USA

তাহলে কী বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন?

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) প্রথমবারের মতো বিতর্কে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে বাইডেন বাজে পারফরম্যান্স করায় অস্বস্তিতে পড়েছে তার নিজ দল ডেমোক্র্যাট। এমন পরিস্থিতিতে দলটির অন্য নেতাদের মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে যে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা থেকে বাইডেন সরে দাঁড়াবেন কি না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, এই মুহুর্তে বাইডেনের সরে যাওয়াটা খুব একটা সহজ প্রক্রিয়া হবে না। কারণ তিনি এরই মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন পেয়েছেন ও ভোটারদের কাছেও তার একটা গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়েছে।

বলা হচ্ছে, প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বাইডেনকে খুব সামান্যই বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছে। তাছাড়া তিনি নিজ দলের প্রায় সব নেতা-প্রতিনিধির মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। তার মানে তিনি যে খুব সহজেই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে প্রতিযোগিতা থেকে সরে যাবেন, তা মোটেই না।

সিএনএনের বিশ্লেষক ও গণতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ডেভিড অ্যাক্সেলরড বলেছেন, এটি ৬০ এর দশক নয়। ভোটাররা এখন মনোনীত ব্যক্তিকেই বেছে নেয়। আর বাইডেন মনোনীত। সুতরাং বাইডেনকে সরিয়ে দেওয়া সহজ হবে না।

এর আগে ১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাই নিয়ে ব্যাপক ঝামেলায় পড়েছিল ডেমোক্রেটিক পার্টি। তারপরেই দলটির বাছাইপর্বের নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়। তখন ডেমোক্র্যাটরা তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট হুবার্ট হামফ্রেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কারণ, ভিয়েতনাম যুদ্ধের কারণে চাপে থাকা ও জনপ্রিয়তা হারানো ডেমোক্র্যাটিক দলীয় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন পরবর্তী নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।

মনোনয়ন পাওয়ার পর শিকাগোতে দলের জাতীয় সম্মেলনে (কনভেনশন) জনসনের ভিয়েতনাম যুদ্ধের নীতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন হামফ্রে। এরপরও হামফ্রেকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়। এই ইস্যুতে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন।

এখন ২০২৪ সাল, অনেক কিছু বদলে গেছে। এখন যদি বাইডেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নতুন প্রার্থী বাছাই করতে হবে।

দলের নিয়ম অনুযায়ী, অধিকাংশ বাছাইপর্ব শেষ হওয়ার পর বা সম্মেলন চলাকালে যদি কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সরে দাঁড়ান, সেক্ষেত্রে প্রত্যেক ডেলিগেটকে দলীয় সম্মেলনেই নতুন প্রার্থী বাছাইয়ে ভোট দিতে হবে। কোনো কারণে ডেলিগেটরা সরাসরি ভোট দিতে না পারলে, অনলাইনে নিজের মতামত জানাবেন। আগস্টে শিকাগোতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।

এক্ষেত্রে বাইডেনকে নিয়ে বড় প্রশ্ন হলো, এবার তার পার্টির প্রকৃত ডেলিগেট কারা? কারণ, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বিভিন্ন রাজ্য থেকে নিজেদের ৩ হাজার ৯০০’রও বেশি ডেলিগেটকে ২২ জুনের মধ্যে প্রার্থী বাছাই করার সময় বেঁধে দিয়েছিল, যা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। আর ডেলিগেটদের প্রায় সবাই বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতেও আগস্টে হতে যাওয়া দলের জাতীয় সম্মেলনে ডেলিগেটদের একটা বড় অংশ নতুন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাইয়ের প্রস্তাব করতে পারেন। তারা এমন প্রস্তাব দিলে বাইডেনের সমর্থকদের সঙ্গে তাদের ব্যাপক মতবিরোধ দেখা দেবে, যা দলের অভ্যন্তরে বিবাদ তৈরি করবে।

আর বাইডেন নিজে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও সহজে সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ, যেসব ডেলিগেট এরই মধ্যে তাকে সমর্থন দিয়েছেন, তাদেরই নতুন প্রার্থীর জন্য ভোট বা সমর্থন দিতে হবে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যে একটা বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

সিএনএন বলছে, অনুমান করাই যায় যে বাইডেন সরে গেলে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এই প্রতিযোগিতার একজন শীর্ষ প্রতিযোগী হবেন। তবে অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীরাও থাকবেন, যাদের দাবি ছিল, তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর প্রচার চালাতে পারবেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম, যিনি বৃহস্পতিবারের বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেনকে সমর্থনের অযোগ্য ঘোষণা করার প্রস্তাব করেছেন। এই গ্যাভিন নিউজমও আলোচনায় থাকতে পারেন।

বিবেচনা করার মতো আরেকটি গ্রুপ রয়েছে, ‘সুপার ডেলিগেটস’। প্রায় ৭০০ জন জ্যেষ্ঠ নেতা ও নির্বাচিত কর্মকর্তাদের একটি দল। তারা তাদের অবস্থানের ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনভেনশনে প্রতিনিধি হয়। সাধারণত দলীয় নিয়মের অধীনে তারা প্রথম ব্যালটে ভোট দিতে পারেন না। তবে তারা মনোনয়ন পরিবর্তন করতে পারেন। তারা পরবর্তী ব্যালটে ভোট দিতে পারেন।

তবে সত্যি যদি নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাসের মধ্যে একজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান, তাহলে এটি একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করবে। তবে এ সংকট কাটানোর জন্য ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের কিছুটা ভিন্ন কৌশল রয়েছে।

ডেমোক্র্যাটরা এক্ষেত্রে পার্টির চেয়ার ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর ও কংগ্রেসের নেতৃত্বের সঙ্গে পরামর্শ করেন। পার্টির নিয়ম অনুযায়ী, কনভেনশনের পর শূন্যস্থান পূরণ করার ক্ষমতা ডেমোক্র্যাটিক জাতীয় কমিটিকে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা এক্ষেত্রে দলের জাতীয় কমিটির মাধ্যমে পুনরায় জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করতে পারেন। অথবা জাতীয় কমিটি চাইলে একজন নতুন প্রার্থী নির্বাচন করতে পারে।

বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কি অগ্রাধিকারভিত্তিকে মনোনীত হয়ে যাবেন?

কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসে (সিআরএস) উল্লেখ করা হয়েছে, যদি দলের মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সরে দাঁড়ান বা মারা যান, তাহলে ২৫তম সংশোধনী ভাইস প্রেসিডেন্টকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পদে উন্নীত করবে। তবে দলের নিয়মকানুনই নির্ধারণ করবে, কে দলের পরবর্তী প্রার্থী হবেন।

এদিকে, সিআরএসের জারিপ অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কোনো দলই স্বাভাবিকভাবে ভাইস প্রেসিডেন্টকে শীর্ষ টিকিট দিতে চায় না। যদিও দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী এটিই সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত।

মার্কিন সংবিধানের ২০তম সংশোধনীর অধীনে, নির্বাচনের পর কোনো প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব চালিয়ে যেতে না পারলে বা তিনি যদি মারা যান, তাহলে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button