Bangladesh

দুই বছরে ৭ নিত্যপণ্যের দাম ২০০ শতাংশ বেড়েছে

রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে পরিবার নিয়ে থাকেন মো. মজিবর। বয়স্ক এই ব্যক্তি রিকশাচালক। দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করেন। এ দিয়ে তিনজনের সংসার চালানো কষ্ট।

সম্প্রতি বনানী সুপার মার্কেটের সামনে মজিবরের সঙ্গে কথা হয়। দুর্মূল্যের বাজারে নিজের এই দুরবস্থার কথা জানিয়ে মজিবর বলেন, ‘আলুভর্তা আর ডাল দিয়া ভাত খাইয়া কোনোমতে দিন কাটাইতাছি। যে টাকা পাই, কিছুই থাকে না। আগে ২০০ টাকা হইলে বাজার হইয়া যাইত, এহন এক হাজার টাকা নিয়া বাজারে গেলে কয়েকটা জিনিস কিনলেই শেষ।

তিনি বলেন, ‘দেড় মাস আগে গরুর মাংস কিনছিলাম। ধইনা, জিরা, আদা, রসুন, পিঁয়াজের যে দাম, মাংস রাইন্ধা খাওনের সাধ মিটা গেছে।’
শুধু নিম্ন আয়ের মানুষই নয়, মধ্যবিত্তও এখন বাজারে মসলাজাতীয় পণ্যসহ সাত নিত্যপণ্য কেনা নিয়ে বিপাকে। দুই বছরের ব্যবধানে জিরা ও শুকনা মরিচের দাম ২০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

পেঁয়াজ, রসুন ও ধনের দাম বেড়েছে শতভাগের বেশি। একই সময় চিনি ও আলুর দামও শতভাগের বেশি বেড়েছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি ও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এই পণ্যগুলোর দাম বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

শেওড়াপাড়ার শামীম সরণি এলাকার বেলাল আহমেদ বলেন, ‘সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে গেছে। আগে যেখানে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতাম, দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আধা কেজি করে কিনি।

তরকারি রান্নায় আদা, রসুন, জিরা, ধনে ইত্যাদি যতটুকু না কিনলেই নয়, ততটুকু কিনি। এর পরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগে দৈনন্দিন খাবারের বিভিন্ন পণ্য কিনতে যেখানে ২০ হাজার টাকা লাগত, এখন লাগে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, দেশে গত নভেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৭৬ শতাংশ। একই সঙ্গে গত অক্টোবর থেকে আগের তিন মাস খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশের ওপরে। অন্যদিকে নভেম্বর মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৪৯ শতাংশ। এর মধ্যে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.১৬ শতাংশ, গ্রামে ছিল ৯.৬২ শতাংশ। অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রামে পণ্যের দাম বেশি।

টিসিবি ও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের দাম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দুই বছর আগে ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা নগরীর বাজার তালিকা অনুযায়ী প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ দাম ছিল ২৫ টাকা। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ছিল ৬০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ছিল ৫০ টাকা। শুকনা মরিচ ছিল ১৮০ টাকা কেজি। আমদানি করা রসুন ছিল ১৩০ টাকা কেজি। এ ছাড়া জিরা ৪০০ টাকা, ধনে ১৩০ টাকা, চিনি ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

দুই বছর পর গতকাল ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর কয়েকটি খুচরা কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা কেজি দরে। দেশি পেঁয়াজ ১৫০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০ টাকা, শুকনা মরিচ ৬০০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৬০ টাকা, জিরা এক হাজার ২০০ টাকা, ধনে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চিনি এক কেজির প্যাকেট ১৫৫ টাকা, খোলাটা ১৫০ টাকা কেজি।

হিসাব করে দেখা গেছে, দুই বছর পর আলুর দাম বেড়েছে ১৪০ শতাংশ, দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫০ শতাংশ, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৪০ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে শুকনা মরিচের, যা ২৩৩ শতাংশ। এর পর জিরায় ২০০ শতাংশ, ধনেতে ১৩১ শতাংশ, রসুনে ১০০ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া চিনিতে প্রতি কেজির দাম বেড়েছে ১০৬ শতাংশ।

এসব পণ্য কমবেশি আমদানি করতে হয়। মার্কিন ডলারের দাম কমা বা বাড়ার সঙ্গে এসব পণ্যের দাম ওঠানামা করে।

দুই বছর আগে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে এক মার্কিন ডলারের দাম ছিল প্রায় ৮৬ টাকা, যা এখন আমদানির ক্ষেত্রে ১১০ টাকা। এতে ডলারের দাম বেড়েছে ২৭.০৯ শতাংশ। কিন্তু ব্যবসায়ীরা  উল্লিখিত পণ্যগুলোর দাম বাড়িয়েছেন ১০০ থেকে ২০০ শতাংশের বেশি।

ভোক্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যবসায়ীচক্রের কারসাজিতে এসব নিত্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হয়েছে। সরকার এদের নিয়ন্ত্রণ করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিলেও মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।

এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারকে বড় ধরনের ছাড় দিতে হবে। ভোক্তার কথা কেউ চিন্তা করে কথা বলে মনে হয় না। এখন যে মূল্যস্ফীতি, এটা শুধু বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য নয়, এর সঙ্গে মুদ্রা ব্যবস্থাপনা, সরকারের আয়-ব্যয় ব্যবস্থাপনা, রাজস্বনীতি, সুদের হারসহ অনেক কিছুই জড়িত। এগুলোর সংস্কার না করে বাজারে অভিযান লোক দেখানো।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টার পরও বাজারে দাম শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আমরা যখন আলুর হিমাগারে অভিযান পরিচালনা করলাম, তখন আমাদের সঙ্গে যদি স্থানীয় প্রশাসন কঠোর অবস্থানে যেত, তাহলে উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো। কিন্তু আমি গিয়ে মজুদদারদের ধরে দিলাম, চলে আসার পর তারা ছেড়ে দিয়েছে। তাদের মজুদদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম, কিন্তু তা হয়নি। এখন আমার আইনে তো তাদের আটকাতে পারি না।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor