দুই মাসের প্রবাসী আয়ের সমপরিমাণের অর্থ পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৩০ শর্তে তিন পক্ষই চাপে
দুই মাসের প্রবাসী আয়ের সমপরিমাণের অর্থ পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৩০ শর্ত মানতে হয়েছে বাংলাদেশকে। যার মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রত্যাহার, সুদহার কিংবা মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার মতো শর্ত রয়েছে, যেগুলো সরাসরি সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলছে। এর ফলে গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ¦ালানি ও খাদ্যের সঙ্গে জীবনযাত্রার সর্বক্ষেত্রে ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে, যা দেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বাড়িয়ে তুলেছে। শুধু সাধারণ মানুষই নয়, সরকার ও ব্যবসায়ীরাও চাপে পড়েছে।
৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্তে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে সুশাসন ও সংস্কারের নামে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর খরচের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। জ¦ালানি তেল, গ্যাস-বিদ্যুৎ থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহারের ফলে সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ফলে গত দেড় বছরে মানুষের আয় না বাড়লেও জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। আইএমএফের সঙ্গে অংশীদারত্বের পর থেকেই রাষ্ট্রীয় জনকল্যাণ খাতে ভর্তুকি কমানোতে এমন সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে শুরুতেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। গত ২২ মাস ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় রয়েছে।
উচ্চমূল্যের গ্যাস-বিদ্যুতের পাশাপাশি ডলার ও সুদহার বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। উৎপাদন ব্যয় সামাল দিতে না পেরে অনেক প্রতিষ্ঠান পড়েছে লোকসানে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও সুদহার বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের বোঝাও ভারী হয়েছে।
বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে সরকার আইএমএফের দ্বারস্থ হলেও সংকট সামাল দেওয়া যায়নি। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়ার সময় ২০২৩ সালের জানুয়ারির শুরুতে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৩৭৪ কোটি ডলার। আর ঋণ প্রাপ্তির প্রায় দেড় বছর পর নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯ বিলিয়নে। গতকাল পর্যন্ত আইএমএফের বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ রয়েছে ১৮ দশমিক ৪২ বিলিয়ন। অবশ্য এখন দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ নেমে এসেছে ১৩ বিলিয়ন ডলারে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, আইএমএফের ঋণ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ২০২২ সালের ৫ আগস্ট মধ্যরাতে সরকার হঠাৎ করেই সব ধরনের জ¦ালানি তেল ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। যার প্রভাব পড়ে পুরো দেশের অর্থনীতিতে। কিছুদিনের মধ্যে দেশের
নিত্যপণ্যের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যায়। এক ধাক্কায় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উন্নীত হয়, যেটি এখনো নিয়ন্ত্রণহীন। মূল্যস্ফীতি কমাতে গণবিরোধী পদক্ষেপ এসেছে। এ সিদ্ধান্তও যে আইএমএফের শর্তের কারণে নেওয়া, তা তখন সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
শুধু তেলের দামই নয়, গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও লাগামছাড়া। এ তিন জ¦ালানিই মানুষের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় বিষয়। ভোক্তার নাগালের বাইরে গিয়ে আর ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না স্বাভাবিক দামে। ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে নয়বার। কিন্তু গত দেড় বছরেরও কম সময়ে এ দাম বাড়ে চারবার।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহক পর্যায়ে ৩ টাকা ৭৩ পয়সায় থাকা ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ১৪০ শতাংশ বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। আর এ অবস্থা এবার আরও নাজুক হওয়ার পালা। আমদানিনির্ভর বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাত প্রায় পুরোপুরি ডলারকেন্দ্রিক। তেল, কয়লা, এলএনজি কিংবা ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, বিদ্যুৎকেন্দ্রের দেনা, বিদেশি কোম্পানির পাওনা সবই পরিশোধ হচ্ছে ডলারে। কিন্তু ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম একলাফে ৭ টাকা বাড়ানোয়, আবারও বাড়তি ব্যয়ের শঙ্কা বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাত ঘিরে। