Hot

দাম নির্ধারণ সিন্ডিকেটের স্বার্থেই: নিত্যপণ্যের উৎপাদন, মজুত ও সরবরাহ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।

নিত্যপণ্যের উৎপাদন, মজুত ও সরবরাহ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। বাজার ও গুদামে পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। এরপরও সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য এক বা একাধিক পণ্য টার্গেট করে পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে। পরে এ দাম আর তেমন একটা কমছে না। 

দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে সরকার নানা উদ্যোগ নেয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওইসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু যত টাকা দাম বাড়ানো হয়েছিল, পুরোটা না কমিয়ে সামান্য কিছু কমানো হয়। এমনকি উৎপাদন, পরিবহণ, ব্যবসায়ীর মুনাফাসহ যে দাম হওয়ার কথা, এর চেয়েও বেশি দাম নির্ধারণ করা হয়। এতে প্রকৃতপক্ষে ভোক্তা কোনোভাবেই লাভবান হচ্ছেন না। উলটো তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। লাভবান হচ্ছে কথিত সিন্ডিকেট। এ কারণে অনেকে মনে করেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে, তা সিন্ডিকেটের পক্ষেই যাচ্ছে।

বাজারে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামই আকাশছোঁয়া। এর মধ্যে ভোক্তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় আলু, ডিম ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে লাগামহীনভাবে। এ বছরের শুরুর দিকে আলুর কেজি ছিল ২০ টাকা। মে মাসে তা বেড়ে হয় ৩৫ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা কেজি। বৃহস্পতিবার সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি। কিন্তু সেই দামও কার্যকর হয়নি। বাজারে এখন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। মার্চে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ টাকা। মেতে তা বেড়ে হয় ৫৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৯০ টাকায়। পরে সরকার নির্ধারণ করে দেয় ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। কিন্তু বাজরে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। জানুয়ারিতে প্রতি পিস ডিমের দাম ছিল ১০ টাকা। মেতে বেড়ে হয় ১১ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল সর্বোচ্চ ১৪ টাকা। সরকার নির্ধারণ করে ১২ টাকা। কিন্তু বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকায়। 

এদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে খোলা চিনির কেজি ছিল ৯০ টাকা। চলতি বছরের মেতে দাম বেড়ে হয় ১৩৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও একই দাম ছিল। সরকার সর্বশেষ কেজিতে চিনির দাম নির্ধারণ করে ১৩০ টাকা। কিন্তু সেই দামও মানা হচ্ছে না। বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। 

বাজার বিশ্লেষকরা জানান, প্রতি কেজি আলু বিক্রি করে কৃষক পেয়েছেন ১২ টাকা। কৃষকের কাছ থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা হিমাগারে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতি কেজিতে আলুতে খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ টাকা। হিমাগার থেকে সরকার নির্ধারিত বিক্রির দর ২৬ থেকে ২৭ টাকা। এ পর্যায়ে কেজিতে মুনাফা হয়েছে ৭ থেকে ৮ টাকা। খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত দর হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। হিমাগার থেকে খুচরা বাজারে আসতে মুনাফা ৯ টাকা। দুই দফা হাতবদলে আলুর দাম বাড়তি রাখা হয়েছে ১৭ থেকে ১৮ টাকা। তারা বলছেন, এক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত দামেই মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা রাখা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা এর চেয়েও বেশি মুনাফা করছেন। 

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাগফুর রহমান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পণ্যের মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে, বাজারে তা কার্যকর করতে সারা দেশে অভিযান চালানো হচ্ছে। শনিবার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিজে আলুর হিমাগার পরিদর্শন করছেন। সরকার যতবার পণ্যমূল্য নির্ধারণ করেছে, ততবার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তা কার্যকরের জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। 

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফা রোধে সরকার একাধিকবার একাধিক পণ্যের দাম নির্ধারণ করেছে। কিন্তু একবারও তা কার্যকর হয়নি। এবারও কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তবে মাত্রই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আরও কয়েকদিন দেখলে বোঝা যাবে এটি কার্যকর করতে পারছে কি না। তবে অসাধুদের অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন আর ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না।

তিনি আরও বলেন, আলু নিয়ে কারা কারসাজি করছে, সরকারের কাছে তথ্য আছে। ডিমের দাম বাড়িয়ে কারা ভোক্তার পকেট কেটেছে, এরও তথ্য সংশ্লিষ্টদের কাছে আছে। পেঁয়াজ নিয়ে কারা অসাধু পন্থায় অতিমুনাফা করছে, সেই তথ্যও সরকারের কাছে আছে। তাই এবার ভোক্তাস্বার্থে অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। এতে ক্রেতার উপশম হবে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, কোল্ড স্টোরেজে যারা আলু সংরক্ষণ করছেন, তারা এখন দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। যে কারণে আলুর দাম বেশি বেড়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. এম কে মুজেরী বলেন, পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আগে থেকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। সরকার কী করছে, সেটি ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জানাতে হবে। অনিয়ম করলে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা হলেই ভোক্তা সরকারের উদ্যোগের সুফল পাবে। ভোক্তার সুরক্ষা দিতে হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশে সেটি হচ্ছে না। কিছু ব্যক্তিগোষ্ঠীর হাতেই নিত্যপণ্যের নিয়ন্ত্রণ। এরা কারসাজি করলে তখন সরকারের আর করার কিছু থাকে না। 

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দেখিয়ে সয়াবিন তেলের দামও দেশের বাজারে মাত্রাতিরিক্ত বাড়ানো হয়েছে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম কমেছে, তখন দেশের বাজারে না কমিয়ে ডলারের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয়েছে। এরপরও সরকার বিভিন্ন সময় এর দাম নির্ধারণ করে দিলেও ওই দামে বাজারে তেল পাওয়া যায়নি। ভোক্তাকে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াতে বাজার থেকে তেল উধাও করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। 

বৃহস্পতিবার বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটারের দাম ১৬৯ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। তবে এই দাম কবে থেকে কার্যকর হবে, সে বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু জানায়নি। মন্ত্রণালয় বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী মালিক পক্ষের ওপর। মন্ত্রণালয় থেকে দাম বেঁধে দেওয়ার দুদিন পার হলেও এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়নি। এক সপ্তাহ আগে প্রতি লটার তেলের দাম ছিল ১৭৫ টাকা। বাজারে এখনো ওই দামেই বিক্রি হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া দামের কোনো প্রভাব এখনো বাজারে পড়েনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports