Bangladesh

দুই বছর আগেই ৭ লাখ পাউন্ডের ফ্ল্যাট নিয়ে মিথ্যাচার, পদত্যাগের চাপে টিউলিপ

ল্যান্ড রেজিস্ট্রি থেকে পাওয়া তথ্যমতে, লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে এমএ শেষ করার পর পরই ২০০৪ সালের নভেম্বরে টিউলিপ ফ্ল্যাটটির মালিকানা লাভ করেন। সে সময় তার জ্ঞাত আয়ের কোনো উৎস ছিল না। সম্পত্তিটির বন্ধকি বা মূল্যের বিষয়ে কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। ফলে এটা স্পষ্ট যে সম্পত্তিটি কেনা হয়নি, বরং তাকে হস্তান্তর করা হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে বিনা মূল্যে পাওয়া একটি ফ্ল্যাট নিয়ে মিথ্যাচারের পর থেকে পদত্যাগের চাপে রয়েছেন দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক (৪২)।

দ্য সানডে টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, টিউলিপ উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডের এমন একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন, যেটি তার পরিবারকে দিয়েছেন তার খালা ও বাংলাদেশের স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক মিত্র। হ্যাম্পস্টেডের ফিঞ্চলে রোডের এ ফ্ল্যাট টিউলিপের বোন আজমিনাকে বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যের আরেক গণমাধ্যম ডেইলি মেইল আজ রোববার একাধিকবার টিউলিপের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। বর্তমানে ফ্ল্যাটটির বর্তমান মূল্য সাত লাখ পাউন্ড।

তবে টিউলিপ ফ্ল্যাটটি উপহার হিসেবে পাওয়ার কথা অস্বীকার করেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে এটি তার বাবা-মা তার জন্য কিনেছেন।

তবে লেবার পার্টির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে এক আবাসন ব্যবসায়ী ‘কৃতজ্ঞতাস্বরূপ’ টিউলিপকে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার ওই ফ্ল্যাটটি উপহার দিয়েছিলেন।

টিউলিপ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের (ট্রেজারি) অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) হিসেবে আর্থিক খাতের অপরাধ-দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন। তিনি ও তার পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

গত রাতে টোরি (কনজারভেটিভ) এমপিরা উপযুক্ত ব্যাখ্যা না দেওয়া পর্যন্ত ট্রেজারি মিনিস্টারের দায়িত্ব থেকে টিউলিপকে সরে দাঁড়ানোর দাবি জানান।

টোরি এমপি বব ব্ল্যাকম্যান বলেন, সিদ্দিককে (টিউলিপ) তার সম্পত্তির বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। তাকে প্রকৃত ঘটনা জানাতে হবে। যদি না করেন, তাহলে মিনিস্টার হিসেবে তিনি অগ্রহণযোগ্য।

আরেক এমপি ম্যাট ভিকারস বলেন, সরকারের কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ অগ্রহণযোগ্য। আর যখন কেউ স্টারমারের দুর্নীতি বিরোধী মিনিস্টার হন, তখন বিষয়টি আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ।

এমপি বেন অবেস-জেকটি বলেন, এখন এটি স্পষ্ট যে ফ্ল্যাটটি টিউলিপ উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন এবং এটি তিনি কেনেননি, যেমনটি আগে দাবি করা হয়েছিল। তাই টিউলিপকে এখন আরও অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।

লেবার পার্টির একাধিক সূত্র গত রাতে বলেন, ২০২২ সালে যখন আমরা প্রথমবার অনুসন্ধান করি, তখন টিউলিপের পরিবার তাকে বলেছিল যে বাড়ি বিক্রির টাকা থেকে ফ্ল্যাটটি কেনা হয়েছে। সম্প্রতি পরিবারটি তাদের এ কথা ঘুরিয়ে ফেলেছে।

লেবার পার্টির একটি সূত্র গতকাল ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, টিউলিপের বাবা-মা তাদের এক পরিচিতজনকে বিপদের সময় সহায়তা করেছিলেন। পরে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ওই ব্যক্তি তার মালিকানাধীন একটি সম্পত্তি টিউলিপের মালিকানায় হস্তান্তর করেন।

এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান টিউলিপ। তবে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে, টিউলিপকে এ সম্পত্তির মালিকানা পাওয়ার বিষয়ে আগে যে কথা বলা হয়েছিল, সেটি বদলে গেছে। বিষয়টি জানার পর টিউলিপ ওই সাংবাদিকদের বিষয়টি অবহিত করেছিলেন, যারা এর আগে বিষয়টি নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন।

ল্যান্ড রেজিস্ট্রি থেকে পাওয়া তথ্যমতে, লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে এমএ শেষ করার পর পরই ২০০৪ সালের নভেম্বরে টিউলিপ ফ্ল্যাটটির মালিকানা লাভ করেন। সে সময় তার জ্ঞাত আয়ের কোনো উৎস ছিল না। সম্পত্তিটির বন্ধকি বা মূল্যের বিষয়ে কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। ফলে এটা স্পষ্ট যে সম্পত্তিটি কেনা হয়নি, বরং তাকে হস্তান্তর করা হয়েছিল।

ডেইলি মেইল নিশ্চিত দেখিয়েছে যে ফ্ল্যাটটির আগের মালিক ছিলেন আবদুল মোতালিফ (৭০) নামের এক বাংলাদেশি। তিনি ২০০১ সালে ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ডে ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন।

২০২২ সালের এপ্রিলে ডেইলি মেইল টিউলিপের কাছে জানতে চেয়েছিল যে ফ্ল্যাটটি তিনি উপহার হিসেবে পেয়েছেন কি না। জবাবে ই-মেইলের মাধ্যমে লেবার পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘২০ বছরেরও বেশি সময় আগে যখন টিউলিপের বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়, তখন তারা তাদের পারিবারিক বাড়ি বিক্রি করে দেন। সেই অর্থ দিয়ে কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাটটি কেনেন। ফ্ল্যাট কেনার এই অর্থ অন্য কোনো উৎস থেকে এসেছে- এমন তথ্য সম্পূর্ণ ভুল ও মানহানিকর।

ডেইলি মেইল টিউলিপের পরিবার নিয়ে আরও অনুসন্ধানে ২০০২ সাল বা এর আগে তাদের বাড়ি বিক্রয়ের কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়নি।

গত বছরের জুলাই মাসে সংবাদমাধ্যমটি টিউলিপ ও লেবার পার্টির কাছে আরও কিছু প্রশ্ন জানতে চেয়েছিল। টিউলিপ সে সময় সংবাদ মাধ্যমটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

টিউলিপ তার পার্লামেন্টারি অ্যাকাউন্ট থেকে এক ই-মেইলে বলেছিলেন, এসব অভিযোগ ভুল। যদি এগুলো কোথাও প্রকাশিত হয়, তাহলে তিনি আইনি পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবেন না।

তিনি যোগ করেন, ‘আগেই বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা-মা তাদের পারিবারিক বাড়ি বিক্রি করে পাওয়া অর্থ দিয়েই ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন।

টিউলিপ ডেইলি মেইলকে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ না করারও দাবি জানিয়েছিলেন।

মোতালিফ শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সহযোগী। এ বিষয়ে  জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor