Hot

তাপদাহে তপ্ত দেশ, হাঁসফাঁস জীবন, গরম থাকবে আরও তিন দিন

ঢাকাসহ চার বিভাগের ওপর দিয়ে টানা তিন দিন ধরে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।‌ তীব্র গরমে অস্থির হয়ে উঠেছে জনজীবন। কোথাও দু-এক পশলা বৃষ্টি হলেও গরমের তীব্রতা থেকে রেহাই মেলেনি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে– ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ মৃদু তাপপ্রবাহ মাঝারি তাপপ্রবাহে রূপ নিল। এদিন সকাল থেকে রাজশাহীর আকাশ যেন অগ্নিতপ্ত কড়াইয়ে পরিণত হয়। বাতাসে যেন আগুনের হল্কা বইছে। রমজান মাসে কাঠফাটা রোদ ও গরমে পদ্মাপাড়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। রাজধানীতেও শেষ চৈত্রের খরতাপে সাধারণ মানুষের জীবন এখন ওষ্ঠাগত। একটু হিমেল হাওয়া আর স্বস্তির বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো সবাই তাকিয়ে আছে আকাশপানে।

এদিকে, আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে গরম বেড়ে তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ‌ বলেন, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আরও তিন দিন তা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপপ্রবাহের এলাকার বিস্তারও হতে পারে। তাপমাত্রা বাড়বে বলে আমরা অ্যালার্ট করছি, যাকে ‘হিট অ্যালার্ট’ বলে থাকি।

ঢাকাসহ চার বিভাগের ওপর ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি থাকছে আরও অন্তত ৭২ ঘণ্টা। এ সময় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি চলমান এই তাপপ্রবাহ বিস্তৃত হতে পারে আশপাশের এলাকাতেও। সোমবারের আগে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছে না আবহাওয়া অফিস। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে সারাদেশে অস্বস্তি চরম আকার ধারণ করেছে। ঘরে থেকেও ঘামছে মানুষ। ফ্যানের বাতাস দূর করতে পারছে না অস্বস্তি। গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে জনজীবন।

আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে দুই থেকে চারটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আর এক থেকে ‍দুটি তীব্র থেকে অতিতীব্র তাপপ্রবাহ হতে পারে। সে সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রিতে উঠতে পারে। সেই সঙ্গে থাকবে কালবৈশাখীর দাপট। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে এ মাসে প্রকৃতি ‘পরীক্ষা নেবে মানুষের’।

তীব্র গরমের সঙ্গে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। দেশের বেশ কয়েকটি জেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেচ মৌসুম প্রায় শেষ হওয়ার পথে। কৃষকরা ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিন্তু অসময়ে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে পড়তে হয়েছে তাদের। এমনকি মধ্যরাত বা শেষরাতেও লোডশেডিং হচ্ছে। বৈশাখের এ গরম আবহাওয়ার সঙ্গে অসহনীয় লোডশেডিংয়ে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে জনজীবন।

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা গ্রামের জাহানারা বেগম বলেন, দিন-রাতে একটু পরপর বিদ্যুৎ যাচ্ছে। যাওয়ার নিশ্চয়তা থাকলেও বিদ্যুৎ আসার নিশ্চয়তা নেই। গরমে বিদ্যুতের এমন ভেল্কিবাজিতে ছেলেমেয়ে নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে।

রোজা রেখে দিনে যাদের কাজ ঘরের বাইরে, তাদের যেন একবারেই জবুথবু অবস্থা। তাপপ্রবাহের কারণে তাদের উপার্জনেও পড়ে ভাটা। তাপদাহে বেশি কষ্টে আছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক ও কৃষকরা। ফেটে চৌচির ফসলি ক্ষেত। ঝরে পড়ছে আম-লিচুর মুকুল।

তাপপ্রবাহে অনেকের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, তাপদাহের এ সময়ে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এমন পরিস্থিতিকে ‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া’ ঘোষণা করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button