Bangladesh

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ক্রেতাদের

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ভোক্তাদের জীবন ওষ্ঠাগত। বাজারে চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, সিলিন্ডার গ্যাস, পিয়াজ, শাক-সবজি থেকে শুরু করে এমন কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নেই, যার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। ধারদেনায়ও সংসার চালাতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণহীন ও লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। 

বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মাসের নির্দিষ্ট আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। যা আয় করছে তার পুরোটাই জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কোনো ভাবে আয় ও ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারছেন না তারা। স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির জন্য ব্যয় করার মতো অর্থ তাদের হাতে থাকছে না।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির ফলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সাধারণ ক্রেতাদের। 

তিন মাস ধরে মাছ খাই না। কিনবো কেমনে? দাম বেশি। আয় রোজগার কমলেও সব জিনিসের দাম বাড়ছে। যে কারণে ছেলে-মেয়েদের ভালো খাওয়াতে পারি না। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে এভাবেই নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন খায়রুল নামে এক রিকশাচালক। 

লিয়াকত আলী। শুক্রবার বাজার করতে গিয়ে কি যেন একটা হিসাব মেলাচ্ছেন। পকেট থেকে টাকা বের করে হাতে থাকা বাজারের লিস্ট দেখে নিজেই নিজের সঙ্গে কথা বলছেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলেন, এভাবে আর বাঁচা যায় না। প্রতিদিনই বাজারে নিত্যনতুন দাম। আগের দিন যেই দামে পণ্য কিনেছিলাম, আজকে এসে দেখি তা আর নেই। দাম বেড়ে গেছে। বাসা থেকে হিসাব করে যেই টাকা নিয়ে এসেছিলাম, সেই টাকায় সব কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এখন যা না কিনলে নয়, তাই নিয়ে বাসায় ফিরবো। ক্ষোভ প্রকাশ করে বেসরকারি এই চাকরিজীবী বলেন, নতুন বছর শুরু হতে পারেনি বাড়িওয়ালা বাসা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন, বাচ্চার স্কুলে ভর্তির ফিও বাড়তি এরপর বাজারে অরাজকতা। বেতনের অল্প টাকায় সবকিছু সামাল দেয়া আর সম্ভব হচ্ছে না। পিঠ একদম দেয়ালে ঠেকে গেছে। 

হারুনুর রশিদ নামে আরেক ক্রেতা বলেন, সবকিছুরই দাম বাড়তি। শীতের মৌসুমে মানুষ যে একটু সস্তায় সবজি কিনে খাবে সেই উপায়ও নেই। গত সপ্তাহে করল্লা কিনেছি ৭০ টাকায়, এখন তা ১০০ টাকা। বাজারে এসে পণ্যের দাম শোনার পর মাঝে মাঝে খুব অসহায় লাগে। 

তবে সবজি বিক্রেতা মো. কবির হোসেন বলেন, গত দুইদিন বৃষ্টি হয়েছে। অনেক কৃষকের সবজি নষ্ট হয়েছে, তাই সব সবজির দাম বেড়ে গেছে। 

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যাঁতাকলে নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি পিষ্ট হচ্ছেন মেস বা হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীরাও। সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মাইনুল হোসাইন বলেন, আমরা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই বিভিন্ন মেসে থাকি। টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতাম। সেটাও চলে গেছে। কেন চলে গেল? এর জবাবে মাইনুল বলেন, আমরাও তো বুঝি। কারণ সবকিছুর দাম বাড়লেও ছাত্রের বাবার তো আয় বাড়েনি। তাই টিউশনি কন্টিনিউ হয়নি। এর ওপর দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে আমরা একেবারে নাজেহাল হয়ে পড়েছি। আগের তুলনায় বর্তমানে প্রতি মাসে আরও এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি লাগছে। যা পরিবার থেকে দেয়া অনেকের জন্যই বেশ কষ্টকর।

একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা আফরোজ বলেন, খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের চড়া মূল্যের বিরূপ প্রভাব পড়েছে অতিদরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের ওপর। আলু খাবে তারও উপায় নেই। কারণ ভরা মৌসুমেও আলুর কেজি ৫০ টাকার উপরে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যাঁতাকলে অসহায় মানুষের দুঃখের কথা বলার কোনো জায়গাও নেই।

ঢাকার বাসিন্দা শাহনাজ বেগম বলেন, হিসাব করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি। তাও মাসে বিল আসে দেড়- থেকে দুই হাজার টাকা। টিভি, ফ্রিজ তো বন্ধ করে রাখতে পারি না। ঢাকার আরামবাগের এই বাসিন্দা জানান, নানারকম কাটছাঁট করার পরেও গত এক বছরে তার সাংসারিক খরচ দেড়গুণ বেড়ে গেছে। কারণ বাজারের প্রতিটা জিনিসের দাম বেড়েছে। এক বছর আগেও যে দামে আটা-চিনি কিনতাম, এখন তার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। চাল, ডাল, তেল- প্রতিটা জিনিসের দাম বেড়েছে। আমাদের আয় তো সেই হিসাবে বাড়েনি। খরচ কমাতে সংসারের কোন আইটেমটা বাদ দেবো? এদিকে ছেলেমেয়ের স্কুলের পড়ার খরচ বেড়েছে, যাতায়াত খরচ বেড়েছে, বাড়িভাড়া বেড়েছে। 

বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেয়া মূল্যে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করছেন না। সরকারি সংস্থাগুলো পণ্যের যে মূল্য প্রকাশ করে তার সঙ্গেও বাজারে মিল নেই। চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যেও রয়েছে গরমিল। পণ্যমূল্যের তালিকা প্রতিটি বাজারে প্রতিদিন হালনাগাদ করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলছেন, জিনিসপত্রের দাম বেশি বাড়লে মানুষের কষ্ট বাড়ে এবং তাদের জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মূল্যস্ফীতির যে রিপোর্ট, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, জিনিসপত্রের দাম এমনভাবে বাড়ছে যে, মানুষ পাল্লা দিয়েও খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না।

খলিল মিয়া ঢাকার কমলাপুরে নিম্নআয়ের এলাকায় বসবাসকারী প্রান্তিক আয়ের মানুষ। জীবিকার তাগিদে বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় আসেন পরিবার- পরিজন নিয়ে। পরিবারে সদস্য সংখ্যা সাতজন। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। আয়ের উৎস ফেরি করে কিছু আচার ও খাবার বিক্রি। আর তা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। আগে সারাদিনে তার লাভ হতো চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা। এখন একই কাজ করে দিনে সাতশ’ থেকে আটশ’ টাকা আয় করেন। আয় বাড়লেও সংসার চালাতে প্রতি মাসেই ধার করতে হয় তাকে। গ্রামে এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধ, বাবার চিকিৎসা, দুই শিশুর খরচসহ প্রতি মাসে পরিবারের জন্য তার বারো থেকে পনেরো হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে লোকমানের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ পড়েছে মাংস। মাছ খান দুই সপ্তাহে একবার। বেশির ভাগ দিন রাতের খাবার শুধু ডাল-ভাত দিয়েই সারতে বাধ্য হচ্ছেন।

সরজমিন ধানমণ্ডির রায়ের বাজার: বাজারটি ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বাঁধাকপিও। এ ছাড়া প্রকারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। তুলনামূলক সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে মুলা ও পেঁপে ৪০ টাকায়। আর বরবটি ১২০ টাকা, শালগম ৪০, লাউ ৫০-৮০ টাকা প্রতি পিস, শসা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিতে। এক আঁটি লাল শাক বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা, ডাঁটা শাক ২০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, মেথি শাক ১০ টাকা, লাউ শাক ৩০ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আজ মানভেদে পিয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৪৫ টাকা, দেশি রসুন ২৬০-২৮০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, ভারতীয় আদা ২২০, চায়না আদা ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

মোহম্মদপুর টাউনহল বাজারেও একই অবস্থা। বাজারটিতে ভালো ইলিশ ওজন অনুযায়ী ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা, রুই ৪০০ থেকে ৭০০, কাতল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দের বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, কক ২৬৫ থেকে ২৮০, লেয়ার ২৮০ টাকা ও গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির লাল ডিম ১৩৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১৩০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে। মুদি দোকানেও অস্থিরতা। এক কেজি ছোট মসুর ডাল ১৩৫, মোটা মসুর ডাল ১১০, মুগডাল ১৭৫, খেশারি ডাল ১১০, বুটের ডাল ১০০, ছোলা ১১০, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৩, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫, খোলা চিনি ১৪০, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ এবং খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে চলতি সপ্তাহে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে পিয়াজ। প্রতি কেজি পিয়াজ ১শ’ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 

এদিকে রাজধানীর মিরপুর-১ এর মাংসের বাজারে এসেছেন রুনা বেগম। মুরগির উচ্ছিষ্ট গিলা-কলিজা, চামড়া ও পা কিনতে এসেছেন তিনি। রুনা বলেন, সবকিছু মিলিয়ে ২ কেজি নিছি। ২৪০ টাকা রাখছে। সব সময় তো মাংস কিইন্না খাইতে পারি না। এগুলো নিয়ে গিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে পাক (রান্না) করে খাবো। বর্তমানে মুরগির মাংস ২১০-২২০ টাকা কেজি। এত দাম দিয়ে তো আমরা কিনে খাইতে পারি না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাজার করে ঠিকমতো খাবো কেমনে। সব জিনিসের অনেক দাম। ১০০ টাকার নিচে বাজারে কোনো সবজি নাই। কি খায়ে বাঁচুম? আমাদের গরিবের তো মরণ। 
মিরপুর-১ এর বাজারে সরজমিন দেখা যায়, মানভেদে বয়লার মুরগির উচ্ছিষ্ট পাখনা বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া পরিষ্কার গিলা ২৩০-২৪০ টাকা, কলিজা ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, ময়লা সহকারে গিলা ও কলিজা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, চামড়া ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, গলা ১৬০ টাকা, নলা (হাড্ডি) ৫০-৬০ টাকা, পা ১৬০ টাকা ও দেশি মুরগির পা ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যায়। 

কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, নির্বাচনের আগে মাংসের দাম কমেছিল। এখন হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। দাম বাড়ার কারণে মানুষের সামর্থ্যরে দিকে টান পড়েছে। অধিক মূল্যের কারণে মানুষের জীবনযাত্রা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মানুষ এখন কঠিন বাস্তবতার মুখে। জীবিকা নির্বাহ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্রয়সীমার মধ্যে থাকলে মানুষ খেয়ে পরে বাঁচতে পারবে। ক্রয়ক্ষমতা মানুষের নাগালের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d