Hot

তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস জনজীবন

দেশজুড়ে কয়েকদিন ধরে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ। বৃষ্টির দেখা নেই বললেই চলে। হঠাৎ করে দু-এক জায়গায় সামান্য বৃষ্টি হলেও এর পরই আবার গরম অনুভূত হচ্ছে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বৃদ্ধ থেকে শিশু সব বয়সী। স্বস্তি নেই প্রাণিকুলেও। তীব্র গরমে জনজীবন এখন হাঁসফাঁস করছে। ঢাকায় গতকাল দিনে তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনে ও রাতে তাপমাত্রার পার্থক্য না থাকায় খুব একটা স্বস্তিও মিলছে না। এরই মধ্যে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ছুটি দেওয়া হয়েছে। হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানানো হয়, শিগগিরই এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। বরং তাপপ্রবাহ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। একে গরম তার ওপর বিদ্যুৎ ও পানির সংকটে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বয়স্ক ও শিশুরা। জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে কাজ করতে গিয়ে গরম ও অতিরিক্ত ঘামে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ, ট্রাফিক পুলিশ, হকার, সিকিউরিটি গার্ড, পোশাক শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ। হিটস্ট্রোকে আক্তান্ত হয়ে ঘটছে মানুষের প্রাণহানি। নিম্নআয়ের মানুষসহ পেশাজীবীরা ঘরের বাইরে এসে বিপদে পড়ছেন। অফিস ও বাসাবাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার আগের চেয়ে বেড়েছে। এমনকি প্রাইভেট গাড়িগুলোতে সারাক্ষণ চলছে শীতাতপ যন্ত্র।

কিন্তু যারা গণপরিবহনে চড়ছেন এবং গরমে সিলিং ফ্যানই যাদের একমাত্র ভরসা, তারা হাঁসফাঁস করছেন। বস্তিগুলোতে যারা ছোট ওয়াল ফ্যান ব্যবহার করছেন তারা না পারছেন ঘরে থাকতে, না পারছেন বাইরে যেতে। রূপনগর দুয়ারিপাড়া বস্তির এক গৃহকর্মী নাজমা আক্তার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঘরে ছোট একটা ফ্যান কিন্তু আমরা মানুষ পাঁচজন। বাতাস পাই না, পুরা ঘর জুইড়া আগুনের মতো গরম। গরমের জন্য রাতে ঘুমাইতেও পারি না।’ এই গরমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষের। জীবিকার তাগিদে তারা চাইলেও ঘরে বসে থাকতে পারছেন না। গরম মাথায় নিয়েই কাজে বের হচ্ছেন। আগারগাঁওয়ের রিকশাচালক মজনু মিঞা বলেন, ‘একটা খ্যাপ মারলে শরীর থেইক্যা দরদর কইরা ঘাম ঝরতাছে। তাতে পরের খ্যাপ মারতে আর মন চাইতাছে না।’ বিভিন্ন পেশাজীবী যারা ঘরের বাইরে কাজে বেরিয়েছিলেন তাদের অনেকেই ছাতা ব্যবহার করছিলেন। এনজিও কর্মকর্তা হাসান মোল্লা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গরম বাড়লেও কাজ তো আর থেমে থাকে না।

এজন্য গরম থেকে কিছুটা রেহাই পেতে ব্যাগে পানির বোতল ও ছাতা নিয়ে বেরিয়েছি।’ নিম্নআয়ের অনেক মানুষ ও পথশিশুরা নগরীর হাতিরঝিল, ক্রিসেন্ট লেকসহ ছোটখাটো পুকুর ও ডোবার পানিতে নেমে শরীর জুড়াচ্ছেন। আবহাওয়া অধিদফতরের ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকাসহ সারা দেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ভারি বৃষ্টিপাত ছাড়া গরমের তীব্রতা কমার সম্ভাবনা নেই। রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আর ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার ও রাঙামাটি জেলাসহ ঢাকা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। তাপমাত্রা বিষয়ে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।

ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চার নির্দেশনা : তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে চার দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তীব্র গরম থেকে দূরে থাকতে এবং মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে বলা হয়। প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করতে বলা হয়। হেপাটাইটিস এ, ই, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে রাস্তায় তৈরি পানীয় ও খাবার এড়িয়ে চলতে বলা হয়। প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করার পরামর্শ দেওয়া হয়। গরমে ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের পোশাক পরতে বলা হয়। গরমে যদি ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, বমি বমি ভাব দেখা দেয় তীব্র মাথাব্যথা হয়, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, প্রসাব কমে যায়, প্রসাবে জ্বালাপোড়া হয়, খিচুনি ও অজ্ঞান হওয়ার মতো কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে হাসপাতালে যেতে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এদিকে হিটস্ট্রোকে গতকাল সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় মো. রমজান আলী (৬৮) নামের এক শ্রমিক, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের আফসার আলী (৬৫), জেলার কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নের পাটাগ্রামের কৃষক পেয়ার ব্যাপারী (৭৫), তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের মো. হাসান আলী (৪৩), ঢাকার গুলিস্তানের আলমগীর সিকদার (৫৬), নাটোরের বড়াইগ্রামে কৃষক বকুল হোসেন (৩০), জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় গোলাম রাব্বানী নামের এক ব্যবসায়ী, কুমিল্লায় বুড়িচং উপজেলা সদরের নির্মাণশ্রমিক মজিবুর রহমান (৪৫) ও পটুয়াখালীর বাউফলে মোহাম্মদ শাহ-আলম (৫০) নামের একজন পুলিশ সদস্যেরও মৃত্যু হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d