Bangladesh

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র

আন্তর্জাতিক রীতিনীতি উপেক্ষা করে ভারতের পানি আগ্রাসন ভারত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়ে এটিকে কৌশলে ঝুলিয়ে দিলো :প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত :: আমরা চাই তিস্তা মহাপ্রকল্প চীনের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক :তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ

আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও আইন-কানুন উপেক্ষা করে ভারতের পানি আগ্রাসনের ফলে তিস্তা এখন উত্তর জনপদের মানুষের বহুমাত্রিক দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিস্তার সঙ্গে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবন-জীবিকা ও অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ অঞ্চলের লাখো লাখো মানুষ কৃষি, খাদ্য উৎপাদন, মাছ ধরা এবং গৃহস্থালি দৈনন্দিন পানির চাহিদা ও জীবিকা নির্বাহের জন্য তিস্তা নদীর ওপর নির্ভর করে।

অথচ তিস্তা নদীতে ভারত উজানে পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমে বাঁধ, ব্যারাজ, জলবিদ্যুৎসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশে তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ একেবারেই কমে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা ধুধু বালুচরে পরিণত হয়। পানির অভাবে ওই অঞ্চলের জীবন-জীবিকা ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। অন্যদিকে বর্ষায় অধিক পানি ছেড়ে দিয়ে ভাটির দেশ বাংলাদেশকে ডুবিয়ে মারছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণের আগে বাংলাদেশের ডালিয়া সীমান্তে তিস্তার গড় বার্ষিক পানির প্রবাহ ছিল ছয় হাজার ৭১০ কিউসেক (ঘনফুট প্রতি সেকেন্ড)। ১৯৯৫ সালে গজলডোবা ব্যারাজ চালু হওয়ার পর তা কমে দুই হাজার কিউসেকে দাঁড়ায়। শুষ্ক মৌসুমে সর্বনি¤œ প্রবাহ দেড় হাজার কিউসেক থেকে ২০০-৩০০ কিউসেকে নেমে আসে। এটি প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।

পানির অভাবে তিস্তা ব্যারাজ প্রজেক্ট এখন অচল হয়ে পড়েছে। তিস্তা ব্যারাজ প্রজেক্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প। এটিও তিস্তার পানির ওপর নির্ভরশীল। এই প্রকল্পটির অন্তর্ভুক্ত উত্তরবঙ্গের ছয়টি জেলা যথাÑ নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট এবং এর ‘কমান্ড এরিয়া’ (আওতাভুক্ত এলাকা) সাত লাখ ৫০ হাজার হেক্টর বিস্তৃত। এখন পানির অভাবে এ প্রকল্পটি প্রায় বন্ধ। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা যায়, তিস্তার পানির ঘাটতির কারণে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ টন বোরো ধান উৎপাদনের ক্ষতি হয়েছে। এটি দেশের মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৯ শতাংশের সমান। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে যে, উত্তরবঙ্গের খাল-বিল, পুকুর, জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলে তা ভবিষ্যতে পুরো উত্তরবঙ্গের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

তিস্তায় যখন পূর্ণমাত্রায় পানি আসত তখন শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হতো। সাধারণভাবে ধান চাষ করলে যে ব্যয় হয়, সেচ প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে সেই ধান চাষ করলে ব্যয় হয় ২০ ভাগের এক ভাগ। রংপুরের মঙ্গা দূরীকরণে তিস্তা সেচ প্রকল্প অনন্য ভূমিকা পালন করছে এখন। সেই সেচ প্রকল্প কার্যত শুষ্ক মৌসুমে এখন অচল। যে আট হাজার হেক্টর জমিতে রেশনিং সিস্টেমে পানি দিয়ে ধান চাষ করা হচ্ছে, তা নদীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই ছেড়ে দেয়া প্রয়োজন। তিস্তায় পানি না থাকার কারণে আরো অসংখ্য সমস্যা দেখা দেয়। উত্তরের জীবনের জন্য তিস্তার পানির কোনো বিকল্প নেই। এই উপলব্ধি থেকে উত্তারাঞ্চলকে মরুকরণ থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ নদী ব্যবস্থাপনার একটি প্রকল্প হাতে নেয়। উত্তরাঞ্চলে এটি তিস্তা মহাপরিকল্পনা নামে পরিচিত।

বর্তমানে তিস্তার পানি চুক্তির পরিবর্তে এই মহাপ্রকল্প নিয়ে চলছে আলোচনা এবং একই সাথে ষড়যন্ত্র। এ প্রকল্পটি মূলত বাংলাদেশ অংশে বাস্তবায়ন করা হবে। তিস্তায় এ প্রকল্প যাচাই করতে বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পাওয়ার চায়না যৌথভাবে প্রায় তিন বছর সমীক্ষা করে। সমীক্ষা শেষে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনার একটি প্রস্তাব তৈরি করে। ওই প্রকল্পের আওতায় তিস্তায় নদী খনন, ভূমি উদ্ধার করে সেচ, নৌ-চলাচল, পর্যটন, আবাসন ও শিল্পায়নের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়। এ প্রকল্প আর্থিক কারিগরি সহায়তা দিতে চীন যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বাংলাদেশ সরকারকে তাগাদা দিচ্ছে তখন তিস্তা প্রকল্পে নতুন প্রস্তাব নিয়ে সামনে এসেছে ভারত। তারাও এ প্রকল্প বাস্তাবায়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করার প্রস্তাব দেয়। তবে এটিকে অনেকে ভারতের এক ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিস্তা মহাপ্রকল্প নিয়েও ভারত এখন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। চীন তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেয়ার পর ভারত এ বিষয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তাই এ প্রকল্প যাতে চীন বাস্তায়ন করতে না পারে সে জন্য ভারত বাংলাদেশ সরকারের কাছে তারাই এ প্রকল্প করতে সহায়তা করতে চায়Ñ এমন প্রস্তাব তুলে ধরে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীন যাতে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারে এ জন্যই ভারত এই ধরনের একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এটি ভারতের একটি কূটচাল। শুধু তাই নয়, এ প্রকল্প যাতে না হয় এ জন্য ভারত তাদের এদেশীয় দালালদের দিয়েও নানান প্রচারণা চালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি এড়িয়ে গিয়ে এবার নদী ব্যবস্থাপনার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত এবং বাংলাদেশ মনে করছেÑ এতে করে তিস্তার পানি সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হবে। কিন্তু স্থানীয় জনগণ, পানি ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বিবেচনায় তিস্তা সমস্যা সমাধানে ভারতের নতুন এই প্রস্তাব ইতিবাচক হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।

তিস্তা প্রকল্পে ভারতের আগ্রহ নিয়ে পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, পানি চুক্তি ছাড়া তিস্তা প্রকল্প সমস্যা সমাধানে কাজে আসবে না। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পলিটিক্যাল যে অ্যাপ্রোচ নেবে ভারত আর বাংলাদেশ সেটিও ভিন্ন ভিন্ন হবে। আমি তো মনে করি, ভারত এটিকে কৌশলে আরো ঝুলিয়ে দিলো। কালক্ষেপণ করবে। এখন পর্যন্ত ভারত গায়ের জোরে আমাদের শূন্য পানি দিচ্ছে। এটি তো আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে না। আসলে এ বিষয়ে বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে একটি শক্ত অবস্থানে যেতে হবে বা এ বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের মানুষ বলছে, দেশটির তিস্তা নদী এখন এক মৌসুমী নদীতে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদী একেবারে শুকিয়ে ধুধু বালুচর। আর বর্ষাকালে পানি উপচে পড়ে, সৃষ্টি হয় নদীভাঙন। তিস্তার বন্যা ও ভাঙনে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমি, বসতবাড়ি আর গ্রামীণ সড়ক, তেমনি শুষ্ক মৌসুমে নদীতে দেখা যায় পানির তীব্র্র সঙ্কট। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায় উত্তরাঞ্চলের মানুষ। তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তা সঙ্কট সমাধানে এ শুষ্ক মৌসুমেই তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা আমাদের দাবি। আমাদের কথা হচ্ছেÑ তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন। এই ব্যবস্থাপনায় তিস্তা খননের কথা বলা আছে। এই ব্যবস্থাপনায় তিস্তার সঙ্গে যে ২২টি শাখা-নদী আছে তা খননের কথা বলা আছে। আমাদের নদীগুলো হবে একেকটি জলাধার। এই ব্যবস্থাপনায় আমাদের নৌপথ চালুর কথা বলা আছে চীলমারি পর্যন্ত। নদী যদি আমরা খনন করি তাহলে আমরা বর্ষার পানিটা আটকে রাখতে পারব এবং খননের মধ্য দিয়ে ১৭৪ কিলোমিটার যে ভূমি উদ্ধার হবে উদ্ধারকৃত জমিতে আধুনিক কৃষি, কৃষি সমবায়, ফুড প্রসেসিং নানা জনকল্যাণমূলক কর্মকা- গড়ে তোলা যাবে। এই পরিকল্পনায় আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় এগিয়ে নিতে পারবে। চীন এই প্রকল্প তৈরি করেছে। আমরা চাই চীনের মাধ্যমে দ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়র করা হোক। ভারত এমনিতেই তিস্তার পানি একতরফা প্রত্যাহার করে আমাদের শুকিয়ে মারছে। তারা চায় না, এই তিস্তা মহাপ্রকল্প হোক। তাই আমাদের দাবি চীনের মাধ্যমে দ্রুত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হোক।