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে গিয়ে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতকে ভর্তুকিমুক্ত করাসহ নানা সংস্কারের পথে হাঁটছে সরকার। আর এসবের ভার গিয়ে চাপছে সাধারণ গ্রাহকের কাঁধে। আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে এখন থেকে প্রতি তিন মাস পরপর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এটি অন্তত তিন অর্থবছর ধরে চলবে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া গ্যাসের ভর্তুকিও ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হবে। সঙ্গে চলছে আমদানিতে শুল্কছাড় বন্ধ, রেসট্রিকটিভ ডিউটি (আরডি) বৃদ্ধি ও ভ্যাট বৃদ্ধির প্রক্রিয়া। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি তৈরির চার-পাঁচটি বড় উপাদানকে একসঙ্গে প্রয়োগ করা হয়েছে, যা মানুষকে দারিদ্র্যের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের ওপর সরকারি ভর্তুকি ৮৪ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। ভর্তুকি প্রত্যাহারের এ দায় পুরোটাই দেশের জনসাধারণের ওপর বর্তাবে। এর ফলে আগামীতে এসব সেবায় ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সব পণ্যের দাম আরও বাড়বে।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম মনে করেন, দেশের মানুষের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। বর্তমান জ¦ালানি নীতি অসাধু ব্যবসাবান্ধব।
জ¦ালানির দাম বাড়ানো ছাড়া সরকারের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে ড. শামসুল বলেন, ‘আমরা তো বিকল্প বলেই দিয়েছি। সরকার ১৯৯০ সাল থেকে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন করতে গিয়ে বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতাবিহীন বিনিয়োগ আনার জায়গা থেকে বিনিয়োগকারীদের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। যেভাবে অকল্পনীয়ভাবে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, এসব ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবছে না, সেসব ব্যয় যৌক্তিকীকরণের কথাও ভাবছে না। প্রতিযোগিতা আইনের ভাষায় এভাবে ব্যয় বৃদ্ধি করার কারণে, মাত্রাতিরিক্ত অর্থ মুনাফা হিসেবে নিয়ে যাওয়ার কারণে যে ঘাটতি হয়েছে, সে ঘাটতি ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি করে তাদের কাছ থেকে আদায় করা জ¦ালানি সুবিচারের পরিপন্থী।’ যদি ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যেত তাহলে ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা যেত, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগেও ১৩ দফা দাবি দিয়ে বিদ্যুৎ খাত সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি।’
কৃষিপ্রধান দেশে কৃষকের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত সার। শর্ত মানতে গিয়ে বাড়তে পারে সারের দামও। যেহেতু ডলারের দাম বাড়ানো হয়েছে, সারও কিনতে হবে বেশি দামেই। সরাসরি প্রভাব পড়বে দেশের কৃষি উৎপাদনে। বিদ্যুতের দাম বাড়ার প্রভাবও পড়বে কৃষিতেও। কৃষির উৎপাদন ব্যয় ইতিমধ্যেই বেড়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি পেজ ক্ল্যাসিফিকেশন-আইপিসি পূর্বাভাস বলছে, এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে খাদ্য কেনা নিয়ে চাপে থাকবে ২ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ, খাদ্য সংকটে পড়ে যাবে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ। তাছাড়া জরুরি সংকটের মধ্যে পড়বে ৭ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ। এ সময়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বাইরে বা নিরাপদ অবস্থানে থাকবে ২ কোটি ৯২ লাখ ৫১ হাজার মানুষ।
তাদের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের হিসাবও দেওয়া হয়েছে। এতে ওই দুই মাসে খাদ্য নিয়ে চাপে ছিল ২ কোটি ৭৮ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ। খাদ্য সংকটে পড়েছিল ১ কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ। আশঙ্কার কথা হলো, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে জরুরি খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়েছিল ৩ লাখ ২৮ হাজার মানুষ।
পৃথিবীর সর্বনিম্ন কর আদায়কারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম সর্বাগ্রে। আইএমএফ শর্ত দিয়েছে, জিডিপির তুলনায় করের হার আরও বাড়াতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ নিয়ে দারুণ চাপেও আছে। করের হার বাড়াতে গেলে এনবিআরের লক্ষ্য থাকে পরোক্ষ করে। অথচ পাশের দেশ ভারতেও প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর সবচেয়ে বেশি। কর ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন না এনে পরোক্ষ করেই জোর দিচ্ছে সংস্থাটি।
আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড়ের দেড় বছর পার হতে চললেও মূল্যস্ফীতির অতি উচ্চহার, ডলারের বাজারে অস্থিরতা, রিজার্ভের পতন চলছে। ব্যাংকে তারল্য-সংকট, মালিকানা হস্তান্তর, দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণে সমস্যা, খেলাপি ঋণ সংকটের কূল-কিনারা হচ্ছে না।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত দুই বছর ধরে তারা বেশি দাম দিয়েও গ্যাস-বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। ডলারের দাম বাড়ায় সরকারকে জ¦ালানি আমদানি করতে হবে আগের চেয়ে ৭ টাকা বেশিতে। সুতরাং গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাওয়া কল-কারখানাগুলোর জন্য আরও ব্যয়বহুল হতে পারে। তাছাড়া ব্যবসায়ীদের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের কাঁচামাল বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর। আমদানিনির্ভর ব্যবসায়ীদের জন্য এখন কাঁচামাল আমদানি করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তারা।
ডলারের দাম বাড়ায় সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। বর্তমানে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রয়েছে বিদেশি ঋণ, যার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ সরকারের। সম্প্রতি ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে ডলারের দাম এক ধাক্কায় ৭ টাকা বাড়ানোয় টাকার অঙ্কে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। যেসব বেসরকারি কোম্পানির বিদেশি মুদ্রায় আয় নেই, সেসব প্রতিষ্ঠান পড়েছে সবচেয়ে বেশি বিপাকে। এ ছাড়া আইএমএফের চাপে বাজারভিত্তিক সুদহার হওয়ায় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের আর্থিক খরচও ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। সুদব্যয় বাবদ এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বেড়েছে ৩০-৪০ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘আমরা এখন অস্তিত্বহীন হওয়ার শঙ্কায় আছি। কীভাবে টিকে থাকব জানি না। একদিকে ইডিএফ ফান্ডকে (রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল) সংকুচিত করা হয়েছে, অন্যদিকে সুদের হার দুই অঙ্কের ঘরে চলে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে আমাদের যে ঋণের ঊর্ধ্বগতির সীমা ছিল ১০০ কোটি টাকা, তা এখন ৪০ শতাংশ কমে ৬০ কোটি টাকায় নেমেছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে আগে ১০০ কোটি টাকার যে মাল আনতাম, এখন তা ৬০ কোটি টাকার আনতে পারি।’
এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘ক্রমান্বয়ে শিল্পের গ্যাসের দাম যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, পাওয়ার প্ল্যান্টের ভর্তুকির টাকা কে দেবে। সার বানাতে গিয়ে ১৫ টাকা দিচ্ছেন, সে টাকা কোথা থেকে দেবে। ১০ বছর ধরে ৪ টাকা করে গ্যাস পোড়াল সরকার, এ টাকা কে ভর্তুকি দেবে। যখন সরকারের লোকসান হয়, এই টাকাটা কে দেয়।’
আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে দীর্ঘদিনের ৬-৯ সুদহারের সীমা তুলে নিয়ে সংস্কারে মনোযোগী হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক যখন এ সুদহার তুলে নিয়েছে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, ক্রলিং পেগ পদ্ধতি বাস্তবায়নের (অন্তত দেড় বছর আগে করা উচিত ছিল) মাধ্যমে ডলারের বিপরীতে টাকার দাম পড়তে দেওয়া হয়েছে ভুল সময়ে। সুদের হার বেড়ে যাওয়ার পরও নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। ডলারের একক রেট সময়মতো বাস্তবায়ন করা হয়নি। এক লাফে ডলারের মূল্য ৭ টাকা বৃদ্ধিতে সরকারের মূল বোঝা বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জ; সার ও জ¦ালানিসহ যাবতীয় আমদানি এবং বিশেষভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। ফলে দেশ নতুন দফায় মূল্যস্ফীতি প্রত্যক্ষ করবে।
আমানত-সঞ্চয়ে সুদের হারও মূল্যস্ফীতির কাছাকাছি নেওয়া হয়নি সঠিক সময়। ঋণের সুদহার নির্ধারণে তথাকথিত স্মার্ট পদ্ধতি চাপিয়ে দিয়ে দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতির কালে এক অঙ্কের সুদে ঋণ বিতরণ করে শিল্পপতিদের ঋণ দেওয়ার পথ তৈরি করা হয়েছে। এতে ঋণ অদলবদল ও পাচার বেড়েছে কিন্তু নতুন বিনিয়োগ হয়নি।
আইএমএফের শর্তে এক অঙ্কের খেলাপি ঋণের হারের কথা বলা হয়েছে। অথচ আইএমএফের সঙ্গে অংশীদারত্বের মধ্যেই সরকারি চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। এ সময়ে শীর্ষ কোনো ঋণখেলাপিকে আইনের আওতায় আনার ঘটনা ঘটেনি। আইএমএফ সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক সমস্যার সমাধানে কাজ করছে না।
আইএমএফের শর্তের কারণে জ¦ালানি তেল, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির মতো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে সরকারকে, এতে করে জনগণের হতাশার চাপ পড়ছে সরকারের ওপর। সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। টিসিবি ও ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষকে কিছু খাদ্যপণ্য কমমূল্যে বিতরণ করলেও দরিদ্র মানুষের কষ্ট কমাতে পারেনি। অন্যদিকে ডলারের দাম ও সুদহার বৃদ্ধির কারণেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাপে রয়েছে সরকার। বেশি দাম নিয়েও সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারায় অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থসংকটের কারণে সরকারকে উন্নয়ন ব্যয়েও লাগাম টানতে হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অনেক প্রকল্প স্থগিত রাখতে হয়েছে।