Hot

দাবি না মানলে বুধবার থেকে সর্বাত্মক অবরোধে যাবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা

রাজধানীর ব্যস্ততম শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে অবরুদ্ধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক দফা দাবিতে এতদিন অর্ধবেলা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করলেও – বুধবার থেকে সারাদেশে পুরো বেলা সর্বাত্মক ব্লকেড কর্মসূচি পালন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেজন্য তারা মঙ্গলবার প্রস্তুতি নেবেন এবং একইদিন বিকেলে বুধবারের চূড়ান্ত কর্মসূচির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন।

আজ দিনভর আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জানিয়েছেন টিবিএসের প্রতিবেদকরা:


নতুন কর্মসূচির ঘোষণা 

রাত ৮টা ৩৫

‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অবরোধ পালনের পর শাহবাগে সমাবেশ করে আজকের মতো অবরোধ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেছে আন্দোলনকারীরা। এসময় তাঁরা নতুন গণসংযোগ কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র অন্যতম সংগঠক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, “আগামীকাল সারাদেশে, সারা ঢাকা শহরে যত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রয়েছে তাদের সাথে গণসংযোগ করব। বুধবার কঠোর কর্মসূচি দিব।” আগামীকাল বিকেলে একটি প্রেস ব্রিফিং করে বুধবারের কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এই সংগঠক আরও বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, এই যে অর্ধবেলা করে অবরোধ দিচ্ছি এখানেই আমরা থেমে থাকব না। আমরা সর্বাত্মক ব্লকেডের পরিকল্পনা করছি। আগামীকাল আমাদের চলমান কর্মসূচি ছাত্র ধর্মঘট ও ক্লাস পরীক্ষা বর্জন চলবে। আমরা ব্লকেড প্রত্যাহার করি নাই। সর্বাত্মক ব্লকেডের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

শাহবাগের সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে সরকারের উদ্দেশ্যে আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক বলেছেন, “আমরা আপনাদের তিন দিনের সময় দিচ্ছি, এরমধ্যে আমাদের যে পরিপত্রটি ছিল সেটি বাতিলের জন্য যা ব্যবস্থা নেওয়ার, সেসব ব্যবস্থা নিন। এরপর আমাদের একদফা দাবি আপনাদের মেনে নিতেই হবে।” 

এক দফা দাবিটি হচ্ছে, সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে নূন্যতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোঠাব্যবস্থার সংস্কার করা।


রাত ৮টা

রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ততম সড়কের মোড় থেকে অবরোধ প্রত্যাহারের পর শাহবাগের দিকে ফিরতে শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা। শাহবাগে তাদের সংক্ষিপ্ত সমাবেশ চলছে, যেখান থেকে আগামীকালের কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।  


রাত ৭টা

টানা চার ঘন্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার পর– সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ মহাসড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

একইসাথে আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ৩টা থেকে আবারও ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার যুগ্ন আহবায়ক আব্দুর রশীদ জিতু।


সন্ধ্যা ৬টা

বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রিফাত রশিদ জানান, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফার্মগেট মুখ অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে আজকের অবরোধ কতক্ষণ চলবে- জানতে চাইলে আরেক সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র হাসনাত আব্দুল্লাহ টিবিএসকে বলেন, আজকের কর্মসূচির সময়সীমা ও আগামীকালকের কর্মসূচির বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি। আমরা সময়মতো এ বিষয়ে ঘোষণা দিব।
 


বিকেল ৫টা ১৫

অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সব গাড়ি আটকাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

বাংলামোটর মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সৌরভ মন্ডল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী পরিবহনকারী গাড়ি ছাড়া আমরা কোনো গাড়ি যেতে দিচ্ছি না। তবে এর বাইরে জরুরি কোনো বিষয় আমাদের বোঝাতে সক্ষম হলে আমরা সেটা বিবেচনা করে ছাড় দিচ্ছি।

বাংলামোটর মোড় অতিক্রম করছে একটি অ্যাম্বুলেন্স।

তিনি আরও বলেন, এ আন্দোলন শুধু আমাদের জন্য না। বরং কোটা বাতিলের ফলে দেশের প্রশাসনে মেধাবীরা আসলে জনগণ আরো ভালো সেবা পাবে।’ 

এ সময় স্কয়ার হাসপাতাল থেকে মো. রিজওয়ান হোসেন নামে এক ব্যক্তি তার স্ট্রোক করা নানীকে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের বহন করা গাড়িটি ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা।


বিকেল ৪টা ৩০ 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে পরিচালিত কোটাবিরোধী আন্দোলনের এই পর্যায়কে ‘বাংলা ব্লকেড’ ( বাংলা অবরোধ) বলছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ এই কর্মসূচির জন্য জড়ো হতে শুরু করেন ঢাবির শিক্ষার্থীরা। 

বেলা সাড়ে চারটার মধ্যেই মিছিলটি পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর ও কাওরান বাজার মোড়, পরীবাগ, হেয়ার রোড, মিন্টো রোড অবরোধ করে। 

এছাড়া ঢাবির অধিভুক্ত সাতটি কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট ও নীলক্ষেত, পল্টন, গুলিস্তানসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করেন।

এর আগে, আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, শ্রদ্ধার সাথে বলছি যে কোটা আন্দোলনের যৌক্তিকতা ২০১৮ সালেই শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছে। সংবিধান অনুযায়ী, নাগরিকের সুযোগের সমতার কথা বলা হয়েছে। আমরা সংবিধানের পক্ষে লড়াই করছি। আমাদেরকে আদালত দেখিয়ে লাভ নেই, আমরা সংবিধানের কথা বলছি। 

তিনি বলেন, সংসদে দাড়িয়ে যে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন, আমরা আশা করবো এবারো তিনি শিক্ষার্থীদের পক্ষে কোটা বৈষম্যের চূড়ান্ত সুরাহা করবেন। আদালতের বিষয়াধীন বলে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। কারণ আজকে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা ৫০ বছর অপেক্ষা করেছি, ১৮ সালে আন্দোলন করেছি। আমাদের কাছে আর কোন অপশন নাই।


বিকেল ৪টা ১৫

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ, জেলার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। 

কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা।

সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা এই অবরোধে অংশ নেয়। 

বিকেল ৪টা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করে রাখার ৪ ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। 

এর আগে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জামালপুর এলাকায় রেলগেটের সামনের রেলপথ অবরোধ করে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এতে রাজশাহীসহ দেশের অন্যান্য অংশে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। 

বিকেল ৪টা

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিকেল ৪টায় কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন। পরে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মহাসড়ক অবরোধ করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ।

দুপুর ৩টা 

দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল ৩টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।


দুপুর ৩টা 

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। 

দুপুর ২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। আড়াইটায় লাইব্রেরির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। এরপর দুপুর ৩টায় মহাসড়ক অবরোধ করেন। 

বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪টি বিভাগ ও তিনটি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছে৷ তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন।  

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button