তরকারি কিনতেই পকেট ফাঁকা
শৈলকুপার গোকুলনগর গ্রামের টুলু বিশ্বাসের পেশা কৃষিকাজ। আগে ১ হাজার টাকা খরচ করে যে শাকসবজি ও মাছ কিনতেন, অনায়াসে সপ্তাহ পেরিয়ে যেত। কিন্তু কয়েক মাস ধরে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়ও সপ্তাহ পার করতে পারছেন না। মঙ্গলবার শৈলকুপা বাজারে কথা হয় তাঁর মতো কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলছেন, আয় না বাড়লেও খরচ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। যে কারণে মাছ-মাংস বাদ পড়ছে তালিকা থেকে। তরকারি কিনতেই পকেট ফাঁকা হয়ে পড়ছে তাদের।
ওই বাজারে কৃষিপণ্য নিয়ে এসেছিলেন ঝাউদিয়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম। আগে এসব বিক্রি করে কাঁচাবাজার ও মাছ কিনে কিছু টাকা থাকত পকেটে। ভুলুন্দিয়া গ্রামের কৃষক শের আলী বলেন, সবকিছুর দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ফলে আগের তুলনায় শাকসবজি ও মাছ কেনা অর্ধেকে নেমেছে। এর সূত্র ধরে টুলু বিশ্বাস বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের বুনো কচু, বাড়ির পাশ থেকে শাকসবজি খুঁজে দিন পার করতে হচ্ছে।
ওই বাজারে তরিতরকারি বিক্রি করেন ঝাউদিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেন। আগে প্রতি হাটে চার-পাঁচ বস্তা আলু বিক্রি করতেন। দাম বাড়ায় তা অর্ধেকে নেমেছে। তিনি বলেন, ‘মৌসুমের শেষ দিকে প্রতি কেজি আলু সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি করেছি। এবার তা ৫০ টাকার নিচে নামছে না।’ কলা ব্যবসায়ী ইসরাইল হোসেনের মাসিক আয় গড়ে ১০ হাজার টাকার মতো। দু’জনের সংসারে আগে ৬০০ টাকার বাজারে সপ্তাহ চলে যেত। এখন সপ্তাহে ১ হাজার ৪০০ টাকার বাজারেও চলছে না। মাছ-মাংস কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। আমিষের জন্য পুরো নির্ভর হয়ে পড়েছেন পাঙাশ মাছের ওপর।
চা দোকানি আয়ুব হোসেনের মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকা। এ দিয়ে চারজনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। দিনমজুর আনিচুর রহমানের ভাষ্য, আগে মাসে ৫ হাজার টাকার তরিতরকারিতে চলে যেত। এখন ৮ হাজারেও চলতে পারছেন না। শৈলকুপা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি যে বেতন পান, তা দিয়ে মাস চলছে না। বাধ্য হয়ে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ ও সাংসারিক খরচেও কাটছাঁট করতে হয়েছে। আগে মাসে চারবার মাংস কিনলেও এখন দু’বারে নেমেছে। জরিপ বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল ইসলাম বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতি উপজেলায় ভোক্তা অধিকারের লোকবল রাখা প্রয়োজন।