Bangladesh

দুদকে অভিযোগের পাহাড়

সাবেক এক সংসদ সদস্যের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এক মাস আগে শুরু হওয়া অনুসন্ধান কার্যক্রমে খুব বেশি এগুতে পারেনি সংস্থাটি। কারণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। শুধুমাত্র জাতীয় নির্বাচনের হলফনামাই তার সম্বল। এ ছাড়া ব্যাংক, সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়গুলোতে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। এতেও কূল কিনারা হয়নি। গত জুন মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আলোচিত সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। চার মাস পার হয়ে গেলেও তা শেষ হয়নি এবং সংস্থাটি মামলাও করেনি। 

এদিকে গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপর অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়তে শুরু করে দুদকে। সংস্থাটির অভিযোগ কেন্দ্র, হটলাইন ও ব্যক্তিগতভাবে চেয়ারম্যানের দপ্তরসহ প্রতিদিন শতাধিক অভিযোগ আসছে। একইসঙ্গে দুদকও এসব আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। 

দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রথম ধাপে ৭০ সাবেক মন্ত্রী ও এমপির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে নতুন ফাইল। এরই মধ্যে সে সংখ্যা একশ’র বেশি হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এ ছাড়া ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আগে থেকেই প্রায় তিন হাজার অভিযোগ অনুসন্ধান চলমান ছিল। সেগুলোও চলছিল ধীরগতিতে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযুক্তদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিক সময়ে না আসা এবং বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো চিঠির জবাব না পাওয়ায় অনুসন্ধানগুলো শেষ করা যায়নি।  

এদিকে তদন্ত শেষ হওয়া মামলাগুলোও জট লেগে আছে আদালতে। সূত্র বলছে, দুদকের দায়ের করা চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিম্ন আদালতে ৩ হাজার ৩৭৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৪৪টির বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং হাইকোর্টের আদেশে ৪৩০টি মামলা বিচার কাজ স্থগিত রয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালতে ৭৪৬টি রিট, ৯১৪টি ফৌজদারি বিবিধ মামলা, ১ হাজার ২৪৫টি ক্রিমিনাল আপিল ও ৭০৭টি ফৌজদারি রিভিশন মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের গন্তব্য নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। দুদকের কার্যক্রমের মধ্যে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই, অনুসন্ধান, মামলা ও তদন্ত একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হয়। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, এই প্রক্রিয়ায় যেতে হলে সঠিক সময়ে শেষ করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা থাকলেও কমিশনের উচ্চ পদস্থদের ঢিলেঢালা মনোভাবে অনুসন্ধানের ফাইল স্তূপে পরিণত হয়। ফলে শঙ্কায় পড়ে যায় পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমিশনের আন্তরিকতার অভাব থাকলে চলমান অনুসন্ধান সঠিক সময়ে শেষ করা সম্ভব নয়। আবার কর্মকর্তাদের দক্ষতা এবং জনবল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। তাদের দাবি, দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান কমিশনারসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে অনুসন্ধান ও তদন্তে হস্তক্ষেপ করার যেকোনো ফাইলের গন্তব্য অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়।

এ বিষয়ে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (প্রসিকিউশন) মো. মঈদুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, কমিশন আন্তরিক হলেই সঠিক সময়ে সব অনুসন্ধান শেষ করতে পারে। কিন্তু আন্তরিক না হলে অনুসন্ধান-তদন্ত কোনোটাই সময়মতো শেষ করতে পারবে না। এক-এগারোর আমলের মামলা এখনো তদন্তাধীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ জটিলতা ও নিজস্ব প্রসিকিউশন না থাকায় ১৬-১৭ বছর আগের মামলা এখনো ঝুলে আছে। 

দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে কী করণীয় জানতে চাইলে মঈদুল ইসলাম বলেন, যে বিশেষ জজ আদালতে দুদকের মামলা কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাতে সারা বছর দুদকের মামলা থাকে না। বেশির ভাগ সময়ই খুনের মামলা এই মামলা ওই মামলা থাকে। ফলে বিচার বিভাগে দুদকের জন্য আলাদা একটি আদালত থাকার সুপারিশ করছি আমি। একইভাবে  উচ্চ আদালতেও আলাদা আপিল আদালত থাকার সুপারিশ করছি। বিশেষ করে দুদকের মামলা দুদকের আদালতেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা না থাকায় বছরে ৯ শতাংশ মামলাও নিষ্পত্তি করতে পারে না।  

নেই স্থায়ী প্রসিকিউশন: আগামী মাসেই একুশ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে দুদক। কিন্তু এখনো আদালতে মামলা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নেই নিজস্ব প্রসিকিউটর। তবে লিগ্যাল অ্যান্ড প্রসিকিউশন উইং রয়েছে। অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া প্রসিকিউটর দিয়েই বিচার কাজ পরিচালনা করা হয়। দুদক আইনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে কমিশনের নিজস্ব একটি স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট থাকার কথা বলা হলেও এখনো বিধিই তৈরি করতে পারেনি দুদক। আইনের ৩৩ ধারায় বলা আছে, কমিশনের তদন্ত কাজের জন্য বিশেষ জজ আদালতে বিচারযোগ্য মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে কমিশনের নিজস্ব একটি স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট থাকবে। ওই প্রসিকিউশনের নিয়োগ ও চাকরি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে। এই ধারায় নিয়োগ পাওয়া প্রসিকিউটররা পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে গণ্য হবেন। অথচ কমিশন গঠনের ১৯ বছর পার হলেও দুদকের নিজস্ব আইনজীবী প্যানেল গঠন করা হয়নি। সরকারি দলের আইনজীবীদের দিয়ে মামলা পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকার দুদককে সব ধরনের ক্ষমতা দিয়েছে, কিন্তু কমিশন এ-সংক্রান্ত একটি বিধিই প্রস্তুত করতে পারেনি।

এ বিষয়ে সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম বলেন, স্থায়ী প্রসিকিউশন থাকার বিষয়ে আইনেই রয়েছে। কিন্তু দুদক এত বছরেও সেটি করেনি। যেসব আইনজীবী দিয়ে দুদকের মামলা চালানো হয় তারা দুদক ছাড়াও নিজেদের মামলা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে এখানে সমন্বয়ের একটি ঘাটতি রয়েই গেছে। তাই স্থায়ী প্রসিকিউশন হওয়াটা এখন সময়ের দাবি। 

সার্বিক বিষয়ে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, দুদকের বর্তমান যে কমিশন দায়িত্বে রয়েছে সেটা পরিবর্তনের এখতিয়ার সংস্কার কমিশনের নেই। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এই মুহূর্তে দুদককে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। 

অনুসন্ধান-তদন্তের আইন বিধি নিয়ে তিনি বলেন, আমরা সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে এ বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করেছি। অনুসন্ধান ও তদন্তের যে প্রক্রিয়া আইন এবং বিধি ধারা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা কি দুর্নীতিকে সুরক্ষা দেয়া নাকি প্রতিকার করা- বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে ধরনের প্রক্রিয়া রয়েছে তার আলোকে করা যায় কিনা সেটাও অনুসন্ধান করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন ইফতেখারুজ্জামান।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor