International

ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাণ গেল ১০৪ ফিলিস্তিনির

গাজায় ইসরায়েলি হামলার বাস্তুচ্যুত মানুষ পড়েছে তীব্র খাদ্যসংকটে। বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ থেকে আসা খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের। ইতিমধ্যে অনাহারে মরতে শুরু করেছে ভূখণ্ডটির শিশুরা। গত বুধবার সেখানে খাবারের অভাবে মারা গেছে ছয় শিশু। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি হামলার ১৪৬ দিনে দক্ষিণ গাজায় খাবারের জন্য জড়ো হওয়া মানুষের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ১০৪ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও ৭০০ জনের বেশি। এদিন খান ইউনিস শরণার্থীশিবিরে পৃথক হামলায় আরও ৩০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অবশ্য নতুন এসব মৃত্যুর আগেই গাজায় মৃত্যু ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, নিহতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।

গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। এ তালিকায় গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত অন্তত ৭৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরার ভাষ্য, এসব মৃত্যুর পাশাপাশি এখন অনাহারে মৃত্যুও যোগ হয়েছে। তিনি জানান, গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে দুই শিশু ‘পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে’ ভুগে মারা গেছে। তিনি এ ধরনের মৃত্যু এড়াতে শিগগির আন্তর্জাতিক মহলকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। সম্প্রতি অনাহার-অপুষ্টিতে অন্তত ছয় শিশু মারা গেছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে আলজাজিরা বলছে, মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীরা ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাজ করছে। তাদের আশাবাদ, ১০ বা ১১ মার্চ, অর্থাৎ রমজান মাস শুরুর আগে থেকেই এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের শর্ত হিসেবে হামাসের হাতে বন্দি থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির কথা বলা হয়েছে। আগামী সোমবারের মধ্যে তা চূড়ান্ত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে মানবাধিকার ও ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে এবং শিগগির উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।

ইউএসএআইডি প্রধান সামান্থা পাওয়ার জানান, ইসরায়েলকে গাজায় ত্রাণ প্রবেশের জন্য আরও পথ খুলে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার পরিমাণ রাতারাতি বেড়ে যাবে। পাওয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত ভিডিওতে বলেন, এটা জীবন-মৃত্যুর বিষয়।

গত বুধবার জাতিসংঘের মানবিক উদ্যোগ সমন্বয় কার্যালয়ের সমন্বয় পরিচালক রমেশ রাজাসিংঘাম নিরাপত্তা কাউন্সিলকে জানান, গাজার অন্তত ৫ লাখ ৭৬ হাজার বা মোট জনগোষ্ঠীর এক-চতুর্থাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এ কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি দেন, জরুরি উদ্যোগ না নেওয়া হলে গাজার সব এলাকায় বড় আকারে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং হামাসের হাতে জিম্মি হয় প্রায় ২৫৩ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছে এবং ৩১ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় পাঁচ মাস ধরে সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এ হামলায় নিহত ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নিহত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার ও নারীর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজারের মতো।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button