বিগত হাসিনা সরকারের শাসনামলে ভারত ওই প্রস্তাব দেয়ার পর সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বিবিসিকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘ভারতের মাধ্যমে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হলে স্পষ্টতই সেটি দীর্ঘসূত্রতার পাল্লায় যে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছেÑ এটা ঝুলে যাবে এবং আগামী দুই চার বছরের মধ্যে এখানে বড় কোনো প্রগ্রেস দেখতে পারব, এরকম কোনো আশা করি না। যদি হয় তাহলে তো উই উইলবি হ্যাপি কিন্তু আশা করা যায় না।’ তিনি তখন আরো বলেছিলেন, এ সরকার (হাসিনা সরকার) আসলে অনেক খানি ভারত-নির্ভর। কাজেই আপনার যখন নির্ভরশীলতা বেশি থাকবে তার ওপর আপনি লিভারেজ কী করে প্রয়োগ করবেন।’ সেই তৌহিদ হোসেন এখন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি এখন এ ব্যাপারে কেন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না, লিভারেজ প্রয়োগ করছেন না, তা নিয়েও অনেকের মনে নানান প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। হাসিনার পতনের পর এদেশবাসী প্রত্যাশা করেছিল, এবার ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ তার ন্যায্য পাওনা আদায় করতে পারবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ ও পানিসম্পদ উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার পর সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দেশের মানুষের মনে সে আশাও জাগিয়ে ছিলেন। উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২১ আগস্ট সাংবাদিকদের বলেন, তিস্তা চুক্তির বিষয়ে দেশের মানুষ কী চায় সেটি টেবিলে যাতে আসে সেই ব্যবস্থা করা হবে। বাংলাদেশ তিস্তা নদীর উপরে যে অধিকার, সেই অধিকারের কথা বলতে বা লিখিত দিতে আমরা একদম পিছপা হবো না। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেয়া সক্ষাৎকারে রিজওয়ানা হাসান বলেন, তিস্তার পানি বণ্টনে ভারত আপসে রাজি না হলে আন্তর্জাতিক আইনের আশ্রয় নেবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ভারতের অভিন্ন নদী তিস্তা ও গঙ্গার পানি বণ্টন ইস্যুতে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান খুঁজতে চায় বাংলাদেশ। তবে একই সঙ্গে এই ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান সম্ভব না হলে আন্তর্জাতিক আইনের দ্বারস্থ হতে পারে বাংলাদেশ। শুধু পানি সম্পদ উপদেষ্টাই নয়Ñ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসও পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান হতে হবে। তাদের তখনকার সেই বক্তব্য দেশের মানুষের মনে আশা জাগিয়েছিল। সবাই ভেবেছিল, এতদিন পর এবার ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলে বাংলাদেশ তার ন্যায্য অধিকার আদায় করে নেবে। কিন্তু অল্প কিছু দিনের মধ্যে সে আশা নিরাশায় পর্যবসিত হয়েছে। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে এখন আর পানিসম্পদ উপদেষ্টার কোনো বক্তব্য নেই। এ ব্যাপারে তিনি একেবারে চুপ হয়ে গেলেন। শুধু তাই নয়, উত্তরাঞ্চলকে মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা করতে তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগও নিচ্ছে না এ সরকার।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d