Hot

দুদকে অদৃশ্য ভূত, ঝুলে থাকে মামলা-অনুসন্ধান

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এখন নেতৃত্বশূন্য। চেয়ারম্যান নেই, দুই কমিশনারের দপ্তরের চেয়ারও ফাঁকা। তবে পদগুলো পূর্ণ করতে কাজ চলমান। শিগগিরই চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগ দেয়া হবে। কমিশনশূন্য হওয়ায় দুদকের কর্মকর্তারা অনেকেই এখন তেমন কাজ করছেন না। সূত্র জানায়, সংস্থাটিতে এ মুহূর্তে কয়েক হাজার অভিযোগ অনুসন্ধান ও মামলা তদন্তের কাজ কর্মকর্তাদের হাতে রয়েছে। যা বছরের পর বছর চলতেই থাকে। সূত্র বলছে, অনেক কর্মকর্তা সঠিকভাবে কাজগুলো শেষ না করার কারণে এসব অনুসন্ধান-তদন্ত কার্যক্রম অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়ে যায়। 
একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, নতুন কমিশনকে দায়িত্ব নিয়েই পড়তে হবে পুরনো অনুসন্ধান ও মামলার চক্রে। ফলে নতুন করে অনুমোদন হওয়া অনুসন্ধানগুলোর ওপরও পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। 

দুদকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন কমিশন না থাকায় অনেক কাজই থমকে আছে। তাদের দাবি, কাজ না থাকায় অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে অফিস করছেন কেউ কেউ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, এখন অনেক কর্মকর্তাই অফিসে আসছেন ঠিকই। কিন্তু কাজ না থাকায় খোশগল্পে দিন পার করেন। 
অবশ্য দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কমিশনের কয়েকটি সিদ্ধান্ত জনিত কার্যক্রম ছাড়া সব স্বাভাবিক থাকার কথা। কারণ দুদকের এমনো অনুসন্ধান রয়েছে যা বছরের পর বছর কেটে গেলেও শেষ হয়নি। এ ছাড়া অনেক তদন্তও আছে যেগুলো নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও চার্জশিট দেয়া বাকি রয়ে গেছে। এসব কাজ প্রায় সব কর্মকর্তার হাতেই রয়েছে। এই যে একটা সময় যাচ্ছে, নতুন অনুসন্ধানের চাপ নেই, তদন্তের চাপ নেই এখন তো করতেই পারে। 

দুদক সূত্র বলছে, দুদকের পুরনো এসব অনুসন্ধান-তদন্ত সময় মতো শেষ না হোক তা অনেক কর্মকর্তাই আগ্রহ প্রকাশ করেন না। এতে নতুন একটি কমিশন আসলে তাদের ঘাড়েই পুরনো অনুসন্ধানের চাপ পড়ে।  
সূত্রমতে, এ মুহূর্তে দুদকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিম্ন আদালতে মোট ৩ হাজার ৩৭৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তার মধ্যে ২ হাজার ৯৪৪টি মামলার বিচার কার্যক্রম বর্তমানে চলমান আছে। হাইকোর্টের আদেশে ৪৩০টি মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। বর্তমানে উচ্চ আদালতের ৭৪৬টি রিট, ৯১৪টি ফৌজদারি বিধির মামলা, ১ হাজার ২৪৫টি ক্রিমিনাল আপিল মামলা ও ৭০৭টি ফৌজদারি রিভিশন মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। 

২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে  দুদকে বর্তমানে ৪ হাজার ৪২৮টি অভিযোগ অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। প্রতি বছর প্রায় হাজারখানেক যোগ হয়। চলতি বছরও পাঁচ শতাধিক অনুসন্ধান আমলে নেয়া হয়েছে। অথচ এসব অনুসন্ধানের জন্য নির্ধারিত সময় ৪৫ দিন দেয়া হলেও  অনেক কর্মকর্তা দীর্ঘায়িত করেন। ফলে কোনো কোনো অভিযোগের অনুসন্ধান বছরও পার হয়।
বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২০২২ সালের নিয়োগ পাওয়ার পর উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও উপ-সহকারী পরিচালক মিলিয়ে চার শতাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন। যাদের দায়িত্বে রয়েছে কোনো না কোনো অনুসন্ধান-তদন্ত।  কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল থাকা সত্ত্বেও সঠিক সময়ে কোনো অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয় না বলে দাবি করেছেন দুদকের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দুদকের কর্মকর্তাদের প্রত্যেকেরই মাসে একটি করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু  ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে দুদক বছর জুড়ে ৪০৪টি মামলা করেছে। অর্থাৎ চার শতাধিক কর্মকর্তা গড়ে একটি করে মামলা করেছেন। এর মধ্যে একজন কর্মকর্তাই রয়েছেন যার হাত দিয়ে তিন বা তার বেশিসংখ্যক মামলা হয়েছে।

যা বলছেন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা: দুদকের অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রমে ধীরগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপ-পরিচালক পর্যায়ের তিন কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেছেন, একেকজন কর্মকর্তার কাছে তিন থেকে পাঁচটির মতো অনুসন্ধান থাকে। এর মধ্যে অনেক পুরনো তদন্ত তো থাকেই। এসব কার্যক্রম চালাতে গিয়ে সময়মতো তথ্য না পাওয়াসহ নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয় তাদের। এ ছাড়া কোনো কর্মকর্তার বদলিজনিত কারণে তার হাতে থাকা ফাইলও আরেকজনের ঘাড়ে আসে। ফলে নানামুখী সমস্যার কারণে সঠিক সময়ে প্রতিবেদন দেয়া সম্ভব হয় না। তবে তাদের বক্তব্য অনুযায়ীও সমস্যা হলে তার সমাধান দুদকের বিধিতে রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো কর্মকর্তা যদি চাপ অনুভব করেন বা একাধিক কাজ করতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়েন সেক্ষেত্রে কমিশনকে অবহিত করতে পারেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, বিধি অনুযায়ী অনেক কাজ থাকলে কমিশনকে জানানোর কথা থাকলেও তা জানানো হয় না। বিষয়টি অনেক সময়ই কমিশন ভালো দৃষ্টিতে দেখে না। এ কারণে কর্মকর্তারা নীরবে সব সয়ে যান। 
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, বিষয়গুলো কর্মকর্তাদের। এখানে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আপনি নতুন কমিশন এলে তাদের কাছে জানতে পারবেন।    

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports