Bangladesh

দুদকের নজরে অর্ধশতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা: ক্ষমতার দাপটে বিপুল সম্পদ

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের ক্ষমতার মেয়াদে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন পুলিশের অনেক কর্মকর্তা। তারা বিরোধী দলগুলোর উপর নানা দমন-পীড়ন চালিয়ে সরকারের আস্থা অর্জন করেন। আর এই আস্থাকে পুঁজি করে অবৈধ উপায়ে দেশে-বিদেশে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করা পুলিশের অর্ধ শতাধিক কর্মকর্তার বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ইতিমধ্যে কমিশন তাদের নজরে এনেছে। শিগগিরই এসব কর্মকর্তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হবে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে। রাজনীতির মাঠে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনে দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা ঘুষ বাণিজ্য থেকে শুরু করে পুলিশের নিয়োগ, পদায়ন, চাঁদাবাজি,  টেন্ডারবাজি, মামলায় হস্তক্ষেপ, গ্রেপ্তার বাণিজ্য করে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে, মামলার ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ী বা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার অভিযোগও আছে অনেকের বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের এসব কর্মকর্তারা নির্মম কায়দায় বল প্রয়োগ করেছেন। তাদের নির্দেশে অধস্তন অনেকে নিরীহ শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালিয়েছেন। 

শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ধুলিস্যাৎ করার জন্য তারা ৫ই আগস্ট দুপুর পর্যন্ত সর্বশেষ চেষ্টা করেছেন।

বিজ্ঞাপন সুবিধাভোগী এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের বেআইনি নির্দেশে নির্বিচারে সাধারণ নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করেছে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। এসব কর্মকর্তারা এতটাই বেপরোয়া ছিলেন বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বহাল রাখার জন্য দলীয় কর্মীর মতো ভূমিকা পালন করেছেন। 

আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় ও শেখ হাসিনার ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছেন এমন কর্মকর্তাদের খোদ পুলিশের কর্মকর্তারাই চিহ্নিত করেছেন। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) তাদের বিষয়ে তৎপর হয়েছে। চিহ্নিত হওয়া কর্মকর্তাদের অনেকেই এখন পলাতক। জনগণের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। 

গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, উচ্চাভিলাসী ও অপেশাদার ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের এখনো পূণাঙ্গ তালিকা হয়নি। খোঁজখবর নিয়ে বিগত দিনের  কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে তালিকা তৈরি হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে সম্মুখ সারিতে থাকা অনেকের নাম উঠে এসেছে। এদের মধ্যে সাবেক প্রভাবশালী আইজিপি বেনজীর আহমেদের নাম রয়েছে। যদিও তিনি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর অনেক আগেই দেশত্যাগ করেছেন। তালিকায় নাম রয়েছে সদ্য সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের। আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর দুই দফায় চুক্তি ভিত্তিক আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পান। তার বিরুদ্ধে পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও গুলির নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে।

তালিকায় রয়েছে, ১৯৯১ সালে নিয়োগ পাওয়া ১২তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে অতিরিক্ত আইজি কামরুল আহসান, আতিকুল ইসলাম ও পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের নাম। ১৯৯৫ সালে নিয়োগ পাওয়া ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন এসবির সদ্য ওএসডি হওয়া এসবি প্রধান মো, মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজি ওয়াই এম বেলালুর রহমান, শিল্প পুলিশের প্রধান মাহবুবুর রহমান, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ, সিআইডির সদস্য ওএসডি হওয়া প্রধান অতিরিক্ত আইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া, অতিরিক্ত আইজি দেব দাস ভট্টাচার্য্য, খন্দকার লুৎফুল কবীর, চট্টগাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় ও ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মীর রেজাউল আলম। ১৯৯৮ সালে নিয়োগ পাওয়া ১৭ ব্যাচের ডিএমপি’র ওএসডি হওয়া কমিশনার হাবিবুর রহমান, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি অপারেশন আনোয়ার হোসেন, ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার, ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন, রংপুর রেঞ্জের অব্যাহতি পাওয়া ডিআইজি আব্দুল বাতেন, চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির ও সিআইডির শেখ নাজমুল আলম। নাজমুল আলমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।

১৯৯৯ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন কমিশনার মো. মাহবুব আলম, রংপুর মেট্রোপলিটনের সাবেক কমিশনার ও চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়া মো, মনিরুজ্জামান, পুলিশ সদর দপ্তরের জয়দেব কুমার ভদ্র ও  ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। ২০০১ সালে নিয়োগ পাওয়া ২০ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন শাহ মিজান শফিউর রহমান, মো. আনিসুর রহমান, মোল্যা নজরুল ইসলাম, এসএম মোস্তাক আহমেদ, জিহাদুল কবীর, মো. ইলিয়াস শরীফ, নূরে আলম মিনা, শাহ আবিদ হোসেন, মো. জামিল হাসান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলাম, রাজশাহী রেঞ্জের বিপ্লব বিজয় তালুকদার, ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার বহুল আলোচিত মো. হারুন অর রশীদ, এসবির মোহা. মনিরুজ্জামান, শ্যামল কুমার নাথ, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. আলমগীর কবির, মো হামিদুল আলম, ড. শামসুন্নাহার, শেখ রফিকুল ইসলাম, ড. একেএম ইকবাল হোসেন ও মো. মাসরুকুর রহমান খালেদ। ২০০৩ সালে নিয়োগ পাওয়া ২১তম ব্যাচের ডিএমপি’র যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, মো. মারুফ হোসেন সরদার, বিজয় বসাক ও সুব্রত কুমার হালদার, শ্যামল কুমার মুখার্জী, মো সাজ্জাদুর রহমান, প্রবীর কুমার রায়, আসম মাহতাব উদ্দিন, মোহা আহমারুজ্জামান, সুভাষ চন্দ্র সাহা, মো মোকতার হোসেন ও পংকজ চন্দ্র রায়। ২২তম ব্যাচের ডিএমপি’র যুগ্ম কমিশনার খন্দকার নূরুন্নবী, এসএম মেহেদী হাসান, একই ব্যাচের মোহাম্মদ জায়েদুল ইসলাম ও সঞ্জিত কুমার রায়। ২০০৫ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৪ বাচের মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, ডিবি’র উপ-কমিশনার মশিউর রহমান (সদস্য সিএমপিতে বদলি), নাবিদ কামাল শৈবাল, মো. শহিদুল্লাহ, সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ।  ২০০৬ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৫তম ব্যাচের

 ঢাকার এসপি মো. আসাদুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল, পাবনার এসপি মো. আব্দুল আহাদ, ডিএমপি’র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, রাজিব আল মাসুদ, আসমা সিদ্দিকা মিলি, কাজী আশরাফুল আজিম, হায়াতুল ইসলাম খান, জসিম উদ্দিন মোল্লা ও মো. শাহজাহানসহ কয়েকজনের নাম রয়েছে। এ ছাড়া মহিবুল ইসলাম খান, মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনসহ আরও অনেকের নাম রয়েছে। সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি’র সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও খন্দকার ফারুক হোসেন ও মো. শফিকুল ইসলাম রয়েছেন। এর বাইরেও পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও থানার অনেক ওসির নামও আছে তালিকায়। 

দুদক সূত্র জানিয়েছে, এসব কর্মকর্তাদের অবৈধ সম্পদের সন্ধানে নেমেছেন কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও ডিএমপি’র সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের সম্পদের তদন্ত শুরু হয়েছে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor