Science & Tech

দূর আকাশে প্রাণের আভাস: সত্য নাকি বিভ্রান্তি?

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এমন এক রহস্যময় গ্রহে প্রাণের আভাস পাওয়ার দাবি করেছেন। এটা যদি সত্য হয়, তাহলে তা হতে পারে মানব ইতিহাসে এক বিশাল আবিষ্কার। গ্রহটির নাম ‘K2-18b’। 

গ্রহটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১২০ আলোকবর্ষ দূরে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি  এটি সম্ভবত পুরোপুরি পানিতে ঢাকা ( Hycean world) এবং হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল রয়েছে।

এপ্রিল মাসে প্রকাশিত এক গবেষণায় দাবি করা হয়, এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে এমন দুটি জৈব-সম্পর্কিত গ্যাস পাওয়া গেছে—ডাইমিথাইল সালফাইড (DMS) এবং ডাইমিথাইল ডিসালফাইড (DMDS) যেগুলো দিয়ে সাধারণত পৃথিবীতে জীব তৈরি হয়। এ আবিষ্কার বিজ্ঞানী মহলে চাঞ্চল্য তৈরি করে। তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আরও কয়েকটি গবেষণা সেই দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।


যুক্তি ও প্রতিক্রিয়া
অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. লুইস ওয়েলব্যাংকস জানান, এপ্রিলের ওই গবেষণায় ব্যবহৃত তথ্যের ভিত্তিতে যে পরিমাণ জোরালো প্রমাণ দেখানো হয়েছিল, তা যথেষ্ট সন্দেহজনক। তার মতে, এত কম তথ্য দিয়ে এত বড় দাবি করা এক ধরনের অতিরিক্ত অনুমান।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক, রাফায়েল লুক ও মাইকেল ঝাং, ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সব তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেন, ওই গবেষণার তথ্যে অনেক ‘নয়েজ’—অর্থাৎ ভুল বা অস্পষ্ট তথ্য  ছিল। তারা দাবি করেন, DMS বা DMDS থাকার যথেষ্ট প্রমাণ তারা পাননি। বরং তারা ইথেন (ethane) নামের একটি গ্যাস শনাক্ত করেন, যা জীবনের ইঙ্গিত দেয় না।

মৌলিক সমস্যা ছিল গবেষণার মডেল বা বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে। গবেষকেরা একটি সময় একেকটি গ্যাস ধরে মডেল তৈরি করেছেন। কিন্তু অন্য সম্ভাব্য রাসায়নিক পদার্থগুলো বাদ রেখেছেন। ফলে ফলাফল ছিল একতরফা ও অসম্পূর্ণ। যখন মডেলটি বিস্তৃত করে সব সম্ভাব্য গ্যাস বিবেচনায় আনা হয়, তখন দেখা যায়, DMS বা DMDS-এর উপস্থিতির তথ্য আসলে অদৃশ্য হয়ে যায়।

মূল গবেষকদের পাল্টা বক্তব্য
তবে মূল গবেষণা দলের নেতা ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিকু মাধুসূধন জানান, নতুন গবেষণাগুলো গঠনমূলক সমালোচনা হিসেবে কাজ করছে এবং তাদের নিজেদের পরবর্তী গবেষণাতেও আগের দাবিগুলোর ভিত্তি আবার খতিয়ে দেখা হয়েছে। তারা ৬৫০টি ভিন্ন গ্যাস পরীক্ষা করেছেন, এবং এখনো মনে করেন DMS একটি সম্ভাব্য প্রার্থী গ্যাস।

 সমালোচকরা বলছেন, এই নতুন গবেষণাতেও আগের ভুল বিশ্লেষণ পদ্ধতি ঠিকভাবে স্বীকার করা হয়নি। বরং আগের অতিরিক্ত দাবি এখন অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে।

বিজ্ঞান এগোচ্ছে ধাপে ধাপে
যদিও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি, তবুও বিজ্ঞানীরা একমত যে, এই ধরণের বিতর্কই বিজ্ঞানকে এগিয়ে নেয়। এক গবেষক বলেন, আমরা এখনো ঠিক জায়গায় পৌঁছাইনি। তবে আমরা জীবনের ইঙ্গিত খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে আছি।

এখনো ‘সিলভার বুলেট’ অর্থাৎ নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু গবেষণার ধারা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমরা হয়তো সত্যিই কোনো গ্রহে প্রাণের চিহ্ন খুঁজে পাবো—এমনটাই আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto