Hot

দায়মুক্ত ৩ হাজার দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লুটেরা দুদকের চোখে ‘ভালো মানুষ’

দুর্নীতির অকাট্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি ও আমলাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি, অনেকের মামলায় দেওয়া হয় এফআরটি * শুরু হয়েছে পুনঃতদন্ত, দেওয়া হচ্ছে মামলা। দুদকের এমন বিপরীত অবস্থান নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন * তদন্তের আগে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া বাতিলের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন

দুর্নীতি প্রতিরোধে দেশের একমাত্র সংবিধিবদ্ধ সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অথচ পতিত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংস্থাটি ছিল বড় দুর্নীতিবাজদের ‘রক্ষাকবচ’। তখন ‘রাঘববোয়াল’ হিসাবে পরিচিত প্রায় তিন হাজার ব্যক্তিকে দায়মুক্তি বা ‘ক্লিনচিট’ দেওয়া হয়েছে। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে অনুসন্ধান পর্যায়ে তা নথিভুক্ত করা হয়। আবার অনেকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ায় মামলা করা হলেও তদন্তের পর ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু (এফআরটি) এর মাধ্যমে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। প্রভাবশালী অনেকেই তিন-চার দফায় দায়মুক্তির সনদ বাগিয়ে বহাল তবিয়তে ছিলেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন তাদের অনেকের বিরুদ্ধে নতুন করে অনুসন্ধান ও মামলা হচ্ছে। একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আলাপকালে দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তা প্রায় একই ধরনের তথ্য তুলে ধরে যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন সময়ে সংস্থাটির শীর্ষ পদে যারা আসীন হয়েছেন, তারাই ক্ষমতার ছায়া অনুসরণ করেছেন। দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে ক্ষমতাবানরা ক্ষুব্ধ হন-এমন কোনো পদক্ষেপ কেউ নেননি। বরং কাজ করেছেন সরকারের মর্জিমাফিক। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে কমিশনের ইচ্ছা, আবার কিছু ক্ষেত্রে অবৈধ প্রভাবের কারণে অনুসন্ধান ও তদন্তকাজের বৈপরীত্য অবস্থান নেওয়ায় সংস্থাটিকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। দুদক কর্মকর্তারা দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান এবং তদন্ত পর্যায়ে দুই রকম প্রতিবেদন দিচ্ছেন, যা প্রশ্নবিদ্ধ ও হাস্যকর। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংস্থাটিকে কার্যত স্বাধীনভাবে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ এসেছে। এক্ষেত্রে দুদক সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি।

জানতে চাইলে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম (লিগ্যাল) যুগান্তরকে বলেন, ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সব সরকারই সংস্থাটিকে তাদের মতো চালানোর চেষ্টা করেছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেভাবে চেয়েছে, দুদক সেভাবেই চলেছে। তখন সরকার কঠোরতা দেখিয়েছিল, দুদকও কঠোরভাবে কাজ করেছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার ও তাদের সঙ্গে যারা সায় দিয়ে চলছে, তাদের চাওয়ামতোই দুদক কাজ করছে। ফলে এখন শুধু বিগত আওয়ামী রেজিমের লোকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও মামলা হচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগ সরকারও তাদের মতো করে দুদককে ব্যবহার করেছে। দুদকের পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন, তাদের বেশির ভাগ প্রশাসন ক্যাডার থেকে আসেন। তাদের সঙ্গে সরকারের একটা নিবিড় যোগাযোগ থাকে। ফলে তারা দুদককে স্বাধীন সংস্থার বদলে সরকারের অনুগত সংস্থা হিসাবে ভাবে। কেউ কখনো দুদককে স্বাধীন হওয়ার মতো অনুকূল পরিবেশ দেয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান ও কমিশন কঠোর হলে স্বাধীনভাবেই দুদকের কাজ চালানো সম্ভব। ওপরের কর্মকর্তাদের অনুসন্ধান ও তদন্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে বাণিজ্যের প্রবণতা বাদ দিতে হবে। অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর মামলা হলে অবশ্যই ওই মামলার চার্জশিট হতে হবে। না হলে কমিশনের খতিয়ে দেখতে হবে অনুসন্ধান প্রতিবেদন সঠিক না তদন্ত প্রতিবেদন সঠিক। যার প্রতিবেদন ভুল প্রমাণিত হবে, তাকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে জানা যায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৬ বছরের শাসনামলে প্রায় তিন হাজার ব্যক্তিকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে পতিত সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপি, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী আছেন। সবচেয়ে বেশি দায়মুক্তির ঘটনা ঘটেছে ইকবাল মাহমুদ কমিশনের আমলে। অভিযোগ আছে, তখন মোটা টাকা ঘুসের বিনিময়ে ক্লিনচিট দেওয়া হতো। আর ঘুস লেনদেন হতো ডলারে। ইকবাল কমিশনের আমলে আমলাদের দায়মুক্তিরও হিড়িক ছিল। দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে মামলা দায়ের করার পরও পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান হোসেন মনসুরকে দায়মুক্তি দেয় দুদক। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেনও পেয়েছিলেন দায়মুক্তির সনদ। এছাড়া ওয়াসার বহুল আলোচিত সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, আনন্দ শিপইয়ার্ডের মালিক আব্দুল্লাহিল বারী, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা, বিতর্কিত ব্যবসায়ী নেতা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার দিলীপ কুমার আগরওয়ালাসহ প্রভাবশালী অনেকের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে নথিভুক্ত করে ক্লিনচিট দেওয়া হয়। 

