Bangladesh

দলগুলোর সামনে ১২০ পয়েন্ট

সংস্কারের জন্য ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ১২০ পয়েন্টে সুনির্দিষ্ট মতামত চেয়েছে সরকার। ইতিমধ্যেই ৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে এ বিষয়গুলোতে অবস্থান জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। মূলত সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের প্রস্তাবগুলোর ওপর ভিত্তি করে সুনির্দিষ্ট পয়েন্টগুলো তৈরি করেছে ঐক্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো ঐক্য কমিশনের চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের কাছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ স্বাক্ষরিত চিঠির সঙ্গে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশের ফাইল এবং মতামতের জন্য আলাদা স্প্রেডশিট পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশন- সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এই প্রতিবেদনসমূহের সুপারিশের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত ১৩ মার্চের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে। দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করবে অন্তর্বর্তী সরকার। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছু রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যেই ঐক্য কমিশনের কাছে বাড়তি সময় চেয়েছে। এর ফলে ১৩ মার্চের নির্ধারিত সময়ে সব রাজনৈতিক দলের মতামত ঐকমত্য কমিশনে জমা পড়ছে না।

ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে প্রতিটি সুপারিশে দুই ক্ষেত্রে টিক দিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। প্রথমটিতে একমত, আংশিকভাবে একমত ও একমত নই- তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। এ তিনটি বিকল্পের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাবে রাজনৈতিক দলগুলো। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে ছয়টি বিকল্প রেখে মতামত চেয়েছে কমিশন। বিকল্পগুলো হলো- ১. নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে, ২. নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে, ৩. নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে, ৪. গণপরিষদের মাধ্যমে, ৫. নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে এবং ৬. গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে। এখানে যেকোনো একটিতে টিক চিহ্নের মাধ্যমে মতামত জানাবে রাজনৈতিক দলগুলো।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব থেকে ২৩ পয়েন্ট : নাগরিকত্ব, সংবিধানের মূলনীতি, রাষ্ট্রের মূলনীতি, মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা, আইনসভা, নিম্নকক্ষ, উচ্চকক্ষ, সংবিধান সংশোধনী, আন্তর্জাতিক চুক্তি, অভিশংসন, নির্বাহী বিভাগ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, অন্তর্বর্তী সরকার, প্রধান উপদেষ্টা, বিচার বিভাগ, সুপ্রিম কোর্ট, অধস্তন আদালত, স্থানীয় সরকার, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস, সাংবিধানিক কমিশনসমূহ ও বিবিধ।

নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব থেকে ২৭ পয়েন্ট : নির্বাচন কমিশন গঠন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, সাবেক দুইবারের প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রপতি পদে অযোগ্যতা, একই সঙ্গে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হতে বাধা, সংসদের উচ্চকক্ষের নির্বাচন নিয়ে ৬ পয়েন্ট, সংসদ নির্বাচনে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে ২ পয়েন্ট, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে ২ পয়েন্ট, ডেপুটি স্পিকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে ৩ পয়েন্ট, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর, নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা নিয়ে ২ পয়েন্ট, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব থেকে ২৪ পয়েন্ট : প্রধান বিচারপতি নিয়োগ (তৃতীয় অধ্যায়), সুপ্রিম কোর্টের বিচারকসংখ্যা নির্ধারণ (তৃতীয় অধ্যায়), সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ, নিজ উদ্যোগে বা রাষ্ট্রপতি নির্দেশে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক তদন্ত করার ক্ষমতা, সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্বরত বিচারপতিদের জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতিদের জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন ও তা লঙ্ঘনের ফল, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরিসংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধন, সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, হাই কোর্ট বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, উপজেলা পর্যায়ে আদালত, অ্যাটর্নি সার্ভিস, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রদর্শন, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস, সংবিধান সংশোধন (১০ অধ্যায়), অধস্তন আদালতের জনবল ও পরিসর বৃদ্ধি (অধ্যায়-১১), বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা, সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালত ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, বিচার বিভাগে দুর্নীতি প্রতিরোধ, আইনগন সহায়তা, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, আইন পেশার সংস্কার, বিচারাঙ্গনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তকরণে (অধ্যায়-২৯) দুই পয়েন্ট।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব থেকে ২৬ পয়েন্ট : স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, তথ্য অধিকার আইন, অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট, নাগরিক কমিটি গঠন, নতুন দুটি বিভাগ গঠন, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদবি পরিবর্তন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে মামলা গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান, উপজেলা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট স্থাপন, উপজেলা জননিরাপত্তা অফিসার, পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্মপরিধি পুনর্নির্ধারণ, সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড বাতিল এবং সচিব নিয়োগে মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন ও সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস গঠন, স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন, সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলোরে সভাপতি পদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের নিয়োগ, প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করা, জেলা পরিষদ বাতিল, পৌরসভা শক্তিশালীকরণ, ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট বা রাজধানী মহানগর সরকার, উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করা নিয়ে দুটি পয়েন্ট, ইউনিয়ন পরিষদের সংস্কার, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল এর দপ্তরকে শক্তিশালীকরণ, জনপ্রশাসনে জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে প্রক্রিয়াগত সংস্কার নিয়ে দুই পয়েন্ট, ১৫ বছর চাকরি পূর্তিতে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস/সহকারী একান্ত সচিব পদায়ন।

দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব থেকে ২০ পয়েন্ট : সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০(২)-এর সংশোধন, দুদকের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশল, দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন, বাস্তবায়নে ন্যায়পাল, বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের চর্চা চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করা, স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন ও প্রতিরোধসংক্রান্ত আইন প্রণয়ন, সুবিধাভোগী মালিকানাবিষয়ক আইনি সংস্কার, রাজনৈতিক ও নির্বাচি অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করা, পর্যায়ক্রমে সেবা খাতের সম্পূর্ণ এন্ড-টু-এন্ড অটোমেশন, বেসরকারি খাতের ঘুষ লেনদেনকে শাস্তির আওতায় আনা, আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (সিআরএস)-এর বাস্তবায়নে আইনি সংস্কার, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ৫(১) ধারার সংশোধন করে কমিশনার সংখ্যা পাঁচে উন্নীতকরণ, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ধারা ৮(১) সংশোধন, দুদক আইন ২০০৪-এর ৬(২) ধারার সংশোধন করে কমিশনের মেয়াদ চার বছর নির্ধারণ, দুদক আইন ২০০৪-এর ৬(১) ধারা সংশোধন করে বাছাই কমিটির নাম পরিবর্তন করে ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ নির্ধারণ, দুদক আইন ২০০৪-এর ৭(১) থেকে ৭(৫) ধারা সংশোধন করে প্রস্তাবিত বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি গঠন, বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটির দায়িত্ব নির্ধারণ, বাছাই ও পর্যালোচনা কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ, দুদক আইনের ধারা ৩২ক বিলোপ, আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৩০৯ সংশোধনপূর্বক এটি নিশ্চিত করতে হবে যে দুদক কর্তৃক চাহিত কোনো তথ্যাদি বা দলিলাদির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ওজিপি এর পক্ষভুক্ত হওয়া।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d