ঢাবিতে ত্রাণ কার্যক্রম: তিন দিনে সংগ্রহ ৫ কোটি ২৩ লাখ
বন্যার্ত মানুষদের সহযোগিতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) চলছে ত্রান সংগ্রহ। রবিবার ঢাবির ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ক্যাফেটেরিয়া ও কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এসব ত্রাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। এদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত চতুর্থ দিনের মতো এ কার্যক্রম চলে।
গতকাল বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা পাঁচ কোটি টাকার অধিক অর্থ সংগ্রহ করেছে। এছাড়া, বন্যার্তদের জন্য ৫০টি ট্রাকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার রিলিফ প্যাকেজ বন্যার্ত অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সূত্রে জানা গেছে, বন্যার্ত মানুষদের সহযোগিতার জন্য গত বৃহস্প্রতিবার থেকে শিক্ষার্থীরা এ ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে। রবিবার বিকাল পাচটা পর্যন্ত তাদের মোট অর্থ সংগ্রহ হয় ৫ কোটি ২৩ লাখ ৩ হাজার ৬ শত ৩ টাকা। তার মধ্যে নগদ অর্থ সংগ্রহ হয়েছে ৪ কোটি ৩৯ লক্ষ ১ হাজার ৬ শত ৯০ টাকা, মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে ৬২ লক্ষ ৯৪ হাজার ১২০ টাকা।
এছাড়া ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে ২১ লক্ষ ৭ হাজার ৭ শত ৯৩ টাকা। এ কার্যক্রমে সংগ্রহকৃত অর্থ থেকে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ লক্ষ ১২ হাজার ৯শত ৭০ টাকা। তার মধ্যে খেজুর বাবদ ১৫ লক্ষ ৭৮ হাজার ৯ শত টাকা, মুড়ি বাবদ ৪ লক্ষ ৩০০ টাকা, বিস্কুট বাবদ ২ লক্ষ ১ হাজার ৫০ টাকা, গুড় বাবদ ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৮৪০ টাকা, দুপুর ও রাতের খাবার বাবদ ৩৯ হাজার, দড়ি, কার্টার, কলম বাবদ ৭৩০ টাকা, গাড়ির সাথে স্বেচ্ছাসেবক বাবদ ৮ হাজার টাকা, রিকশাভাড়া বাবদ ৬৫০ টাকা, পলিথিন বাবদ ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা, বস্তা বাবদ ৯ হাজার টাকা, নামসহ বস্তা বাবদ ১ লক্ষ ৭০ হাজার, চিনি বাবদ ১ লক্ষ ৫০ হাজার। এসব মালামাল ভরে মোট ৫০টি ট্রাকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার রিলিফ প্যাকেজ বন্যার্ত অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ৩ হাজার প্যাকেজ বাংলাদেশে বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে হেলিকপ্টার যোগে বন্যাকবলিত দুর্গম অঞ্চলগুলোতে বন্টন করা হয়েছে এবং ৩ লক্ষ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে রেজওয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমরা ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এসব ত্রাণ বন্যা কবলিত অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত আমদের ৫০ এর অধিক ট্রাক বন্যা কবলিত অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে।
রবিবার বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, দূর-দূরান্ত থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি, ভ্যান, ছোট ট্রাকে করে ত্রাণ দিতে আসছে সাধারণ মানুষ। এসব ত্রাণের মধ্যে রয়েছে- নগদ টাকা, শুকনো খাবার হিসাবে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, খেজুর, খাবার, জামা-কাপড় ইত্যাদি। এছাড়া খাবার স্যালাইন ও জরুরি ঔষধও দান করতে দেখা গেছে অনেককে। যারা নগদ অর্থ দিচ্ছেন তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর খাতায় লিখে রাখা হচ্ছে। অন্যান্য দিন শুধু ঢাবির ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় ত্রাণ সংগ্রহ করা হলেও এবার সেটি প্রসারিত করা হয়েছে। টিএসসির গেটে বুথ বসিয়ে শুধু নগদ অর্থ ও জরুরী ঔষধ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া. ঢাবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ক্যাফেটেরিয়া ও ঢাবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এসময় স্বেচ্ছাসেবীরা মাইকে নানা নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে। জনতার দেয়া এসব ত্রাণে পুরো টিএসসি এলাকা ভরে গেছে। টিএসসির অডিটোরিয়ামে রাখা হয়েছে হাজার হাজার পানির বোতল। বাইরে রাখা হয়েছে কাপড়সহ অন্যান্য জিনিস। গেমস রুমে ত্রাণ প্যাকেজিং করা হচ্ছে। টিএসসির ভিতরের ক্যাফেটেরিয়ায় রাখা হয়েছে বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য। এছাড়া, ক্যাফেটেরিয়ায় বাইরে রাখা হয়েছে কাপড়সহ অন্যান্য জিনিস। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ও ডাকসুতেও একই চিত্র দেখা গেছে। মাঠের দুই গ্যালারিতে কাপড়সহ অন্যান্য জিনিস ভরপুর।
কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে হারুন ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, দেশের এ পরিস্থিতে বন্যার্ত মানুষদের সহায়তা করা আমাদের দায়িত্ব। সেজন্য উত্তরা থেকে গাড়ি করে এখানে আসা। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো টিভিতে দেখে আমার ছোট ছেলেও তার মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে সহায়তা দিয়েছে। এটি মানসিক শান্তির বিষয়।