তাইওয়ানের সঙ্গে বন্ধুত্বের অর্থনৈতিক খেসারত
গত মে মাসে তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট লাই চিং–তে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদেশের কোনো রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তাঁর সঙ্গে প্রথম বৈঠকটি করেছিলেন সান্তিয়াগো পেনা। তিনি লাতিন আমেরিকার দেশ প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্ট। বিশ্বের যে ১২টি দেশ গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে নয়, বরং তাইওয়ানকে বৈধ চীন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, প্যারাগুয়ে তার একটি।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন অবশ্য তাইওয়ানকে তার নিজস্ব ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে। তবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংযোগ একটি রাষ্ট্র হিসেবে তাইওয়ানের দাবিকে বৈধতা দেয়। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে প্যারাগুয়ে ছাড়াও গুয়াতেমালা তাইওয়ানের বন্ধুরাষ্ট্র। জাতিসংঘে প্যারাগুয়ে তাইওয়ানের পক্ষে কথা বলে।
তবে তাইওয়ানকে সমর্থন দেওয়ার পেছনে খুব বেশি যুক্তি প্যারাগুয়ের নেই। চিলির গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আইসিএলএসির গবেষক ফ্রান্সিসকো উরদিনেজ বলেন, তাইওয়ানের সঙ্গে এই সম্পর্কের কারণে প্যারাগুয়ে তার মোট দেশজ উৎপাদনের ১ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ প্রতিবছর হারাচ্ছে। চীনের বিনিয়োগ ও ঋণ না পাওয়ার কারণে এই অর্থ হারাচ্ছে দেশটি।
তাইওয়ান অবশ্য যতটুকু সম্ভব প্যারাগুয়েকে সহায়তা করছে। সামাজিক আবাসন নির্মাণ ও প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় তাইওয়ান অর্থ দিয়েছে। কিন্তু তারপরও প্যারাগুয়ে অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
লাতিন আমেরিকায় ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে চীন প্রতিবছর গড়ে ১৪ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। প্যারাগুয়েতে এর এক সেন্টও যায়নি। এই অঞ্চলে চীনের যতটা বাণিজ্য আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে কম প্যারাগুয়ের সঙ্গে।
তাইওয়ানের সঙ্গে প্যারাগুয়ের এই সম্পর্ক দেশটির ক্ষমতাসীন দল কলোরাডো পার্টিকে ক্ষয় করছে। এই দলটি ১৯৪৮ সাল থেকে মোটামুটি টানা সময় ধরে প্যারাগুয়ে শাসন করছে। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১৫ কোটি ডলার সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাইওয়ান। আবাসন, শিক্ষা ও পরিবহন খাতে এই অর্থ খরচ করার কথা ছিল।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, এই তহবিল ইচ্ছেমতো খরচ করা হচ্ছে। অনেকটা ‘পেটি ক্যাশ’ হিসেবে বা খুচরা খাতে খরচ করা হচ্ছে তাইওয়ান থেকে পাওয়া সাহায্যের অর্থ। যাঁরা এই অর্থ পাচ্ছেন, তাঁরা পরিবর্তনের জন্য খুব কমই আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
তাইওয়ানকে সমর্থন দেওয়ার পেছনে প্যারাগুয়ের অন্য স্বার্থ হলো বিশ্বের কাছে নিজেকে বিশিষ্ট হিসেবে দেখানো। তাইওয়ানকে নিয়ে বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে। সেই খেলায় প্যারাগুয়ে একটা ভূমিকা রাখতে পারছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রেও সাহায্য করছে। যেভাবে প্যারাগুয়ে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে সুবিধা পাচ্ছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েনও আছে। ২০২৩ সালে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় প্যারাগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোরাসিও কার্তেজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দুর্নীতির অভিযোগে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। হোরাসিও কার্তেজ প্যারাগুয়ের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং ক্ষমতাসীন কলোরাডো পার্টির একজন নেতা।
তাইওয়ানের প্রতি প্যারাগুয়ের আনুগত্যের মূল্য বেড়েই চলছে। দেশটির সর্বশেষ সরকার তাইওয়ানকে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার জন্য বলেছিল। কিন্তু সেটা কখনোই ঘটেনি। প্যারাগুয়ে অবশ্য তাইওয়ানকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, আর প্যারাগুয়ের প্রতিবেশীরা চীনের সঙ্গে বাণিজ্য করে লাভবান হচ্ছে। ফলে এ ক্ষেত্রে হিসাব পাল্টেও যেতে পারে।