Hot

দুদকের টার্গেট ১০০০

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর একের পর এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগস্টের মাঝামাঝিতে প্রথম ধাপে দেড়শ’ জনকে অনুসন্ধানের আওতায় আনলেও পরবর্তীতে এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। সম্প্রতি নতুন করে ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের নেতৃত্বে কমিশন গঠন হলে দুদকের অনুসন্ধান-তদন্তে গতি পায়। সে সঙ্গে বিগত সময়গুলোতে অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়া ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। 

দুদক সূত্রমতে, বর্তমানে চলমান অনুসন্ধানগুলোর সঙ্গে যুক্ত করে এক হাজার ব্যক্তিকে অনুসন্ধানের আওতায় আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থপাচার, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, ঘুষগ্রহণ, সরকারি প্রকল্পে কারসাজিসহ দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, বিগত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ছাড়াও দুদকের টার্গেটে রয়েছেন তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও যারা বিভিন্ন সময় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য পদে দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অনিয়ম করেছেন। 
সূত্র জানায়, অক্টোবরের শেষ দিকে মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিশনের পদত্যাগের পর সংস্থাটিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম হয়নি। এরই ফাঁকে এক মাসে কমিশনের প্রধান কার্যালয় ছাড়াও দেশ জুড়ে থাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়গুলোতে হাজারো অভিযোগ জমা পড়েছে। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর গত কয়েক দিনে এসব অভিযোগের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এক এক করে দুদকের আইন ও বিধি মেনে অনুসন্ধানের  আওতায় আনা হচ্ছে। 

সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, এক হাজার ব্যক্তি টার্গেট হচ্ছে কথাটা এভাবে বলা যাবে না। তবে বর্তমানে দুই শতাধিক অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এসবের মধ্যে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত আছেন এমন অভিযুক্ত রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তাদের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া শিগগিরই আরও দেড় শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হচ্ছে। এসব হিসাব করলে জেলা কার্যালয়গুলোতে প্রতিদিন আসা অভিযোগগুলো আমলে নিলে এক অর্থে এক হাজার ছাড়াবে। 

তিনি আরও বলেন, কারও বিরুদ্ধে ইনটেনশনালি অনুসন্ধানের কাজ দুদক করবে না। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। তারপর দুদকের আইন অনুযায়ী তফসিলভুক্ত অপরাধ মনে হলেই কমিশন সিদ্ধান্ত দিতে পারে। 

নতুন করে যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান: সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। গত ৬ই অক্টোবর রাতে মো. নজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।  ২০১৫ সালে পরিবেশ ও বন সচিব থেকে নজিবুর রহমানকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া  অতিরিক্ত কর কমিশনার সাইফুল আলম, যুগ্ম কর-কমিশনার এম শামসুজ্জামান, সহকারী কর কমিশনার মো. আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ও অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। গত অক্টোবরে ভুয়া পে-অর্ডারে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের দুই ছেলের ৫০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে সাদা করার দায়ে এই তিন কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। 

বিআরটিএ’র একটি প্রকল্পে ১৩৭টি বাস কেনায় অনিয়মের অভিযোগে সাবেক সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পরিবহন বিভাগের সচিব এবিএম আমিনুল্লাহ নুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এ ছাড়া অনুসন্ধানের আওতায় রয়েছেন ঢাকা-১৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক  শাহ আলমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহেনা ও তার  মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। 
দুদকের অনুসন্ধানে সাবেক কমিশনের আমলে প্রভাব বিস্তার করে জাল ছিঁড়ে বের হওয়া একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুনরায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তও হচ্ছে। এরমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, খুলনার সাবেক সংসদ সদস্য সালাম মুর্শিদীসহ বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।

যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান: দুদকের অনুসন্ধান তালিকায় আরও যারা রয়েছেন তারা হলেন- সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অপু উকিল। তালিকায় আছেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন, সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং সাবেক এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। এ ছাড়া সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, বরিশাল-২ আসনের সাবেক এমপি শাহ আলম তালুকদার, বরগুনা-১ আসনের সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভু ও তার ছেলে সুনাম দেবনাথ, গাইবান্ধা-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। দুদকের তালিকায় আছেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার, দিনাজপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি ইকবালুর রহিম, মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শেখর, সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শফিক রয়েছেন। এর বাইরে সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ, চৌধুরী ফরিদুল হক, ইমরান আহমদ, জাকির হোসেন, কামাল আহমেদ মজুমদার, জাহিদ আহসান রাসেল, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শাজাহান খান, হাছান মাহমুদ, কামরুল ইসলাম, হাসানুল হক ইনুর নামও রয়েছে দুদকের এই অনুসন্ধানের তালিকায়। এরমধ্যে শিগগিরই জান্নাত আরা হেনরী, নসরুল হামিদ বিপু, আ হ ম মুস্তফা কামালের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কথা রয়েছে বলে চালিয়েছে দুদক সূত্রে।

দুদক চেয়ারম্যানের যে বার্তা: দুদকে যোগ দিয়েই জনপ্রত্যাশা পূরণের ওপর জোর দিচ্ছেন দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। সে সঙ্গে বিগত সময়ে রাষ্ট্রের যেসব বড় দুর্নীতি হয়েছে সেসব দুর্নীতিবাজদের ছাড় না দেয়ার বিষয়ে কড়া বার্তা দেন তিনি। মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, নতুন কমিশন জনপ্রত্যাশা পূরণ করবে। যেসব বিষয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা এই কাজগুলো করেছেন তারা যেন শেষ পর্যন্ত ছাড় না পান; সেটা আমরা যথাযথভাবে করার চেষ্টা করবো। শেষ পর্যন্ত যাতে এমন না হয়, আমরা একটি  অসমাপ্ত তদন্ত, রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে কাজ না করি সেটা আমরা লক্ষ্য রাখবো। এই সময়ে জনপ্রত্যাশা,  রাষ্ট্রের যে প্রত্যাশা; আমরা খানিকটা হলেও তা পূরণ করতে পারবো।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor