Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

দাম বাড়িয়ে বাজারে ফিরল ‘লুকানো’ সয়াবিন তেল

সয়াবিন তেল ঘিরে কতই না নাটক হলো এই ক’দিন! আচমকা বাজার থেকে হারিয়ে যায় বোতলজাত তেল। গতকাল সোমবার দাম বাড়ানোর এক ঘোষণায় সেই লুকানো তেলের বোতল ফিরেছে দোকানে দোকানে; সেজেছে থরে থরে। বাজারে যেন এখন বোতলজাত সয়াবিনের নহর বইছে!

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ‘সয়াবিন-কাণ্ড’ ঘটিয়ে নিজেরাই প্রমাণ করে দিলেন– এই কারসাজিতে তারাই ছিলেন। সংকট দেখিয়ে সরকারকে চাপে ফেলে একদিকে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছেন, অন্যদিকে এই ক’দিন নানা অপকৌশলে ক্রেতার পকেটে ছুরি চালিয়ে টাকা লুটেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা স্রেফ দিনদুপুরে ডাকাতি ছাড়া আর কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে তেলের কোনো সংকটই ছিল না। ফন্দি এঁটে কয়েক দিন ক্রেতার নাভিশ্বাস তুলে সরকারকে জিম্মি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে। অতীতেও ঘটেছে এমন ঘটনা। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এমন কাণ্ড অপ্রত্যাশিত। প্রশ্ন উঠেছে, এ সরকারও কি সিন্ডিকেটের কাছে পরাস্ত?
ভোক্তার দাবি, আজ তেল, কাল চিনি, পরশু হয়তো অন্য কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সুবিধা নেবে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। তাতে একদিকে ভোক্তার খরচ বাড়বে, অন্যদিকে সরকারও পড়বে চাপে। তাই এখন যেসব তেলের বোতল বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে, সেগুলো কখন আমদানি করা হয়েছে, আমদানি দর কত ছিল, কবে নাগাদ বাজারজাত করা হয়েছে– এসব তথ্য খতিয়ে দেখতে হবে। একই সঙ্গে বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি করতে ছোট ব্যবসায়ীর জন্য সৃষ্টি করতে হবে আমদানির সুযোগ। 
বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণার পরপরই রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে ভরে গেছে তীর, ফ্রেশ, পুষ্টি, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল। কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ কয়েকটি বাজারে গতকাল রাতে পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেল ৮৪০ থেকে ৮৫০ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। তবে ওইসব বোতলে দাম লেখা ৮১৮ টাকা। 

বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়ানো ও দাম স্বাভাবিক রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৭ অক্টোবর অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, পরিশোধিত পাম অয়েল ও সয়াবিন বীজ– এই তিন পণ্য আমদানিতে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে। ১৯ নভেম্বর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে আরও ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে শুধু আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট রাখে। তাতে বোতলজাত ও খোলা উভয় তেল লিটারে ১২ থেকে ১৩ টাকা কমার কথা। তবে বাজারে সেই পরিস্থিতি দেখা যায়নি। বরং কয়েক দিন ধরে বাজারে তেলের সংকট ছিল। ব্যবসায়ীরা লুকিয়ে পরিচিত ক্রেতাদের কাছে লিটারে ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে। এ পটভূমিতে গতকাল বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার ঘোষণা এলো। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার চার মাসের মাথায় এই প্রথম ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল।

তেলের দাম এমন সময়ে বাড়ানো হলো যখন খাদ্য মূল্যস্ফীতিও অস্বাভাবকি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, গত নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তার ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

লিটারে বাড়ল ৮ টাকা
গতকাল সচিবালয়ে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। ফলে এখন থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হবে ১৭৫ টাকা, যা আগে ছিল ১৬৭ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম হবে ১৫৭ টাকা, যা আগে ছিল ১৪৯ টাকা। একই সঙ্গে বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮৫২ টাকা। এতদিন পাঁচ লিটার বোতল ছিল ৮১৮ টাকা। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের (সুপার) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫৭ টাকা। 

নতুন দাম ঘোষণা করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাজারে এই মুহূর্তে সয়াবিন তেলের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি আছে বলেই গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন; ভোক্তারাও অস্বস্তিতে আছেন। এ সমস্যা সমাধানে অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ হিসেবে ট্যারিফ কমিশনের সহযোগিতায় মূল্য পরিস্থিতি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। 

