Bangladesh

তীব্র হচ্ছে কোটাবিরোধী আন্দোলন

কোটার পক্ষে মানববন্ধন রাজশাহীতে

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র বহালের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে দাবি করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে গতকালও রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দুপুরে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন তারা। পরে বিকাল ৫টায় অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুর আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সমবেত হন আন্দোলনকারীরা। পরে মিছিল নিয়ে মাস্টার দা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, উপাচার্যের বাসভবন, রাজু ভাস্কর্য, দোয়েল চত্বর, হাই কোর্ট মোড় ঘুরে শাহবাগে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের যে শুনানি রয়েছে, তা যেন শিক্ষার্থীদের পক্ষে আসে। কাল বেলা ১১টায় আমরা আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হব।’ শিক্ষার্থী সারজিস আলম বলেন, যে কোটা প্রথা পুনরায় চালু করা হয়েছে, তার মাধ্যমে ছাত্র সমাজের হৃৎপি- বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে না, আমরা বৈষম্যের বিপক্ষে। আপিল বিভাগের শুনানি চলা পর্যন্ত আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে অপেক্ষা করব। এরপর যা করা দরকার, তাই করব। একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিলের দাবি জানান। জাবি প্রতিনিধি জানান, সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের আদেশ বাতিলের দাবিতে গতকাল বিকালে দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এর আগে দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক ঘুরে ডেইরি গেইট সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। এ সময় সাভারের হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। তবে অবরোধ চলাকালে শিক্ষার্থীরা রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবারও বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করা হবে বলে ঘোষণা দেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাবির প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবির। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, কোটা বাতিলের দাবিতে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। এক ঘণ্টার অবরোধে দুই দিকে প্রায় ৭ কিলোমিটারের যানজট সৃষ্টি হয়। দাবি না মানলে আজ আবারও সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে সকালে চবির শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে পদযাত্রা নিয়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেন প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী। জবি প্রতিনিধি জানান, সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল, ছাত্র সমাবেশ ও পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠালতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি বাংলাবাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক ও রায় সাহেব বাজার হয়ে তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে মিছিল বের করেন তারা। মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে একই জায়গায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাহাত হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জন্য একটি স্বাধীন, সার্বভৌম গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাহলে এখন কেন স্বাধীন বাংলাদেশে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কোটা নিয়ে বৈষম্যের শিকার হবে? প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ যদি কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কী করবে। মেধাবীদের পক্ষে অবহেলা এবং বৈষম্য মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। শেকৃবি প্রতিনিধি জানান, কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আগারগাঁও-খামারবাড়ি রাস্তা অবরোধ করেন আন্দোলনরত শতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে দুপুর ১টার দিকে রাস্তা ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

কোটা নিয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদে রাবিতে মানববন্ধন : মুক্তিযুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে অপপ্রচার এবং অবমাননার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম শাখার সদস্যরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ মানববন্ধন করেন তারা। সংগঠনের সহসভাপতি হবিবুর রহমান বলেন, এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য যারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে হেয় করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। মেধাকে কখনো দাঁড়িপাল্লা দিয়ে মাপা যায় না। আমাদের ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এটা অন্যায়। নারীদের ৬০%, রেলওয়েতে ৪০% কোটা রয়েছে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। সবাই কথা বলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে। অবাঞ্ছিত তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে হেয় করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যঙ্গ করে ‘মুরগিযোদ্ধা’ বলা হচ্ছে। এদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button