Bangladesh

তফশিলের আগে একনেক বৈঠক নিয়ে শঙ্কা: অনিশ্চিত শতাধিক প্রকল্প

দরজায় কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী মাসের মাঝামাঝিতে ঘোষণা হতে পারে নির্বাচনি তফশিল। এর পর আর একনেক বৈঠক করার সুযোগ নেই। কিন্তু তার আগে এই বৈঠক হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলছে, খুব বেশি হলে আগামী ৩১ অক্টোবর একটি বৈঠক হতে পারে। তবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। অন্যান্য সময় নির্বাচনের আগে বেশ ঘন ঘন একনেক বৈঠক করে ৬৪টি প্রকল্প পর্যন্ত একদিনে অনুমোদন দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এমনিতে প্রকল্প অনুমোদন কম হয়েছে। এর ওপর সাম্প্রতিক সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশ সফরের বেশ কয়েকটি কর্মসূচি থাকায় একনেক বৈঠক বসেনি। ফলে শতাধিক প্রকল্পের অনুমোদন এখন প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় মন্ত্রী, সংসদ-সদস্য এবং সচিবদের নিজস্ব প্রকল্প অনুমোদনের চাপে আছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান মঙ্গলবার বলেন, চাপ নয়, মন্ত্রী ও এমপিদের অনুরোধ আছে। এটা আমিও অনেক সময় আমার এলাকার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রীদের অনুরোধ করি। যাতে প্রকল্প তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠান। তারা প্রকল্প তৈরি করে না দিলে তো আমি অনুমোদনের সুপারিশ করতে পারব না। সে রকমভাবে এখন তারা আমাকে অনুরোধ করছে যাতে তাদের প্রকল্প একনেকের তালিকা দিই। এটা স্বাভাবিক বিষয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একনেক না হলে প্রস্তুত থাকা প্রকল্পগুলো পরের সরকারের সময় অনুমোদন পাবে। এছাড়া এখন তো কিছুই করার নেই। এসব প্রকল্প অনুমোদন না হলে কোনো ভিত্তি পায় না। আবার অনুমোদন পেলেও যদি কাজ শুরু না হয় তাহলে অন্য সরকার (যদি) এসে বাতিল করে দিতে পারে।

ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী বলেন, নির্বাচনি বিবেচনায় ঢালাওভাবে প্রকল্প অনুমোদন ঠিক হবে না। কোনো প্রকার চাপের মুখে অনুমোদন দেওয়া হলে এতে আর্থিক ও পরিকল্পনা শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে। যেসব প্রকল্প প্রস্তুত আছে সেগুলোর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ হলে কেবল অনুমোদন দেওয়া দরকার। সবার আগে জনকল্যাণের কথা বিবেচনায় নিতে হবে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক অর্থায়ন আছে এমন প্রকল্প গুরুত্ব পেতে পারে। প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা না থাকলে পরবর্তীকালে যে সরকারই আসুক এগুলো অনুমোদনে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

সূত্র জানায়, পরিকল্পনা কমিশনের চারটি সেক্টরের প্রায় ৪৫টি প্রকল্প এখন একনেকে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা আছে। এছাড়া পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা হয়ে সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) এসেছে এ রকম প্রায় ২০টির মতো প্রকল্প আছে। পিইসি হয়েছে কিন্তু সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে আসেনি এমন প্রকল্প রয়েছে প্রায় ৩০টির মতো। এছাড়া ৫০ কোটি টাকার নিচে পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদন এখতিয়ার এমন প্রকল্প রয়েছে প্রায় ৩০টি। সব মিলিয়ে ১৩০টির মতো প্রকল্প রয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। এদিকে মাত্র একটি একনেক হওয়ার সম্ভাবনায় প্রতিদিনই এমপিরা ছুটে আসছেন পরিকল্পনা কমিশনে। তাদের এলাকার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি আছে এমন প্রকল্প যাতে একনেকে পাঠানো হয়। অনুমোদন হলে তারা অন্তত ভোটারদের সান্ত্বনা দিতে পারবেন। তবে সচিবদেরও তদবির আসছে অনেক। এক্ষেত্রে সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদনের চাপ আসছে বেশি। কেননা এখনই সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন করা না গেলে আগামী সরকার গঠন পর্যন্ত কোনো কাজ করা যাবে না। অপেক্ষা করে বসে থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার মঙ্গলবার বলেন, নির্বাচনের কারণে যে বাড়তি চাপ আসছে বিষয়টি সে রকম নয়। এটা সব সময়ই থাকে। সবাই চায় তাদের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অনুমোদন করাতে। তবে সচিবদের অনুরোধ হলো সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়ার। এটা না হলে তো কাজ করতে পারবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমার কাছে ৩১টি প্রকল্প একনেক উপস্থাপনের জন্য তৈরি আছে। তবে সব তো যাবে না। আমরা গুরুত্ব বিবেচনা করে তারপরই সুপারিশ করব।

প্রকল্পের প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান মঙ্গলবার বলেন, আমরা সেক্টরে কতটা প্রকল্প একনেকের জন্য প্রস্তুত আছে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে ১০-১৫টা তো হবেই। একদিনে একনেকে কতটা প্রকল্প যাবে সেটি নির্ধারিত হবে সবাই মিলে বসে। এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে মন্ত্রী, এমপিদের তেমন চাপ নেই বলে জানান তিনি। কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) একেএম ফজলুল হক। তিনি বলেন, এ সেক্টরে নতুন প্রকল্পের পাশাপাশি কিছু সংশোধিত প্রকল্প আছে। এখন দেখা যাক কী হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো চাপ নেই। তবে অনেক সময় এমপি সাহেবরা অনুরোধ করে থাকেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button