সামনে রেখে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। এটা তারা দিতেই পারে। আমরাও ওইভাবেই দেখছি। তবে আমরা রাজপথে সতর্ক অবস্থানে থাকব। তারা যদি অতীতের মতো আন্দোলনের নামে সহিংসতা করে, মানুষের জানমালের ক্ষতি করে তাহলে আমরা প্রতিহত করব। শান্তি সমাবেশে উপস্থিতি প্রসঙ্গে মিরাজ হোসেন বলেন, কোনো টার্গেট নাই। আগে যে সমাবেশগুলো হয়েছে তার থেকে একটু বেশি হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button