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ইকবাল মাহমুদ কমিশন আমলের শেষ ৫ মাসে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন বহুল আলোচিত কাস্টমস কমিশনার নূরুল ইসলাম, সিভিল এভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী শুভেন্দু গোস্বামী, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদুল ইসলাম, যুগ্মসচিব মো. আবুল হাসনাত হুমায়ন কবির, এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমান, জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল কবির ভূঁইয়া, সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খান, শাহরিয়ার শরিফ খান, রাজউকের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান, মো. সিরাজুল ইসলাম, ঢাকা ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক বেলাল হোসেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারওয়ার, কাস্টমস কমিশনার ড. মো. শহিদুল ইসলাম, উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. শফিউল আলম চৌধুরী, বিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ, গোয়াইনঘাটের সাবরেজিস্ট্রার স্বপ্না বেগম, স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন, গণপূর্তের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা একেএম মজিবুর রহমান ও সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়াদুদ। এসব ব্যক্তির অভিযোগ পরিসমাপ্তির বেশির ভাগ চিঠিতে সই করেন তৎকালীন দুদক মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান। যুগ্মসচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা প্রেষণে দুদকে এসে সাড়ে ৩ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেছেন। এভাবে আওয়ামী লীগ সকারের ১৬ বছর দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন কমিশনের হাত দিয়ে প্রায় তিন হাজার লোক দায়মুক্তি পেয়েছেন বলে জানা গেছে। 

দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে গত ৫ বছরে মামলার সূচকে ওঠানামা লক্ষ করা গেছে। ২০১৯ সালে ১ হাজার ৭১০টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হলেও অনুসন্ধান শেষে মামলা করা হয়েছে মাত্র ৩৬৩টি। ২০২০ সালে অভিযোগের অনুসন্ধান ও মামলা সংখ্যা কমে যায়। ওই বছর অনুসন্ধান শেষে মামলা করা হয় ৩৪৮টি। ২০২১ সালে মামলার সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৩৪৭টিতে। আর ২০২২ ও ২০২৩ সালে অভিযোগ জমার সংখ্যা, অনুসন্ধান ও মামলা কিছুটা বাড়ে। ২০২৪ সালে এ পরিসংখ্যান ছিল নিম্নগামী।

প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পুঞ্জীভূত আকারে ২০২২ সাল পর্যন্ত দুদকের হাতে মোট অনুসন্ধান ফাইল ছিল ৪ হাজার ৪০৩টি। একই বছর কমিশন ১ হাজার ১১৯টি অনুসন্ধান নিষ্পত্তি করেছে। নিষ্পত্তি হওয়া এসব অভিযোগের মধ্যে মামলা হয়েছে মাত্র ৪০৬টি। বাকি অভিযোগগুলোর অনুসন্ধান কাজ পরিসমাপ্তির (নথিভুক্ত) মাধ্যমে বা অন্যান্যভাবে (বিভাগীয় ও দাপ্তরিক ব্যবস্থা নিতে প্রেরণ) নিষ্পত্তি করা হয়েছে। একই সময়ে মামলার বিপরীতে চার্জশিট অনুমোদনের সংখ্যায়ও নিম্নগতি দেখা গেছে। ২০১৯ সালে ২৬৭টি, ২০২০ সালে ২২৮টি, ২০২১ সালে ২৬০টি এবং ২০২২ সালে ২২৪টি এবং ২০২৩ সালে ২৫১টি চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। বেশির ভাগ মামলার চার্জশিট না দিয়ে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিলের মাধ্যমে অভিযুক্তদের অনেককেই দায়মুক্তি দেওয়া হয়।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপিদের অনেকেই প্রভাব খাটিয়ে ক্লিনচিট নেন। তখন দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তির হিড়িক পড়ে। ওই সময় অন্তত ৮ জন সাবেক এমপি ক্লিনচিট বাগিয়ে নিয়েছিলেন। আর সাবেক ১৪ মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ফাইল থাকলেও কার্যত তা ছিল লাল ফিতায় বন্দি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পতিত সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে তিন দফা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে টিম গঠন করে দুদক। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করে তার অন্তত ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের তথ্য গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। কিন্তু প্রতিবারই অভিযোগের নথি লম্বা সময় ফেলে রাখা হয়। এরপর রহস্যজনকভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে অভিযোগ নথিভুক্ত করে তাকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়। অভিযোগ আছে, এ কাজে বিপুল অর্থ ঘুস লেনদেন হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়ে নির্বিঘ্নে পালিয়েছেন বাবু। দুদকও তার বিরুদ্ধে আগের মতোই রহস্যজনক ভূমিকায়। অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাস পার হলেও নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও মামলা করেনি দুদক। অথচ অনুসন্ধান শুরুর ২/৩ মাসের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া তখন জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য শামসুল হক চৌধুরী, ভোলা-৪ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আব্দুল্লাহ আল জ্যাকব, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আফজাল হোসেন, শেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আতিউর রহমান আতিক, চট্টগ্রাম-৩ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা, সাবেক সংসদ-সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক এবং সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেয় দুদক। জুলাই বিপ্লবের পর তাদের প্রায় সবার বিরুদ্ধেই নতুন করে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এর মধ্যে নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৮ জানুয়ারি মামলা করেছে দুদক। মামলায় শাওনের বিরুদ্ধে ৫১ কোটি ৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আর তার নামে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাবে ২০৮ কোটি ৭০ লাখ ৭৯ হাজার ৪২৩ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। শাওনের স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, একই ব্যক্তিকে একবার ক্লিনচিট দেয় আবার অনুসন্ধান শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই মামলা করে-দুদকের এ ভূমিকা যেমন প্রশ্নবিদ্ধ, তেমন রহস্যময়। কারা কেন একই ব্যক্তিকে একবার ‘দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি’ মর্মে ক্লিনচিট দেন, আবার অনুসন্ধানের কয়েক মাসের মধ্যেই কীভাবে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ খুঁজে পান, তা উদ্ঘাটন করে জড়িতদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। তাহলে দুদক কর্মকর্তারা এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে সাহস পাবেন না। 

