Hot

দিল্লি না বেইজিং কোন দিকে ঝুঁকছে ঢাকা?

দিল্লি না বেইজিং- কার প্রতি ঝুঁকছে ঢাকা? পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি তথা বিশ্ব বাস্তবতায় এশিয়ার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীনের মধ্যে কাকে বেশি কাছে টানছে উভয়ের বন্ধু বাংলাদেশ বা কার প্রতি বেশি আকর্ষণ বোধ করছে? সেই প্রশ্ন এখন সর্বত্র। এ নিয়ে খোলামেলাই কথা বলছেন পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত সাবেক মন্ত্রী, সচিবরা। তবে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা পেশাদার কূটনীতিকরা এ নিয়ে কথা বলতে বরাবরই সতর্ক। তারা প্রায়শই বাংলাদেশের ‘ব্যালেন্স ফরেন পলিসি’র বয়ান হাজির করার চেষ্টা করেন। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন।

পেশাদাররা এমনটাও বলেন যে, উদ্ভূত পরিস্থিতি বা ঘটনা বিবেচনায় বাইরে থেকে যে কারও মনে হতে পরে যে, বাংলাদেশ একটি বন্ধু রাষ্ট্রের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু হয়তো পর্দার আড়ালে অন্য বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে নিঃশব্দে ভিন্ন কিছু হচ্ছে! আর এর মধ্য দিয়ে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টাই প্রতিনিয়ত করে চলেছে ঢাকা। অর্থনীতিসহ নানা সংকটে জর্জরিত বাংলাদেশ পশ্চিমা দুনিয়ার মতামতকে অগ্রাহ্য করে জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন করে ফেলেছে। যার মধ্য দিয়ে ৩০০ আসনের মধ্যে ২২২ আসন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ দফায় সরকারে ফিরেছে। বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জয় পাওয়া রেকর্ডসংখ্যক স্বতন্ত্র এমপি কার্যত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছেন।

যদিও তাদের বেশির ভাগ সরকারের ডামি প্রার্থী ছিলেন। অবশ্য অফিসিয়াল বিরোধী দল হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে কোনোমতে ১১ সিট পাওয়া জাতীয় পার্টি! যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডাসহ পশ্চিমা বন্ধুদের রিজারভেশনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনে যুদ্ধবন্ধু ভারত এবং উন্নয়নবন্ধু চীনের জোরালো সমর্থন ছিল। যা দেশ দু’টির প্রতি বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে দায়বদ্ধ করেছে বলে মনে করেন সমালোচকরা। আর সে কারণেই ১০ দিনের ব্যবধানের দু’দফা নয়াদিল্লি সফর এবং সেই সফরের এক মাসের মধ্যেই পূর্ব-নির্ধারিত তারিখ ৮ই জুলাই বেইজিং যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের বিদ্যমান নানা সংকট থেকে উত্তরণে দেশ দু’টির কাছে বড় সহযোগিতা পাওয়ার আশা সরকারের। কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীনের মধ্যে কোন দেশের কাছ থেকে কি ধরনের সহায়তা নিচ্ছে বাংলাদেশ? তার সবটা খোলাসা না হওয়ায় রাজনীতিতে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা চলছে। যার অনেকটাই সত্য বা সত্যের কাছাকাছি এমন ধারণা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পেশাদাররা। তবে তারা এটা বলার চেষ্টা করেন যে, চাওয়া-পাওয়ার হিসেবে বাংলাদেশের ঘাটতি বা সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে কিন্তু পরস্পরবিরোধী বা প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভারতের কোনো খেলায় বাংলাদেশ কখনই পার্ট হয় না। উদাহরণ হিসবে তারা বলেন, লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা-প্রাণহানির ঘটনাকালেও উভয়ের বন্ধু বাংলাদেশ কারও পক্ষাবলম্বন না করে শান্তির বার্তা প্রচার করেছে।

বাংলাদেশের ঝুঁকে পড়া নিয়ে কেন এত উদ্বেগ: চীন না ভারত কার প্রতি বাংলাদেশ ঝুঁকছে? এমন প্রশ্ন উঠেছিল সরকারপ্রধানের সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে। প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফরের পর বেইজিং সফর প্রস্তুতির প্রসঙ্গে প্রশ্নটি এসেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তারপরও এ নিয়ে কথাবার্তা বন্ধ হয়নি। অতি সম্প্রতি ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এক নিবন্ধে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি খোলাসা করেই বলেন, এটি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতের সংবাদ মাধ্যম ইকোনমিক টাইমসে লেখা নিবন্ধে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের গভীরতার কথাও তুলে ধরেন।

এদিকে ব্যাক টু ব্যাক প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফর এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে বেইজিং সফরের প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সদ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকছে না। এ নিয়ে কারও ভয়ের কোনো কারণ নেই। মোমেন মনে করেন- ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে কোনো খাদ নেই। এ বন্ধুত্ব অক্ষুণ্ন এবং অটুট। মোমেনের মতে, মালদ্বীপের পর বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বাড়ছে মর্মে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা অমূলক। তিনি দাবি করেন বাংলাদেশ চীনের প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে না। চীন কেবলমাত্র বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী। তারা শুধু এ দেশের কিছু প্রজেক্টে সহযোগিতা করছে। চীন থেকে বাংলাদেশ যা পেয়েছে তা জিডিপি’র ১ শতাংশের কম উল্লেখ করে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা নয়। তার মতে, বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকছে- এটা একটা প্রোপাগান্ডা মাত্র।

ঢাকায় ‘রাষ্ট্রীয় অতিথি’র মর্যাদা পাওয়ার চেষ্টা চীনের মন্ত্রীর, সতর্ক ছিল বাংলাদেশ: এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ সফরে আসেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নেতা ও আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও। সঙ্গে ছিলেন ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল। চীনের রাজনীতিতে অত্যন্ত ইনফ্লুয়েনশিয়াল ব্যক্তিত্ব লিউ ঢাকায় আসার পর প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন।

বৈঠক হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে। চীনের ওই অতিথির সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করেছিলেন। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ওই ভোজ-বৈঠক হয়। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ওই নেতা তার প্রত্যাশা অনুযায়ী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল বিবেচনায় সেটি পাওয়ার কথা ছিল না, তারপরও তা করা হয়েছে। তারপরও চীনের চাওয়া ছিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক তথা লাঞ্চের আয়োজন, যা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে গেছে ঢাকা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে আমন্ত্রণ না জানানোর মধ্য দিয়ে খানিকটা ব্যালেন্স রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে বলে দাবি করেন এক কূটনীতিক।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button