Bangladesh

দেবে যাচ্ছে সেন্টমার্টিন!

অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গড়ে ওঠা স্থাপনা গিলে খাচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে। স্বচ্ছ পানি ও চারপাশজুড়ে প্রবাল পাথরবেষ্টিত নারিকেল জিঞ্জিরায় অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকদের যাতায়াত, তাদের অসচেতনতা, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ ও পরিবেশ দূষণের কারণে সেখানকার প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সচেতন মহল। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেন্টমার্টিনে যেকোনো ধরণের স্থাপনা গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করে গড়ে উঠছে একের পর এক রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্ট। এসব অব্যবস্থাপনার কারণে দ্বীপটির পরিবেশ ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে দ্বীপের শৈবাল-প্রবাল, ঝিনুক, শামুক, সামুদ্রিক কাছিম, লাল কাঁকড়াসহ নানা ধরণের জলজ প্রাণী।’

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) বলছে, সেন্টমার্টিনে অপরিকল্পিত স্থাপনা বন্ধে সরকারিভাবে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোনো অব্যবস্থাপনামূলক স্থাপনা যেন দ্বীপে না হতে পারে সে ব্যাপারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গেজেটও তৈরি করা হয়েছে।

কউক চেয়ারম্যান কমডোর মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, ‘গবেষণা করে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপে যথেষ্ট অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি হয়েছে। যার কারণে দ্বীপটি আস্তে আস্তে মাটির নিচে দেবে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আর এ ধরনের কোনো স্থাপনা করতে না দেওয়ার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও কউকের সমন্বয়ে আমরা একটি গেজেট বের করেছি।’ 

তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য সেন্টমার্টিনে কোনো ধরনের স্থাপনা করবে না। সেন্টমার্টিনের জন্য আমরা একটা মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) করেছি। ইকো সিস্টেমে সেখানে কীভাবে স্থাপনা করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করছি এবং কীভাবে পর্যটকদের জন্য ভালো বিনোদনের ব্যবস্থা করা যায় ও  টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে দ্বীপকে সাজানো যায় তা নিয়েও আমরা পরিকল্পনা করছি।’

কউক চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘মালদ্বীপের রিসোর্ট চেইনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত পরামর্শ নিয়ে আমরা এসব কর্মযজ্ঞ শুরু করবো।’

কমডোর মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে বেসামালভাবে পর্যটক গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদি পর্যটকের আধিক্য সেন্টমার্টিনকে ময়লাযুক্ত ও দূষিত করে তবে কয়েকবছর পর দেখা যাবে সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। এ ছাড়াও সামুদ্রিক কাছিমগুলো ডিম পাড়ার জন্য নিরাপদ জায়গা চায়। যেখানে মানুষের সমাগম নেই সেখানে কাছিমগুলো ডিম পাড়ে। কিন্তু পর্যটকদের অবাধ আনাগোনার কারণে কাছিমগুলো ডিম দিতে পারে না। ঠিক একইভাবে অন্যান্য জলজ, স্থল এবং জীববৈচিত্র্যের জন্যেও ক্ষতি হবে। কাজেই সেন্টমার্টিনে ট্যুরিজম ব্যবস্থাকে সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। এ ব্যাপারে কাজ চলছে।’

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সেন্টমার্টিনে ৬৮ প্রজাতির প্রবাল, ১৫১ প্রজাতির শৈবাল, ১৯১ প্রজাতির মোলাস্কা বা কড়িজাতীয় প্রাণী, ৪০ প্রজাতির কাঁকড়া, ২৩৪ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৫ প্রজাতির ডলফিন, ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ২৮ প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী, ১২০ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১৭৫ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২ প্রজাতির বাদুড়সহ নানা প্রজাতির প্রাণীর বসবাস ছিলো। এসব প্রাণীর অনেকগুলোই এখন বিলুপ্ত বা বিলুপ্তির পথে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এ জীববৈচিত্র্য। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor