Bangladesh

দালাল ধরে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা, ‘ভাগ্য ফেরাতে ছেলের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছি’

পরিবারের অভাব ঘোচাতে ছেলে মিঠুনকে বিদেশে পাঠানোর কথা ভাবছিলেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের তামসের আলী। এর মধ্যে কথা হয় পাশের গ্রাম বেলগাছির যুবক লিবিয়াপ্রবাসী সাগরের সঙ্গে। তার প্রলোভনে ছেলেকে ইতালি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তামসের। ধারদেনা করে সাগরের হাতে তুলে দেন ১৩ লাখ টাকা। মাস ছয়েক আগে মিঠুন যাত্রা করেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্নযাত্রা সফল হয়নি। তিনি এখন লিবিয়ায় জিম্মি। তাঁর মুক্তির জন্য ফোন করে আরও কয়েক লাখ টাকা দাবি করেছে দালাল চক্র। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় চালানো হচ্ছে নির্যাতন।

এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তামসের আলী। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা চাচ্ছে দালালরা। এখন মনে হচ্ছে, ভাগ্য ফেরাতে ছেলেটার জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একই সময়ে সাগর চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে সাগরপথে ইতালি যেতে মিঠুনসহ আলমডাঙ্গার কয়েক গ্রামের ৩৬ যুবক এবং চুয়াডাঙ্গা সদরের একজন টাকা দেন। কিন্তু তাদের কেউই এখনও ইতালি পৌঁছাতে পারেননি। তাদের অধিকাংশ অপহরণকারীর হাতে জিম্মি, কয়েকজন আছেন লিবিয়ার কারাগারে। অপহরণকারীরা প্রতিনিয়ত তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ দাবি করছে। নির্যাতনের কথা শুনে দেশে থাকা স্বজন শঙ্কা ও অনিশ্চয়তায় মধ্যে দিন পার করছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পাঁচ পরিবার গত সোমবার রাতে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।  

মিঠুন ছাড়াও ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন– আলমডাঙ্গার জীম, মামুনুর রশিদ, তুহিন হক, তিতাস, জুয়েল রানা, হাসিবুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, বকুল হোসেন, নয়ন হক, আবু সাঈদ, জুনায়েদ হাসান প্লাবন, আবু জাফর, সাগর আলী, মিল্টন আলী, মোশারফ আলী, বিপুল হোসেন, নিশান মিয়া, আব্দুল্লাহ জাহিদ, সজীব হোসেন, হৃদয় আহমেদ টিটন, সবুজ আলী, বিপ্লব হোসেন, সনজিত কুমার, মামুন আলী ও চুয়াডাঙ্গা সদরের তরিকুল ইসলাম।

স্থানীয়রা জানান, ১০ বছর আগে লিবিয়াপ্রবাসী সাগর ও তার ভাই জীবন সাগরপথে লিবিয়া হয়ে ইতালি পাঠানোর একাধিক দালাল চক্র গড়ে তোলে। তারা আলমডাঙ্গা ছাড়াও কয়েকটি জেলা থেকে লোকজনকে ইতালি পাঠায়। সর্বশেষ ইতালি পাঠানোর কথা বলে চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৩৭ জনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নেয় তারা। তবে কেউই ইতালি পৌঁছাতে পারেননি। জিম্মি অবস্থা থেকে ভুক্তভোগীরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের কষ্টের কথা জানাচ্ছেন। টাকা দিয়ে তাদের মুক্ত করার আকুতি জানিয়ে আসছেন।

ভুক্তভোগী বেলগাছি গ্রামের জিমের বাবা ঠান্ডু রহমান বলেন, ‘ইতালি পাঠানোর কথা বলে সাগর ১৩ লাখ টাকা নিয়েছে। এখন ছেলেকে মুক্ত করতে আরও ২২ লাখ টাকা চাচ্ছে।’

পৌর শহরের সজীব হোসেনের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তিন মাস ধরে ছেলের অবস্থান জানতে পারছি না। কেবল এতটুকু জানতে পেরেছি, সে এখন জিম্মি। ঠিকমতো খাবার দেয় না। মারধর করে আর মোটা অঙ্কের টাকা চায়।’

আলমডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদুর রহমান বলেন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় ইতালি পাঠানোর কথা বলে সাগর ও জীবনের বিরুদ্ধে ৩৭ জনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী কয়েকজনের পরিবার থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button