Trending

দাবির পাহাড় নিয়ে ওরা কারা?

বিদেশে টাকা পাচারের কারণে বিপর্যন্ত অর্থনীতি, ডলার সংকট, ব্যাংকগুলোর মেরুদণ্ড ভাঙ্গা, রিজার্ভ তলানিতে, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে কলকারখানার চাকা বন্ধের উপক্রম, বিদেশী ঋণের সাগরে হাবুডুবু, বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সিভিল প্রশাসন ও আইন শৃংখলা বাহিনীতে দিল্লির তাবেদারে ঠাসা রেখে কয়েকশ ছাত্র-জনতা খুন করে ঢাকার রাজপথে রক্তে ভাসিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা। ধ্বংসস্তুপের মধ্যেই ১০ দিন আগে ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এর মধ্যেই চাকরি স্থায়ীকরণ, সংস্কার, পুনর্বহাল, জাতীয়করণ, বঞ্ছিত দাবি করে চাকরিতে পুনর্বহাল, বেতন বৈষম্য দূরসহ দাবির পাহাড় নিয়ে হাজির হয়েছে এক ঝাঁক মানুষ। এদের মধ্যে চাকরিজীবী, পেশাজীবী, শিক্ষার্থী, চিকিৎসক-নার্সসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ রয়েছেন। এরা কারা? নতুন সরকার গঠনের এক সাপ্তাহের মাথায় এদের দাবির পাহাড় নিয়ে রাজপথে নামার নেপথ্যের কী রহস্য? এদের অবস্থা কী কাঙ্গালিনী সুফিয়ার ‘ঘুমাইয়া ছিলাম ছিলাম ভালো, জেগে দেখি বেলা নাই বেলা নাই/ কোন বা পথে নিতাইগঞ্জ যাই’ গানের মতো? উত্তর হচ্ছে ‘না’। দিল্লির দাদাদের মদতে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে নতুন সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতেই এই দাবির পাহাড়। ভারত সরকারের ফুয়েল (অর্থকড়ি) ছিটিয়ে দিল্লিতে বসে পতিত হাসিনা এসবের কলকাঠি নাড়ছেন।

লেন্দুপ দর্জিকে ব্যবহার করে ইন্দিরা গান্ধী অর্ধশত বছর আগে সিকিম দখল করে ভারতের প্রদেশ বানিয়েছে। চলমান বিশ্ব বাস্তবতায় ভারত ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ দখল করতে পারবে না; কিন্তু শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে ভারতের উপনিবেশকতা চালু করেছে। সিভিল প্রশাসন, পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ, শিক্ষা ও চিকিৎসা বিভাগ, ব্যবসা বাণিজ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে দিল্লি ১৫ বছরে নিজস্ব লোক সৃষ্টি করে বসিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জীকে দিয়ে নরেন্দ্র মোদীর যা করতে পারেননি; বাংলাদেশের শেখ হাসিনাকে দিয়ে মোদী তাই করে নিয়েছেন। এতে করে হাসিনা রেজিমের পতন নরেন্দ্র মোদী গংরা ভালভাবে মেনে নিতে পারছেন না। তিনি এখন বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র কার্ড ব্যবহার করছেন। হাসিনা পালানোর পর দিল্লি প্রথমে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ কার্ড ব্যবহার করে। ভারতের গণমাধ্যম ও এদেশের দিল্লির তাবেদার গণমাধ্যমগুলো ‘সংখ্যালঘু নির্যাতনের’ কল্প কাহিনী প্রচার করে তোলপাড় বাঁধিয়ে দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন সেগুলোকে ‘ফেইক’ প্রমাণ করে। সংখ্যালঘু নির্যাতন কার্ড ব্যর্থের পর জুডিশিয়াল ক্যূ করার চেস্টা করেন। ছাত্র-জনতা সে অপচেস্টা ঠেকিয়ে দিয়েছে। অতপর ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবের মৃত্যুবার্ষিকীতে ঢাকায় ১০ লাখ লোক জড়ো করে বিশৃংখলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেন। সে কার্ডও ব্যর্থ হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ দূরের কথা আওয়ামী লীগের নেতাকার্মীরা রাস্তায় নামেনি; বরং আওয়ামী লীগ নেতারা শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে অবিহিত করেছে। তিন কার্ড ব্যর্থ হওয়ায় দিল্লি নতুন কূটচালে শুরু হয়েছে বিভিন্ন সেক্টরের ভারতীয় অনুসারীদের দিয়ে দাবি আদায়ের নামে বিক্ষোভ-মানববন্ধন করে সরকারকে নাস্তানাবুদ করা। গতকাল রোববার রাজধানী ঢাকার দোয়েল চত্বর, উত্তরা, শাহবাগ, মিরপুর রোড, সায়েন্স ল্যাব, প্রেসক্লাব এলাকায় মানববন্ধন এবং সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, কর্পোরেশন, অধিদপ্তর, পরিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাবি দাওয়া আদায়ের কর্মসুচির মহোৎসব দেখা যায়। এগুলোর নেপথ্যে রয়েছে ভারতের কূটচাল আর পতিত হাসিনার দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র। প্রশ্ন হচ্ছে যারা এতো দাবি দাওয়া নিয়ে হঠাৎ সরব হয়ে উঠেছেণ তারা কী এতোদিন ঘুমিয়ে ছিল? উত্তর হচ্ছে ‘না’। পতিত হাসিনার শাসনামলে ১৫ বছর এদের দলীয় বিবেচনায় প্রশাসনের সবখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত এরা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে চেষ্টা করেছে। হাসিনার পতনের পর কেউ ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গেছেন। কেউ দিল্লিতে পালিয়ে থাকা হাসিনার আদেশ-নির্দেশ পালনে হঠাৎ করে দাবির পাহাড় নিয়ে নতুন সরকারকে ডিস্টার্ব করতে উঠেপড়ে লেগেছেন।

