Hot

তীব্র শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে উত্তরের জনপদ

উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। কুয়াশা থাকছে রাতভর। সকাল হলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সূর্যের উষ্ণতা। দেশের সর্বউত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে শীত অনুভূত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। জেলার তেঁতুলিয়ায় কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৭ থেকে ১০-এর মধ্যে ওঠানামা করলেও গতকাল শুক্রবার তা নেমে আসে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। চলতি শীত মৌসুমে তাপমাত্রা এতটা আর কখনও নামেনি।
মাঘের হাড় কাঁপানো শীতে একইভাবে তাপমাত্রার পারদ নেমেছে কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরেও। কুড়িগ্রামে গতকাল সকালে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই জেলায় এই মৌসুমে সর্বনিম্ন। দিনাজপুরে রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গতকাল ১২ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। তাপমাত্রার নিম্নগতির সঙ্গে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ফলে কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের এই জেলাগুলোর জনজীবন।

দেশে বেশ কয়েকদিন ধরে বয়ে চলছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় শীতের প্রকোপ বাড়লেও রাজধানীতে কম অনুভূত হয়। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গত বৃহস্পতিবার ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববার তাপমাত্রা তেমন একটা বাড়বে না। তবে এর পর থেকে বাড়তে পারে। রাজধানীর তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। গত বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়। আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা কম হলেও ৩১ জানুয়ারির দিকে আবার নামতে পারে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা। 

পঞ্চগড়ে টানা চার দিন বয়ে চলা মৃদু থকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ তীব্র শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। 

রাতভর টিপটিপ বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরে ভিজে যায় পিচঢালা পথ। ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে চারদিক। এ অবস্থায় বেশি বিপাকে পড়েছেন জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ। 

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বছরের শীতলতম মাস জানুয়ারির শুরু থেকে এই জেলায় হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছিল। কয়েক দফা মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। সপ্তাহজুড়েই এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০-এর আশপাশে ছিল। গত বৃহস্পতিবার সকালে ৬-এর নিচে নামে তাপমাত্রা। গতকাল সকাল ১০টার পরও সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়।
টানা প্রায় এক মাসের কনকনে শীতে পঞ্চগড়ে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা সর্দি-জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ঠান্ডাজনিত এসব রোগ এড়াতে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

কুড়িগ্রামের স্থানীয়রা জানান, এবার একটানা প্রায় ১৬ দিন শীতের দাপট থাকায় পুরো জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিগত কয়েক বছরে জেলায় একটানা শীতের এমন তীব্রতা ছিল না, এবার যেন স্থায়ী রূপ নিয়েছে!

জয়পুরহাটেও শ্রমজীবী, ছিন্নমূল, নিম্ন আয়ের মানুষ, শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে ঠান্ডাজনিত নানা রোগও। টানা পাঁচ দিন বন্ধ রয়েছে জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল। এর মধ্যে সরকারি নির্দেশনা ভঙ্গ করার ঘটনাও ঘটছে। এই শীতের মধ্যেও প্লে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানসহ সব কার্যক্রম চালু রেখেছে জেলার কালাই উপজেলার এসএ ক্যাডেট একাডেমি। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ওই স্কুলে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে দেখা যায়। এ ছাড়া প্রচণ্ড শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে আলু এবং বোরোর বীজতলা।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে ৩১ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশের সব জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে এক দিনে সব বিভাগে বৃষ্টি হবে না। 

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, দীর্ঘ সময়ের কুয়াশার কারণে সূর্যের কিরণকাল কমে এসেছে। অর্থাৎ সূর্য বেশিক্ষণ আলো দিতে পারছে না। স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন তা দাঁড়িয়েছে তিন থেকে চার ঘণ্টায়। ফলে শীতও অনুভূত হচ্ছে বেশি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button