উপদেষ্টা জানান, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ধাপে ধাপে ২০ শতাংশের বেশি দাম বাড়ে। এ কারণে স্থানীয় মজুতদারি বেড়েছে। কারণ দাম বাড়তে পারে, এমন ধারণা সবার ছিল।

তিনি বলেন, দেশে মজুতে কোনো ঘাটতি নেই। তবে ছোট থেকে বড় সব জায়গায় এক ধরনের মজুতদারি তৎপরতা রয়েছে। এ ধরনের মজুতদারির বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার কাজ করছে। সেখ বশির উদ্দিন বলেন, তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবারের খরচ ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাড়বে। তবে অন্য পণ্যে দাম যতটা কমেছে, তাতে এই বাড়তি খরচ বিশেষ কোনো চাপ সৃষ্টি করবে না।

দাম বাড়ানোর জন্যই ঘাটতি দেখানো হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে সেখ বশির উদ্দিন বলেন, এটা আমি জানি না।

আলুর দাম প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, আলুর দামে চূড়ান্ত অস্বস্তি কাজ করছে। নতুন আলু বাজারে আসতে চার সপ্তাহ সময় লাগবে। আলুর বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে আমদানি সহজ করা হয়েছে। ভারত থেকে সামান্য আমদানি হয়েছে। তবে চাল, ডিম, চিনি, পোলট্রি মুরগির বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। 

দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার বলেন, এক্স বন্ড, ইন বন্ড ভ্যালু এবং গত এক মাসে যে এলসি খোলা হয়েছে, এর ভ্যালু যোগ ও গড় করে দাম ঠিক করতে হয়। এর সঙ্গে প্রক্রিয়াজাত ও বোতলজাত খরচ যোগ করতে হয়। ২০১১ সাল থেকে এ পদ্ধতি চর্চা হয়ে আসছে। প্রতি টন ১ হাজার ১০০ ডলার ধরে এ দাম নির্ধারণ করা হলেও বিশ্ববাজারে এখন প্রতি টন ১ হাজার ২০০ ডলারের কাছাকাছি। প্রতি মাসে সরকারের সঙ্গে বসে তেলের দাম ঠিক করা হবে।

এ ছাড়া বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানিতে বিদ্যমান মূসক ছাড়ের মেয়াদ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে। 
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও সরবরাহে সংকট থাকার কথা বলে বাণিজ্য উপদেষ্টা পরোক্ষভাবে ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে উস্কে দিয়েছেন। কারসাজি চক্র ভোক্তাকে জিম্মি করে দাম বাড়ানোর যে সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে, তাতে এবারও সফল হয়েছে। বারবার এ ধরনের অপসংস্কৃতিকে উৎসাহিত করলে তার সামাজিক সংক্রমণ ঘটাবে। ব্যবসায়ীরা একবার চিনি, একবার চাল আর একবার সয়াবিন– এভাবে বছরজুড়ে বিভিন্ন পণ্যে অতি মুনাফা করে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মতো ব্যবসায়ীবান্ধব সরকারের বদলে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাবান্ধব সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তৈরি করতে হবে ন্যায্য ব্যবসার পরিবেশ।

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের (সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, কয়েকটি বড় কোম্পানি ভোজ্যতেল আমদানি ও বাজারজাত করে। মূলত তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পুরো বাজার ব্যবস্থাপনা। এতদিন আসলে সংকট ছিল না। ভোক্তাকে জিম্মি করে সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকারের সঙ্গে দেনদরবারের অপেক্ষায় ছিল তারা। 

ভোজ্যতেল ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করার পরামর্শ দিয়ে সেলিম রায়হান বলেন, বাল্কে ভোজ্যতেল আমদানি করা লাগে। তবে ছোট ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে অনেক টাকা বিনিয়োগ করে এত বেশি তেল আনতে পারেন না। তাই প্রয়োজনে কয়েকজন ছোট ব্যবসায়ীকে একসঙ্গে করে বাল্কের মাধ্যমে ভোজ্যতেল আমদানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বারবার কারা কীভাবে কারসাজির মাধ্যমে এ সুযোগ নিচ্ছে, তা প্রতিযোগিতা কমিশনকে তদন্ত করতে হবে। অনিয়ম রোধে বাজার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা জরুরি। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto