Bangladesh

দেয়ালে পিঠ ব্যবসায়ীদের

যতই দিন যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। তাঁরা বলছেন, দেয়ালে তাঁদের পিঠ ঠেকে গেছে। এ অবস্থা উত্তরণে তাঁরা বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের শরণাপন্ন হয়েছেন। দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসাবাণিজ্য গতিশীল করতে সঠিক কোনো নির্দেশনা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। সে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছে নয় দফা দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। বলেছেন, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিতে বিক্রি কমে গেছে, ঋণের উচ্চ সুদহারে বিনিয়োগ হচ্ছে না। চাহিদামতো ঋণপত্র (এলসি) খোলা যাচ্ছে না, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে। নতুন গ্যাস সংযোগে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সুপারিশে বিভিন্ন পণ্যের ওপর কর/মূসক বাড়ানো হয়েছে। ফলে বর্তমানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি উত্তরণে ব্যবসায়ীরা ‘এক্সিট পলিসি’ চেয়েছেন গভর্নরের কাছে। এজন্য সার্কুলার জারি করার দাবিও জানান তাঁরা। বৃহৎ শিল্পের এক্সিটের জন্য ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে এক বছরের মনিটরিয়ামসহ ১২ বছর এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের এক্সিটের জন্য ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে এক বছরের মনিটরিয়ামসহ ১৫ বছর সময় চেয়েছেন। ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যবসায়ীরা বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রির অনুমতি চান গভর্নরের কাছে। রবিবার বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজেরে নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের একটি দল বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছে এসব দাবি তুলে ধরেন।

ঋণখেলাপির সময় তিন মাস না করে আগের মতো ছয় ও নয় মাস করার আবেদন জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একইভাবে বড় শিল্পঋণের জন্য ১ দশমিক ৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট, দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ পরিশোধের জন্য ১০ বছর সময় চেয়েছেন তাঁরা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পঋণ পরিশোধের জন্য ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট, দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৫ বছর সময় চেয়েছেন। সিঙ্গেল কোম্পানির সিঙ্গেল আইডেনটিটি চান ব্যবসায়ীরা। আন্তর্জাতিক প্র্যাকটিস হচ্ছে, কেউ যদি গ্রুপ অব কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন করে তবে তাদের গ্রুপ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে গ্রুপ হিসেবে নিবন্ধন না করা হলেও তিন-চার জন পরিচালক কমন হলে তাদের গ্রুপ হিসেবে দেখা হয় এবং কোনো একজন পরিচালক কোম্পানি থেকে বেরিয়ে গেলেও তিনি অন্য কোথাও যদি কোনোভাবে সিক হয়ে যান তবে তার লায়াবিলিটি নিতে হয়। এটার একটি ক্লারিফিকেশন দরকার। প্রণোদনার অর্থ দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রদানের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গভর্নরকে তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট করতে নয় থেকে ১২ মাস লাগে। অর্থছাড় হতে লাগে আরও আট থেকে ১২ মাস। ব্যাংকের সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার ফান্ডেড ১৫ এবং ননফান্ডেড ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এখানে টাকার অবমূল্যায়নও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। এটা আগের মতো ২৫ শতাংশে রাখা উচিত। ঋণ খেলাপির ক্ষেত্রে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, মার্চ থেকে কোনো গ্রাহক তিন মাস কিস্তি না দিলে খেলাপি হয়ে যাবেন। তাই এটাকে তিন মাসে না এনে ছয় মাস রাখার প্রস্তাব করেছেন তাঁরা। বর্তমানে ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশের বেশি। উৎপাদনমুখী শিল্পের জন্য এ সুদহার কমানো অথবা আর্থিক সহায়তা প্রদানের উপায় চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করার উপায় খুঁজে বের করার জন্য গভর্নরের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সিএমএসই খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। সিএমএসই খাত টিকিয়ে রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা মনে করি, সিএমএসই খাতের বিশেষ তহবিল এবং নিম্ন সুদের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ খাতে একটি জেলা বা একটি ক্লাস্টারকে পাইলট ধরে ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে অর্থায়ন করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মনে করেন সুদহার বাড়ালেই মূল্যস্ফীতি কমবে। ব্যবসায়ী হিসেবে আমার কাছে মনে হয় না সুদহার বাড়ালেই মূল্যস্ফীতি কমবে। দেশের ৮০ শতাংশের বেশি মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকা ব্যাংকব্যবস্থার বাইরে। ৭০ শতাংশ মানুষ ব্যাংকেই যায় না। সেখানে সুদহার বাড়ালে কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে। বরং সুদহার বাড়লে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। আমাদের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি, জ্বালানি পুরোটাই আমদানি করতে হয়। নতুন করে কোনো বিনিয়োগ হবে না।’ এ বিষয়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার সভাপতি আবদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি হতাশ, সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিশেষ করে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর ফলে আমাদের ব্যবসাবাণিজ্য ও জীবনযাত্রায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। গভর্নর আমাদের বলেছেন ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভর না করে প্রতিষ্ঠানকে করপোরেটাইজ করতে। এটা ভালো দিক, কিন্তু এত দ্রুত কীভাবে সম্ভব। ঋণ খেলাপি করার সময় ৯০ দিনের পরিবর্তে ১৮০ দিন করার প্রস্তাবের সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব না দিয়ে গভর্নর বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। এটা আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব কি না জানি না। কারণ, আইএমএফের পরামর্শে ঋণ খেলাপি করার সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। ঋণের সুদহার কমানোর বিষয়টিও বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন গভর্নর। কিন্তু কবে নাগাদ সেটা নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor