Hot

তিন মাস পর্যবেক্ষণ এরপর কৌশল নির্ধারণ বিএনপি’র

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে কৌশল নির্ধারণ করবে বিএনপি। আপাতত আগামী তিন মাস সরকারের নেয়া পদক্ষেপ ও উদ্যোগ পর্যালোচনা করবে দলটি। এরপর দলীয় কৌশল নির্ধারণ করা হবে। এই সময়ে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরিয়ে দেয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে। দলের নেতারা নির্বাচনের বিষয়ে কথা বললেও নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে নির্বাচন প্রস্তুতির জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দেয়ার বার্তা দেয়া হচ্ছে। 

সময় বেঁধে না দিলেও অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘ হোক- তা চায় না দলটি। ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় দু’মাস অতিবাহিত হয়েছে। আরও তিন মাস এই সরকারের পারফরমেন্স দেখতে চায় তারা। এরমধ্যে সরকারের কাজ সন্তোষজনক না হলে এবং নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা করা না হলে সরকারের উপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে পারে দলটি।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এ পর্যন্ত যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তা নিয়ে কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে বিএনপি নেতাদের মাঝে। তারা মনে করছেন সরকারকে আরও তৎপর হওয়া দরকার। নির্বাচনসহ আরও কিছু বিষয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত। এটি করা হলে সাধারণ মানুষ আশ্বস্ত হবে। দলগুলো নির্বাচন নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারবে। 

সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে এটিও মনে করছেন নেতারা। এসব ষড়যন্ত্রের কারণে সরকার ব্যর্থ হলে বিএনপি বা গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া সব দল ও মানুষ ব্যর্থ হবে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। বিএনপি’র নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একজন শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে জানান, এই সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দ্রব্যমূল্যের দাম এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি, প্রশাসনে পুরো শৃঙ্খলা ফেরানো যায়নি। জুলাই-আগস্টে শহীদ ও আহতদের পুরো তালিকা প্রকাশ করতে পারেননি, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা হয়নি। সংস্কারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা নেই এবং কী পরিবর্তন করবে-সে বিষয়টিও অস্পষ্ট। এসব বিষয়সহ জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এবং নির্বাচনের পথ সুগম করতে সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চায় বিএনপি। তবে সময়টা দীর্ঘ হলে নানা প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে নেতারা মনে করছেন। 

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান মানবজমিনকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই মাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে যে কথাটি সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে হবে- সেটি হচ্ছে এই যে, এ সরকারের ওপর দেশের মানুষের প্রত্যাশা হলো আকাশচুম্বী। এ কারণেই দেশের জনগণ উন্মুখ হয়ে আছে। কখন তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে দেশে একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে। যে ভোটের অধিকার থেকে তারা দীর্ঘ ১৭ বছর বঞ্চিত ছিল। পাশাপাশি এটাও সত্যি যে, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। তাই এই সরকারের উচিত দেশের মানুষের মনস্তত্ত্ব উপলব্ধি করে যত দ্রুত সম্ভব অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারগুলো সম্পন্নপূর্বক একটি  সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া। এখানে উল্লেখ্য যে, কোনো কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি এই সত্য বিস্মৃত হয় তাহলে সেটা যে শুধু এ সরকারের জন্য বিপজ্জনক হবে তা নয়, সেটা দেশে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে যা পুরো দেশ ও জাতির জন্য এক মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা কাজ করছি এবং সরকারকেও সহযোগিতা করছি। ঐকমত্য হতে হবে এবং নির্বাচনী সংস্কার শেষে গণতন্ত্রের পথে চলতে হবে। সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করে। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটা বিশেষ প্রেক্ষাপটে এসেছে। এর আগে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৫ বছরে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে কিছু সময় লাগবে। এ জন্য সরকারকে বিএনপি যৌক্তিক সময় দিয়েছে। এর মানে এই নয় যে, দুই থেকে তিন বছর তারা থাকবে। এটা হতে পারে ৬ মাস কিংবা ১২ মাস। এর বেশি নয়। এ জন্য আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সবকিছু ঠিক না করলে তাদের চাপ দেবে বিএনপি। যাতে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের কাছে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সহযোগিতা করছি। আর বিএনপি’র কৌশল কী হবে, তা বিএনপি’র নিজস্ব ব্যাপার। 

যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মানবজমিনকে বলেন, আমরা সরকারকে সময় দিতে চাই। মাত্র দু’মাস হয়েছে। এখনই মূল্যায়ন করার সময় হয়নি। কিন্তু যে গতিতে পরিস্থিতি উত্তরণে পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তা দেখছি না! প্রশাসনে এখনো আওয়ামী লীগের দোসররা আছে। তারা ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু তাদের প্রমোশন দেয়া হচ্ছে! এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে আমরা দ্রুত নির্বাচন চাই এবং জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার চাই।

ওদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করা এবং সামনে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েও কাজ করছে বিএনপি। ইতিমধ্যে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা করছেন দলটির নেতারা। এমনকি বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোটগুলোর বাইরে থাকা বাম দলের নেতাদের সঙ্গেও বিএনপি নেতারা আলোচনা করেছেন। দলীয় সূত্রের দাবি, আগামীতে ভোটের মাধ্যমে যে সরকার হবে তা যেন অংশগ্রহণমূলক হয় তা নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে জাতীয় স্বার্থে কিছু বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরিরও চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার মূল বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে অন্যান্য দলের সমর্থন আদায়েরও চেষ্টা হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ায় এখন আপাতত এই দলের বিষয়ে বিএনপিতে কোনো চিন্তা নেই। তবে দলটির এক সময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতির মধ্যে অঘোষিত প্রতিযোগিতা হচ্ছে। যদিও বিএনপি নেতারা জামায়াত নিয়ে এখন প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। জামায়াত যে কার্যক্রম চালাচ্ছে সেটাকে রাজনৈতিক কার্যক্রম হিসেবে দেখা হচ্ছে। সামনের দিনে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হলে নতুন দৃশ্যপট হতে পারে- এমনটাও মনে করছেন বিএনপি’র কোনো কোনো নেতা। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d