Bangladesh

তিন বছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকা পাচার: খেজুর আমদানি

রমজানে ইফতারের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য খেজুর নিয়ে নৈরাজ্যের শেষ নেই। খেজুর আমদানিকারকরা প্রকৃত কেনা দামের চেয়ে কম ঘোষণা দিয়ে গত তিন বছরে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এই অর্থপাচারের পেছনে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য, বাজারে খেজুরের উচ্চ দামের খড়্গ তো আছেই। বাংলাদেশে বেশির ভাগ খেজুর আসে সৌদি আরব, ইরান, জর্দান, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রভৃতি দেশ থেকে।

৩ বছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকা পাচার অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের ৪ মার্চ পর্যন্ত দেশে প্রায় ২৯ কোটি ৬৪ লাখ ৪৪ হাজার ২০ কেজি খেজুর আমদানি হয়েছে। আমদানির পর এসব খেজুরের গড়ে ৭৫ সেন্ট মূল্য ঘোষণা করেছিলেন আমদানিকারকরা। এ হিসাবে মূল্য হয় ২২ কোটি ৪৫ লাখ ১৭ হাজার ডলার। তবে চলতি বছর চট্টগ্রাম কাস্টমস আমদানিকারকদের ঘোষণামতো শুল্কায়ন না করে আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই করে খেজুরের প্রকৃত কেনা দাম ধরে শুল্কায়ন করছে।

এতে আমদানি করা খেজুরের প্রকৃত মূল্য দাঁড়ায় ৪৩৩ কোটি ৬০ লাখ ৯৭ হাজার ৭০৪ ডলার।

কাস্টমসের এমন দামে আপত্তি না জানিয়ে শুল্ক পরিশোধ করে খেজুর ছাড়ান আমদানিকারকরা। এ হিসাবে প্রায় ৪১১ কোটি ডলার বা প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা দামের তথ্য গোপন করেছিলেন তাঁরা। আর এ অর্থ কিভাবে দেশের বাইরে গেল সেটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলে, ‘খেজুরের ঘোষিত দাম আর বাজারের দামের মধ্যে যে বড় পার্থক্য আছে সেটি গত বছর আমাদের নজরে আসে। এরপর এনবিআরের অনুমতি নিয়ে শুল্ক মূল্যায়ন বিধিমালা মেনে আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই করি। এতে বাজারমূল্যের মধ্যে বড় পার্থক্য পাওয়া যায়। চলতি বছর আমরা আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ধরে খেজুরের শুল্কায়ন করছি।’

সূত্রটি বলে, ‘এ শুল্কায়নের কারণে বাজারে খেজুরের দাম বাড়ার কথা ছিল না। কারণ এটি সরকারের সঠিক রাজস্ব নিশ্চিত করেছে। এ জন্য ব্যবসায়ীদের মুনাফা কিছুটা কম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীরা নিজেদের মুনাফা না কমিয়ে খেজুরের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা এক ডলার ভ্যালু ধরেও খেজুরের শুল্কায়ন করছি। বাজারে তো এই দামে খেজুর মেলে না। শুল্ক ফাঁকি দিতে গিয়ে খেজুর আমদানিকারকরা অর্থপাচারে জড়াচ্ছেন বলেও আমরা মনে করি।’

এনবিআর সূত্র জানায়, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে আমদানি করা বেশির ভাগ খেজুরের দাম ২০ থেকে ৩০ সেন্ট ঘোষণা দিয়েছিলেন আমদানিকারকরা। সর্বনিম্ন তিন সেন্ট বা তিন টাকা দামে প্রতি কেজি খেজুর আমদানি হয়েছে—এমন ঘোষণাও দিয়েছিলেন তাঁরা। তবে চলতি বছর কাস্টমসের কড়াকড়িতে আমদানিকারকদের ঘোষণা এক ডলার পর্যন্ত উঠেছে। সব মিলিয়ে তিন বছরে প্রতি কেজি খেজুরের দাম আমদানিকারকরা গড়ে ৭৫ সেন্ট বা বর্তমান ডলারের দাম অনুযায়ী ৮১ টাকা ঘোষণা দেন। ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে কাস্টমস গড়ে এক ডলারের মতো মূল্য ধরে প্রতি কেজি খেজুর শুল্কায়ন করে। পরে যদিও আন্তর্জাতিক বাজার যাচাইয়ে দামের মধ্যে বড় গরমিল পাওয়া যায়। চলতি বছরও ভালো-মন্দ, নাম-মান—কোনো কিছুই পরোয়া না করে প্রতি কেজি খেজুরের দাম ৫০ সেন্ট থেকে শুরু করে এক ডলারের মধ্যেই ঘোষণা দিচ্ছেন। অথচ বাজারে ৪০০ টাকা কেজির নিচে কোনো খেজুর মেলে না।

তবে কাস্টমসকে চলতি বছর প্রতি কেজি খেজুর সর্বোচ্চ চার ডলার দাম ধরে শুল্কায়ন করতে দেখা গেছে। আবার বেশির ভাগ খেজুর আড়াই ডলারে শুল্কায়ন করছে কাস্টমস। মাত্র এক ডলার দাম ধরেও শুল্কায়ন হতে দেখা গেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, খেজুর শুল্কায়নের ক্ষেত্রে পাঁচ ধরনের মূল্য শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। এর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে (রেফার) আমদানি করা আজোয়া, মরিয়ম, মেডজুল, মাবরুম প্রভৃতি খেজুর কেজিপ্রতি চার ডলার আমদানি মূল্য ধরে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া কার্টনে আনা খেজুরের দাম ইনার প্যাক (আড়াই কেজির কম) ২.৭৫ ডলার, কার্টনে আনা বাকি সব খেজুরের আমদানি মূল্য আড়াই ডলার, বস্তায় আনা খেজুর (ভেজা/গলা) এক ডলার আমদানি মূল্য ধরে শুল্কায়ন করছে কাস্টমস।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘খেজুর আমদানিকারকরা শুল্ক ফাঁকি দিতে খেজুরের দাম কম ঘোষণা করেছেন। এখানে শুল্ক ফাঁকি দিতে গিয়ে তাঁরা অর্থপাচারেরে মতো অপরাধও করছেন। যদিও তাঁরা এখানে ওভার ইনভয়েসিং করেননি, তবে তাঁরা খেজুরের দামের বড় একটা অংশ সরকারের অনুমতি না নিয়ে অবৈধ পথে লেনদেন করেছেন।’

তাঁর মতে, খেজুর আমদানিকারকদের ঘোষিত মূল্যের মধ্যে প্রকৃত মূল্যের উদঘাটিত টাকাটা কোথায় এবং কিভাবে পরিশোধ করা হলো, সেটা উদঘাটন করা জরুরি। এ জন্য বিএফআইইউর কাজ করা উচিত।

বাংলাদেশ ফ্রুট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খেজুর আমদানির পর যে দাম ঘোষণা দিচ্ছি সেটাই আন্তর্জাতিক দাম। কাস্টমস আমাদের ওপর বাড়তি দাম চাপিয়ে দিচ্ছে, সেই হারেই শুল্ক দিয়ে খেজুর ছাড়াতে হচ্ছে। এ জন্য বাজারে খেজুরের দামও বেশি।’

বিষয়টি নিয়ে এনবিআরের সদস্য পর্যায়ে একজনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রসঙ্গত, এনবিআর চেয়ারম্যান কর্মকর্তাদের গণমাধ্যমে কথা বলতে বিধি-নিষেধ দিয়ে রেখেছেন।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের অন্যতম শীর্ষ খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো ঢাকার হাজি সেলিমের মালিকানাধীন মেসার্স মদিনা ফ্রুটস, বাংলাদেশ ফ্রেশ ফুড ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলামের মালিকানাধীন সাথী ফ্রেশ ফ্রুটসসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d