আরও জানা যায়, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপ, মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের বিকল্প ধারার সাবেক সংসদ-সদস্য মাহী বি চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান চলেছে বছরের পর বছর। পতিত সরকারের আজ্ঞাবহ সাবেক কমিশনের কর্মকর্তারা তাদের দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত খুঁজে পায়নি। আবার তদবির কিংবা ‘দেনদরবার’ করে তারা ক্লিনচিট নিতেও সফল হননি। এই তালিকায় আরও নাম আছে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ-সদস্য মো. শাজাহান, কামরুল আশরাফ খান পোটন ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ-সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদার। তাদের বিরুদ্ধে তখন মামলা না করা হলেও বিএনপির সাবেক অনেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ৫ আগস্ট সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার পলায়নের পর পালটে যায় দৃশ্যপট। দুর্নীতির অভিযোগ ও মামলা থেকে ছাড়া পেতে থাকেন বিএনপি নেতারা। আর আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান নতুন করে গতিশীল হয়। গত ১৯ জানুয়ারি আব্দুস সোবহান গোলাপ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন আদলত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দেন। এছাড়াও অন্তত অর্ধশত সাবেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান টিম কাজ করছে। ইতোমধ্যে মামলা করা হয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। কারও কারও বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতিও চলছে। 

জানা যায়, পরপর চারবার দুদকের ক্লিনচিট নিয়েছিলেন ছাগলকাণ্ডে আলোচিত এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান। প্রভাবশালী এই সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে চার দফা অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। প্রতিবারই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সত্যতা মেলেনি বলে তাকে অব্যাহতি দিয়ে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়। ছাগলকাণ্ডে আলোচিত হওয়ার পর পতিত সরকার তার ওপর নাখোশ হলে আরেক দফা অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। সবশেষ ৭ জানুয়ারি ১২৩ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্ত্রী-সন্তানসহ মতিউরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। বিতর্কিত ও আলোচিত ডায়মন্ড ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে দুই দফা দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় দুদক। সিনেমা হলের ম্যানেজার থেকে শূন্য হাতে চাচার হাত ধরে ঢাকায় এসে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে হাজার কোটি টাকার মালিক হন দিলীপ। ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় তার ডায়মন্ড জুয়েলারির আড়ালে সোনা চোরাচালানের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপরও দুদক তখন তার কোনো অবৈধ সম্পদ বা দুর্নীতি খুঁজে পায়নি মর্মে দুবার তাকে ক্লিনচিট দেয়। ৫ আগস্টের পর দিলীপ গ্রেফতার হলে ১ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে ফের অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক। এখনো তার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। 

এছাড়া সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, আসাদুজ্জামান খান কামাল, শ ম রেজাউল করিম, আ হ ম মুস্তফা কামাল, লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান, নসরুল হামিদ বিপু, সুবিদ আলী ভূঁইয়াসহ সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের গোপন অনুসন্ধান চালায় দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ওইসব ফাইল আলোর মুখ দেখেনি। এখন এসব মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান ও মামলা করছে দুদক। 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নামে স্বাধীন হলেও কার্যত পরাধীন দুদক কর্মকর্তারা। সব রাজনৈতিক সরকারের আমলেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের সাঁতার কাটতে নামালেও বেঁধে দেওয়া হয় হাত-পা। রাজনৈতিক চাওয়া-পাওয়ার পাশাপাশি দুদকের নিয়ন্ত্রণে থাকা কমিশন ও প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের আদেশ-নির্দেশ থাকে। ফলে প্রভাবমুক্ত হয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত দলের সদস্যরা কাজ করতে পারেন না। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বলয় ও তদবির বাণিজ্যের বাইরে রাখতে পারলেই কেবল দুদককে শক্তিশালী ও কার্যকর করা সম্ভব।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor