Bangladesh

ঢাবিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ মুখোমুখি, রণক্ষেত্র: দফায় দফায় সংঘর্ষ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। আহতরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের অনেকেই আশঙ্কামুক্ত হওয়ায় চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে ১১ জনকে ভর্তি রেখেছেন চিকিৎসকরা। এদিন পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আহত হয়েছেন জনকণ্ঠের ফটো সাংবাদিক সুমন্ত চক্রবর্তী।

এতে তিনি দুই পায়ে আঘাত পেয়েছেন। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা হাসপাতাল চত্বরে ও ভেতরেও ছড়িয়ে পড়ে। এতে হাসপাতালজুড়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। 
এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার বেলা তিনটায় সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবেন তারা। সোমবার রাত সাড়ে নয়টায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। 
সোমবার  দুপুরের পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে, মল চত্বর, চাঁনখারপুল এলাকা, ঢামেক মেডিক্যালের ভেতরসহ ঢাবি ক্যাম্পাসের  বিভিন্ন জায়গায় এ ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনায় দিনভর ঢাবি ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অনুমতি পেয়ে পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গাড়ি দিয়ে টহল দেয় পুলিশ। উপস্থিত রয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।   
রবিবার রাত থেকেই ঢাবির ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলছে। কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় ছাত্রলীগও সতর্ক অবস্থান নিয়েছিল। পরে দুই পক্ষই রাতে নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরে যায়। তবে সোমবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে চলছিল থমথমে পরিস্থিতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ও ছাত্রলীগ।

দুপুর সোয়া ১২টা থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশে মিলিত হন। পরে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে হলপাড়ায় দিকে যান। বিজয় একাত্তর হলে গিয়ে ঢুকতে চাইলে হলের ওপর থেকে জুতা নিক্ষেপ করা হয়। এতে দুই গ্রুপের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এরপর আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান করছিলেন তারাও যোগ দেন।

এদিকে মধুর ক্যান্টিনের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের একটি অংশ। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের পাশাপাশি যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের জড়ো হতে দেখা যায়। এ ছাড়া মহানগর ছাত্রলীগ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে। 
আন্দোলনকারীরা রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে হলপাড়ায় এলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। কোটার মিছিলে যাতে শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে না পারে সে জন্য আবাসিক হলের গেটে অবস্থায় নেয় হল ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা।

দুপুর তিনটার দিকে ঢাবির বিজয় একাত্তর হলের সামনে গিয়ে হলের অভ্যন্তরে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের বের করতে গেলে ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এ সময় সাবাতুল ইসলাম নামে এক পদ প্রত্যাশী নেতার গায়ে হাত তোলে আন্দোলনকারীরা। এ ঘটনার পর হল থেকে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীদের একাংশ সূর্যসেন হলের দিকে আরেক অংশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দিকে অবস্থান নেয়।

এ সময় ধাওয়া দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দিকে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে সূর্যসেন হলের দিকে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল মারতে থাকে বিজয় একাত্তর হলের সামনে অবস্থান করা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও তাদের ওপর ইট-পাটকেল মারতে থাকে। সেখানে আধা ঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলার পর অন্যান্য আবাসিক হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিজয় একাত্তর হলের দিকে আসতে থাকে।

ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ভিসি চত্বরে অবস্থান নেয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয় সূর্যসেন হলের সামনে। এসময় মল চত্বরে উভয় পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত হয় মহানগরসহ আরও কয়েকটি ইউনিট। 
দ্বিতীয় দফায় ঢামেকের সামনেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে গেলে তাদের চিকিৎসা নিতে বাধা দেয়া হয়। পরে এ নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয় কোটা আন্দোলনকারীরা। পরে ঘটনাস্থলে আসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর তৃতীয় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের আবাসিক হলগুলোতে। আবাসিক হলে প্রবেশ করে আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগ নেতাদের রুম ভাঙচুর করলে খবর পেয়ে সেখানে জড়ো হয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় এক পক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করেন। এ ছাড়া কিছুক্ষণ পর পর বিস্ফোরিত হয় ককটেল। তবে, কে বা কারা এই ককটেল নিক্ষেপ করেছে তা জানা যায়নি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘর্ষ চলমান রয়েছে। 
ঢাবির শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার বলেন, আমরা কখনো ভাবি নাই, ছাত্রলীগ এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করবে। আমরা নারী শিক্ষার্থীরা অনেকে দৌড়িয়ে পালাতে পারি নাই। ছাত্রলীগের কর্মীরা হেলমেট পরে আমাদের বেধড়ক মারধর করেছে, লাঠিপেটা করেছে। নিজের ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীরা কতটা অসহায়, ছাত্রলীগ আজকে প্রমাণ করল।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ছাত্রলীগ আমাদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের তারা বেধড়ক পিটিয়েছে। এই হামলা অন্তত দুই শত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। 
হামলার বিষয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, দেশের সচেতন তরুণ সমাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। এই মূহুর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজাকারের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, শিবির এবং ছাত্রদলের চিহ্নিত ক্যাডাররা হলে ঢুকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে। এই হামলার বিচার না হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর কড়া জবাব দেবে। 
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে আহত জনকণ্ঠের চিত্র সাংবাদিক সুমন্ত চক্রবর্তী জানান, সংবাদ সংগ্রহের জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ হলে যান। সেখানে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে যান।