প্রবাদে রয়েছে ‘কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না’। চানক্যনীতির ভারতের হয়েছে সেই দশা। ইতোমধ্যে নরেন্দ্র মোদী আর ড. মুহম্মদ ইউনূসের মধ্যে টেলি সংলাপ হয়েছে। প্রতিবেশি দুই দেশের নেতৃত্বে থাকা দুই নেতা জনগণের পক্ষে কাজ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তারপরও ভারত গণহত্যাকারী পতিত হাসিনাকে ভুলতে পারছে না। বিশ্বের কোনো দেশ যায়গা না দিলেও হাসিনাকে যায়গা দিয়ে বাংলাদেশের নতুন সরকারকে উৎখাতের অপচেস্টা করছে।

গত ১৫ বছরে প্রশাসনে সিনিয়র সচিব থেকে শুরু করে পিওন পর্যন্ত নিয়োগে দলীয় পরিচয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে পরবর্তীতে জনতার রাজপথে নামা পর্যন্ত দেখা গেছে প্রতিটি সেক্টরে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারীরা হাসিনা রেজিমের হয়ে কেউ রাজপথে নেমেছেন; কেউ গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন। ৫ আগস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর কয়েকজন পুলিশ সদস্য এমনকি উধ্বতন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন তারা শেখ হাসিনার নির্দেশে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন। হেলিকপ্টার থেকে গুলি, স্নাইপার দিয়ে গুলি, গান পয়েন্টে নিয়ে গুলি এবং সরাসরি কাছ থেকে গুলি করে ছাত্র-জনতা হত্যা করেছেন। জাতিসংঘের হিসেবে আন্দোলনের কয়েক দিনে ৬৫০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ পুলিশের গুলিতে পঙ্গু হয়েছে, কেউ হাত কেউ পা হারিয়েছেন। প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত যারা এখন দাবি দাওয়ার পাহাড় নিয়ে হাজির হয়েছেন তারা ওই গুলি করে আন্দোলন দমানোর পক্ষেই ছিলেন। ভারতের ‘সংখ্যালঘু ইস্যু’, ওবায়দুল হাসান-ইনায়েতুর রহিমদের দিয়ে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’, রোকেয়া প্রাচী গংদের দিয়ে ‘১৫ আগস্ট ঢাকা দখল’ কার্ড ব্যর্থ হওয়ায় প্রশাসন-অধিদপ্তর-পরিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ‘দাবি দাওয়া আদায়’ কার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে।

গতকাল রাজধানীতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের নারীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনা অতিথি ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করেছেন; নিউমার্কেটের সামনে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষাথীরা উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে রাজউক কলেজের শিক্ষার্থীরা, সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে রাস্তা বন্ধ, তৎকালীন বিডিআর থেকে চাকরিচ্যুত সদস্যদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভবনের সামনে অবস্থান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা, দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা স্বেচ্ছাসেবী (মহিলা) দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ, মাদরাসা বোর্ডের বৈষম্যে রোধে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন, তৃণমূল নাগরিক আন্দোলনের ব্যানারে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিচারের দাবি, শিক্ষা ভবনের সামনে বিভিন্ন সংস্কারের দাবিতে ডিপ্লোমা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন, বাংলামোটরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের সামনে মানববন্ধন, কারওয়ান বাজারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সামনে মানববন্ধন, অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ ব্যানারে জাদুঘরের সামনে একটি মঞ্চ করে সভা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সামনে এক দফা দাবিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকল্পের গেটই কিপারদের অবস্থান, আগারগাঁয়ের শেরেবাংলা নগরে ইসলামী ফাউন্ডেশনের মসজিদ ভিক্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের কর্মচারীদের মানববন্ধনসহ রাজধানীকে অসংখ্য স্পটে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, সভা সমাবেশ হয়েছে।

দাবি আদায়ের আন্দোলনের যেন মহোৎসব শুরু হয়েছে। এমনকি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে ব্যানার ব্যবহার করে (নাম ভাঙ্গিয়ে) দাবি আদায়ে মাঠে নেমেছেন। আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বশীলদের সতর্ক হওয়া উচিত। পাশাপশি যাদের আন্দোলনে হাসিনা রেজিমের পতন হয়েছে তাদেরও দিল্লির ইশারায় দাবি আদায়ে হঠাৎ করে মাঠে নামা ‘নাচের পুতুল’ এর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ দিল্লির ‘নাচের পুতুল হাসিনা’র ষড়যন্ত্র সফর করতে ভারতের অপকৌশল থামবে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor