Hot

দল গঠনের প্রক্রিয়ায় ছাত্র আন্দোলনের নেতারা

ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর দেশের চলমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারের দাবি উঠেছে নানাদিক থেকে। বিপ্লব-পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোও কাঠামো ও নীতিগত পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় আসছে জাতীয় নির্বাচনে লড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া নেতারা। ইতিমধ্যে তাদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দল বা প্ল্যাটফরম তৈরির লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা জাতীয় নাগরিক কমিটিতে থাকা নেতৃবৃন্দ এবং বাইরের বিভিন্ন দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠন হতে পারে নতুন দল বা প্ল্যাটফরম। এতে সরাসরি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্পৃক্ততা থাকবে না। তবে নেতারা কেউ কেউ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবেন। 

ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ইতিমধ্যে কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। শনিবার বিএনপি’র একজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে তারা আলোচনা করেন। ওই আলোচনায় সরকারের তিন জন উপদেষ্টা ছিলেন বলে জানা গেছে। তিন উপদেষ্টার মধ্যে দু’জন ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। 
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়াকে কেউ কেউ আবার ভিন্নভাবেও দেখছেন। 

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি সিভিল সোসাইটির কাজগুলোই করবে। কিন্তু এখান থেকে একটা অংশ যারা রাজনীতিতে আগ্রহী তারা মিলে একটি রাজনৈতিক দল হতে পারে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কোনো রাজনৈতিক দলে রূপ দেয়া হবে না বলে আমরা একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আমরা আমাদের সংগঠনকে সে রকমই রাখতে চাই। তবে কেউ যদি আলাদাভাবে নির্বাচন করতে চায় সেটি তারা করতে পারেন। 

সূত্রমতে, দল গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকে কাজ করছেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা মনে করেন, বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে মানুষ নতুন রাজনৈতিক শক্তিকে দেখতে চায়। যারা অভ্যুত্থানের চেতনাকে লালন করবে এবং সব শ্রেণি- পেশার মানুষের অংশীদারিত্বে আগামীর বাংলাদেশকে গঠন করতে প্রস্তুত। দল, মত, ধর্ম ও পথের ঊর্ধ্বে উঠে যারা ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ প্রশ্নে কাজ করবে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপোষহীন থাকবে। 
কার্যক্রম জোরদার করতে জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে সারা দেশে থানা কমিটি গঠন করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে অভ্যুত্থানে যারা কাজ করেছে তাদের সংঘবদ্ধ করতেই এ কমিটি। কমিটি গঠনে ৯ দফা দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়। যেখানে ২৫ শতাংশ নারী, ৫ শতাংশ শহীদ পরিবার/ আহত অভ্যুত্থানকারী, ৫ শতাংশ সংখ্যালঘু, ৫ শতাংশ কৃষক, শ্রমিক শ্রেণি এবং এলাকাভিত্তিক সকল জাতিসত্তার প্রতিনিধিত্ব রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। বয়স নির্ধারণ করা হয় সর্বোচ্চ ৫০ বছর। আর পঞ্চাশোর্ধ নাগরিকরা একটি পরামর্শক কমিটির মাধ্যমে নাগরিক কমিটির সঙ্গে কাজ করবেন বলেও জানানো হয়। কমিটি গঠনের পর স্ব স্ব এলাকায় মতবিনিময় সভাও করছেন তারা। এ ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও সারা দেশে কমিটি দিচ্ছে এবং সভা- সমাবেশ করে যাচ্ছে। সেখান থেকেও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। 

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সমন্বয়ের কাজ এবং উভয়ের কাছে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রস্তাব পৌঁছে দিতে গত ৮ই আগস্ট গঠন করা হয় লিয়াজোঁ কমিটি। সেদিন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার আগ মুহূর্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ছয় সদস্যের লিয়াজোঁ কমিটি ঘোষণা করেন। যেখানে সদস্য করা হয়- মাহফুজ আলম, নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, আরিফুল ইসলাম আদিব, ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান, আকরাম হোসাইন ও মামুন আব্দুল্লাহকে। সেদিন সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, লিয়াজোঁ কমিটি আগামী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে সকল অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ ও প্রস্তাবনার কাজ করবে। লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের ঠিক এক মাস পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৮ই সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ ঘটে জাতীয় নাগরিক কমিটির। লিয়াজোঁ কমিটির একাধিক সদস্যের সমন্বয়ে এই কমিটির আত্মপ্রকাশ হয়। ৫৫ সদস্যের ওই কমিটিতে মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়। ওইদিন নাগরিক কমিটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পড়ে শোনান মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। তিনি জানান, রাষ্ট্র পুনর্গঠন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও ‘নতুন বাংলাদেশের’ রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সফল করার লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির এক সদস্য মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তারা দল গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন। খুব শিগগিরই নতুন এ রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে মানুষ জানবে। তবে সেক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করছেন না তারা। লক্ষ্য নতুন বাংলাদেশ গড়া ও নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে তরুণ নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। 

জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা মানবজমিনকে বলেন, অভ্যুত্থানে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটিগুলো গঠন করা হচ্ছে। আমরা মনে করি সরকার যে প্রক্রিয়ায় কাজ করছে সেখানে ছাত্রদের শক্তিকে সুসংগঠিত করা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও কেউ যাতে সমন্বয়ক পরিচয়ে কোনো ইলিগ্যাল কাজ করতে না পারে। অনেক সময় তারা ইলিগ্যাল কাজ করলেও আমরা আইডেন্টিফাই করতে পারি না। আমাদের প্ল্যাটফর্মের নাম খারাপ হচ্ছে। তাই আমরা চাচ্ছি তাদের একটা ডেকোরামের মধ্যে নিয়ে আসতে। একটা চেইন অব কমান্ড তৈরি করা। নাগরিক কমিটির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে নাগরিক কমিটির সঙ্গে আমাদের কোনো এফিলিয়েশন নাই। শুরুতে লিয়াজোঁ কমিটি থেকে কয়েকজন এটি করেছে। তবে অফিসিয়ালি তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচনী ভাবনার বিষয়ে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এ সমন্বয়ক বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো ভাবনায় আমরা এখনো যাইনি। সম্মিলিতভাবে আমাদের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্তও হয়নি। আমরা যেটি বিশ্বাস করি যে এটা অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম এবং আমরা এটিকে সেভাবে ট্রিট করবো। নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে নাগরিক কমিটির সঙ্গে সম্মিলিত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি মূলত সিভিল সোসাইটির প্ল্যাটফর্ম। যেটি মূলত প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করছে। সামনেও একইভাবে কাজ করবে। এখানে যেটি ব্যাপার তা হলো- বাংলাদেশের মানুষ তরুণদের একটি রাজনৈতিক শক্তি দেখতে চায়। মানুষের একটা চাওয়া-পাওয়ার জায়গা তৈরি হয়েছে। সে জায়গাটাকে বিবেচনায় নিয়ে আমাদের মধ্য থেকে অনেকে মিলে এবং বাইরের আরও অনেকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটা রাজনৈতিক দল গঠনের ভাবনা আমাদের আছে। কিন্তু সেটি আমাদের জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না। সেটা হচ্ছে স্বতন্ত্র ভাবনা। আর রাজনৈতিক দল মানেই তো নির্বাচন যেখানে ভোট হবে জয়-পরাজয় থাকবে। তিনি বলেন, এখন ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের যে দুইটা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি সে বিষয়ে মানুষের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি করা এবং তরুণ নেতৃত্বকে সংঘবদ্ধ রাখা ও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগটা আরও মজবুত করার জন্যই নতুন কমিটিগুলো দিচ্ছি। 

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক অন্যতম সমন্বয়ক ও বর্তমান জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম রোববার টাঙ্গাইলে সাংবাদিকদের বলেন, যে তরুণ প্রজন্ম খুনি হাসিনার পতন ঘটিয়েছে তারা রাজনৈতিক দল গঠন করবে কি না সেটা বাংলাদেশের মানুষই ঠিক করবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে বিশ্বাস করি যে, তাদের একত্রিত হয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দল থাকা উচিত। যখন বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দল দুইটার জায়গায় চারটা হবে তখন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মানুষের জন্য কাজ করার যে প্রতিযোগিতা, সেটি বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, জুজুর ভয় দেখিয়ে অনেকে বলছেন মাইনাস ওয়ান, মাইনাস টু ফর্মুলা। আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান বাংলাদেশের ডিমান্ড হচ্ছে মাইনাস টু না বরং প্লাস টু ফর্মুলা। সারজিস বলেন, বাংলাদেশে কোন তন্ত্র থাকবে- সমাজতন্ত্র না পুঁজিবাদ এখন এটি নির্দিষ্ট কিছু তত্ত্ব দিয়ে সীমাবদ্ধ করার সময় ও অবস্থা নেই। এটি বাংলাদেশের মানুষের চাহিদার আলোকে নির্ধারিত হবে। তিনি বলেন, একদল আরেক দলকে প্রতিপক্ষ মনে করা, নিজেদের মধ্যে নেগোসিয়েশন করা, কিংবা ডিল করে একবার এ ক্ষমতায় আসবে, আরেকবার ও ক্ষমতায় আসবে। এই চর্চা থেকে বের হয়ে আসার জন্যও আমাদের বাংলাদেশে নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ আরও রাজনৈতিক দল দরকার। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ এই সমর্থনটি যদি তাদের জায়গায় থেকে জানায় ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবে। তাহলে অব্যশই বাংলাদেশে আবার নতুন কোনো রাজনৈতিক দল হয়তো খুব দ্রুতই দেখা যাবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d