তখন দৌড়ে সেখান থেকে সরে যাওয়ার সময় ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়ে যান এবং এরপর তার পায়ের ওপর দিয়ে কয়েকজন দৌড়ে চলে যায়। পরে ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে তার পায়ের এক্স-রে করান। এতে ভাঙা দেখা যায়। পরবর্তীতে চিকিৎসকরা তার পায়ে প্লাস্টার করে তাকে ছাড়পত্র দেন। 
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখা যায়, ওই সময় ভেতরে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা চলছে। বাইরেও বেশ কয়েক আহত ব্যক্তি চিকিৎসা পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে আবারও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর ক্যাম্পাসের কয়েকটি জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা পিছু হটে। 
বিকেলে আহতদের সঙ্গে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে মেডিক্যাল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর ঢাকা মেডিক্যালের সামনের সড়কে দুুই পক্ষের মধ্যে ফের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত হাসপাতালে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা জরুরি বিভাগে বাড়তি আনসার সদস্যদের দেখা গেলেও হাসপাতাল চত্বরে কোনো অতিরিক্ত পুলিশ দেখা যায়নি। হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশে তখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। হাসপাতালের ভেতর কয়েক রোগীকে ছাত্রলীগ হিসেবে চিহ্নিত করে মারধর করে আন্দোলনকারীরা। 
ঢাকা মেডিক্যালের টিকিট কাউন্টারের কর্মচারী মো. মিজান জানান, দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র ১১ জনকে ভর্তি করিয়েছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে ভর্তি ১১ জন হলেনÑ ইয়াকুব (২১), কাজী তাসনিম ফেরদৌসী (২৪), অমি (২৬), আমিনুর (২২), শুভ (২০), গিয়াস উদ্দিন (২০), নাসির (২৩), অপি (২২), মেহেদি (২২), সিয়াম (২২) ও হাসিব (২২)।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় ১১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তবে রোগীদের মধ্যে কেউ গুরুতর নয়। তাদের অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। আর বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।
সন্ধ্যার পর ঢাবির ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল এলাকায় ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। থেমে থেমে চলা এই সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এলাকায়ও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অপরদিকে ক্যাম্পাসজুড়ে বিশৃঙ্খল অবস্থা থাকলেও রাত ৮টা পর্যন্ত দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, শিক্ষক কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়নি। 
এর আগে দুপুরের দিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে যাওয়ার সময় হামলায় ইডেন মহিলা কলেজের চার ছাত্রী আহত হয়েছেন। আহতরা ও তাদের সহপাঠীরা জানান, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে তারা অংশ নিয়ে আসছিলেন। তারা যখন টিএসসিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাবেন, সে সময় ইডেনের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজের ভেতর তাদের ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে তাদের মারধর করে। মোবাইল ফোন দিয়ে সুমি নামের এক ছাত্রীর মাথায় আঘাত করে।
সহপাঠীরা প্রথমে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখান থেকে পরবর্তীতে তাদের ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়। 
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা ॥ সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল ও শহীদুল্লাহ হলের মাঝামাঝি সড়কে সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি জানান, আজ বিকেল ৩টায় সারাদেশে বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ করবেন তারা।
এর আগে আন্দোলনকারীরা এই কর্মসূচি ঘোষণার জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং শহীদুল্লাহ হলের সামনেই সংবাদ সম্মেলন করার অনুরোধ করে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের অন্যতম মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ট্রাকে করে বহিরাগতদের এনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি, এই প্রক্টর মানি না। আমরা তার কাছে এ ঘটনার জবাব চাই। এ হামলা পরিকল্পিত। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংসতার মাধ্যমে দমনের চেষ্টা করছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।
কর্মসূচি ঘোষণা করে নাহিদ বলেন, হামলার প্রতিবাদ, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে বিকেল তিনটায় দেশের সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করব। তারপর আমরা সারাদেশে আবারও অবরোধ ঘোষণা করব।
আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষের উসকানি ও স্লোগান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বলে দাবি করা হচ্ছে এ প্রশ্নে নাহিদ বলেন, আমাদের আন্দোলনের দাবি স্পষ্ট, এখানে তৃতীয় পক্ষের আসার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের যৌক্তিক দাবি পূরণ করলেই আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা খুবই যৌক্তিক দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিলাম। এত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এর আগে কেউ দেখেনি। কিন্তু আজ ছাত্রলীগ ও প্রশাসন তাদের স্বরূপে ফিরেছে। ন্যায়ের জন্য লড়াই করা আমাদের বোনদের ওপর হামলার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। বাইরে থেকে ট্রাকে করে অছাত্র, টোকাই, সন্ত্রাসীদের এনে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। ভিসি-প্রক্টর আমাদের বোনদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। অতি দ্রুত যেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেই দাবি জানাই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ‘রাজাকার রাজাকার’, ‘চাইলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার’ স্লোগান দেওয়ায় দুই শিক্ষার্থীকে আটকে ‘শিবির’ সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদ ও মোবাইল ফোন তল্লাশি করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার জেরে রাতভর উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে বিশ^বিদ্যালয় অঙ্গনে। রবিবার রাতে বিশ^বিদ্যালয়ের বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় চার শিক্ষার্থী ও হলের এক নিরাপত্তা প্রহরী আহত হন। এ ছাড়া এ ঘটনার জেরে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেছেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘অপমানজনক বক্তব্য’ প্রত্যাহার এবং এক দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর ৩টায় সাম্প্রতিক সময়ে নাম দেওয়া ছাত্র আন্দোলন চত্বর থেকে মূল ফটক হয়ে মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বিক্ষোভ মিছিল ও পদযাত্রা করে রাবি, রুয়েট, রামেক, রাজশাহী কলেজ ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অবস্থান নিতে শুরু করে দুপুর ২টা পর্যন্ত একযোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যায় তারা।
চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ॥ চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে সোমবার চবি শাটল ট্রেনের চাবি কেড়ে নেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। একইসঙ্গে তারা আন্দোলনের চবি সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফিকে স্টেশন চত্ত্বর থেকে ধরে নিয়ে যায়। দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। পরে দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে রাফির ভর্তি বাতিলের দাবি নিয়ে রাফিসহ প্রক্টর অফিসে আসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 
ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় ॥ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে মিছিলে যাওয়ায় এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও ওই শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও জিয়াউর রহমান হলের অবস্থানকারী ছাত্র মাহফুজ উল হক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ কোটা সংস্কার দাবিতে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান ও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গত কয়েক দিনের তুলনায় নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বেশি ছিল। দেড় ঘণ্টাব্যাপী অবরোধের ফলে সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন ধরনের শতাধিক যানবাহন আটকা পড়লে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। বেলা ১১টায় বিশ্বদ্যিালয়ের প্রধান ফটকে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরু করেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ॥ বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীর জিরো পয়েন্টে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করে। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারও শিক্ষার্থীর অবরোধে খুলনা-সাতক্ষীরা এবং খুলনা-ঢাকা-বাগেরহাট মহাসড়কের জিরো পয়েন্ট এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে তারা মিছিল নিয়ে রূপসা বাইপাস সড়কের চারমাথা অবরোধ করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অবরোধ চলে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d