Hot

দিব্যি আছেন বাচ্চু, ধরার সাহস নেই দুদকের

বেসিক ব্যাংক থেকে আস্ত এক ‘টাকার পাহাড়’ সরিয়েছেন তিনি। টাকার অঙ্কে তাও সাড়ে চার হাজার কোটি! এত টাকা লুটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর গায়ে এখন টোকাও দেওয়া যাচ্ছে না। ৫৮ মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত করার আট মাস পরও এই আলোচিত আসামিকে গ্রেপ্তারের সাহস পাচ্ছে না খোদ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আইন অনুযায়ী, এ আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তুলে বিচারের মুখোমুখি করার দায়িত্ব দুদকের। তবে বাচ্চু দেশে ঘাপটি মেরে থাকলেও স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বশাসিত সংস্থাটি তাঁকে ধরার ব্যাপারে গরজ দেখাচ্ছে না। ফলে এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের ঘূর্ণি বয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটিতে রাখা জনগণের কষ্টার্জিত আমানতের টাকা আত্মসাতের নীলনকশা প্রস্তুতকারী বাচ্চুকে গ্রেপ্তার না করায় দুদকের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে মানুষ। 

অথচ এর আগে আরেক আলোচিত আসামি হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর আহমেদকে খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করেছিল দুদক। তানভীর এখনও কারাবন্দি। এ ছাড়া অতিলাভের টোপ ফেলে সরলমনা মানুষের টাকা হাতানোর অভিযোগের মামলায় ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনকেও অতীতে ছাড় দেয়নি দুদক। আগে বড় বড় রাঘববোয়াল ধরে বিচারের মুখোমুখি করলেও বাচ্চুর ক্ষেত্রে দুদকের কেন এমন বাঁকবদল– সেটার কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছে সমকাল।
এ বিষয়ে দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক বলেন, ‘আমি জানি না, বাচ্চু কেন গ্রেপ্তার হয়নি; গ্রেপ্তার না হওয়ার কারণ কী? এ বিষয়ক রেকর্ডপত্র দেখতে হবে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছ থেকে শুনতে হবে। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আট বছর তদন্তের পর বাচ্চুকে আসামি করে আমরাই অভিযোগপত্র দিয়েছি। কমিশনের সাহস আছে বলেই তো বাচ্চুকে ৫৮ মামলায় আসামি করা হয়েছে।’

দুদকের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘অভিযোগপত্রে বাচ্চুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এই পর্যায়ে আদালত অনুমতি দিলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাবে। অন্যদিকে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগটি আমলযোগ্য অপরাধ হওয়ায় ও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার কারণে বাচ্চুকে গ্রেপ্তারে দুদকের আইনি কোনো বাধা নেই।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে জাতীয় সংসদসহ সারাদেশে তুমুল আলোচনা হয়েছে। এখন প্রশ্ন, দুদক কি সত্যিকার অর্থে এই ব্যক্তিকে ‘আইনের চোখে সবাই সমান’– এ মানদণ্ডে বিবেচনা করছে, নাকি তাঁর ব্যক্তি পরিচয়কে বা কোনো প্রভাবের কারণে আনুকূল্য দেখানো হচ্ছে। এ প্রশ্ন ওঠা খুবই যৌক্তিক।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাচ্চু পলাতক হলে তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। দুদকের মামলার আসামি হিসেবে তাঁকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব দুদকেরই। এ ক্ষেত্রে দুদক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে পারবে। দুদকের কাজে সহায়তা করতে তারা আইনিভাবে বাধ্য। পালিয়ে বিদেশ গেলেও দুদক ইন্টারপোলের সহায়তা নিতে পারে।’ 
জানা গেছে, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ৫৯ মামলার চার্জশিট দেওয়ার আট মাস পরও ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মামলাগুলো নেয়নি। আগামী মাসে মামলাগুলো নেওয়া হবে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে। মামলাগুলো নেওয়ার পর বিচারকাজ শুরু হবে। 

সূত্র জানায়, বাচ্চু সম্প্রতি তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছিলেন। বাচ্চুর আইনজীবী হাইকোর্টে জামিন-সংক্রান্ত ডাইরেকশন দিয়েছিলেন। পরে দুদকের আইনজীবী তাদের ডাইরেকশন আপিল বিভাগে তুলে ধরলে সেটি বাতিল করা হয়। জামিনের জন্য তাঁকে নিম্ন আদালতেই যেতে হবে। নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন পেশ করা হলে আবেদনের শুনানির সময় তাঁর সামনে দুটি পথ খোলা থাকবে। এর একটি জামিন পাওয়া, অন্যটি কারাগারে যাওয়া। 

২০১৫ সালের ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দিনে বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ৩৮৩ কোটি ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫৬ মামলা করা হয়। পরে আরও তিনটি মামলা করা হয়। মোট ৫৯ মামলার কোনোটিতেই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। প্রায় আট বছর তদন্তের পর ব্যাংকের ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১২ জুন ৫৯ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫৮ মামলায় বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে।

বাচ্চুর বাড়িসহ সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ সম্প্রতি আদালতের আদেশে ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছে। ওই সব সম্পদের মধ্যে রয়েছে বাড়ি, জমি, প্লটসহ অন্য অর্থ-সম্পদ। সম্পদগুলো দেখভাল করার জন্য রিসিভার নিয়োগের অনুরোধ জানিয়ে এরই মধ্যে দুদক ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজের কাছে আবেদন করেছে। 
শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহা. নূরুল হুদা। পরিবারের অন্য সদস্যরা হলেন স্ত্রী শিরিন আকতার, ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিক, মেয়ে শেখ রাফা হাই ও ছোট ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না। 

বাচ্চু এখন কোথায়?
বাচ্চু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাবের নোটিশ নিয়ে গেল নভেম্বরে দুদক তাঁর ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের বাসায় গেলে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে বাচ্চু খবর পেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে ওই সব নোটিশ নিয়েছিলেন। এরপর আইনজীবীর মাধ্যমেই বাচ্চু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব জমা দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক পদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বাচ্চু এখন দেশে থাকলেও পালিয়ে আছেন। বাচ্চু দেশের কোন এলাকার কোন বাড়িতে আছেন, কীভাবে আছেন– তা নিয়ে দুদকের মাথাব্যথা নেই। দুদক চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় স্বল্প সময়ের মধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারে। 

বাচ্চুর যত সম্পদ
বাগেরহাটের মোল্লাহাটের ৬২/৫৯ রাঙ্গামাটিয়া মৌজায় ১.৪২ একর জমি, মূল্য ১৪ লাখ টাকা; ঢাকার সাভারের দিয়াখালী মৌজায় ৪৩.২৫ শতাংশ জমি, মূল্য ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা; ঢাকার ভাটারার জোয়ারসাহারা মৌজায় ১৩০০ অযুতাংশ জমি, মূল্য ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং জোয়ারসাহারা আরেক মৌজায় ১৬ কাঠা জমি, মূল্য ১ কোটি ৪৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা; চট্টগ্রামের ডবলমুরিংয়ের দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজায় ০১৪০ শতাংশ জমি, অবিভক্ত ভিটি ভূমি এবং ৩২৫৫ বর্গফুট আয়তনের পঞ্চম তলার পশ্চিম অংশের ৪-এ ও ৪-বি নম্বর ফ্ল্যাট এবং নিচতলায় স্থিত প্রতিটি ১৫০ বর্গফুটের দুটি কার পার্কিং, মূল্য ১ কোটি ৩৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদ রয়েছে।
এ ছাড়া মেঘনা ব্যাংকে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ১৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকার এফডিআর ও ব্র্যাক ব্যাংকে দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আছে। এসব সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ অবস্থায় রয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d