Bangladesh

দেশের সম্পদ বিক্রি করে জাতির জনকের কণ্যা ক্ষমতায় যেতে চায় না : প্রধানমন্ত্রী

পদ্মা সেতু নির্মাণে আগে যারা কথায় কথায় খবরদারি করতো, সেই মানসিকতাটা বদলেছে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে যে কী মধু, এখন যদি দেখেন খোঁজ পাবেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে কারো কাছে মাথা নত করে নয়। নিজের টাকা দিয়ে নির্মিত, পদ্মা সেতু বাঙ্গালী জাতীর গর্বের সেতু। টাকা দিয়ে এর মূল্যায়ন করা যাবে না। তিনি আরো বলেছেন, দেশের সম্পদ বিক্রি করে জাতির জনকের কণ্যা ক্ষমতায় যেতে চায় না। পদ্মা সেতু নির্মাণে দেশের জনগনের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের দ্বার উম্মোচিত হয়েছে। আওয়ামী সরকার ২০০১ সালে পদ্মা সেতু নির্মানের জন্য মাওয়ায় কাজ শুরু করে। ক্ষমতায় আসতে না পারায় করা সম্ভব হলো না। টাকা দিয়ে এর মূল্যায়ন করা যাবে না। গতকাল বিকেলে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতু নির্মান প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানের সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ওপর প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর খবরদারি করার মানসিকতা বদলে দিয়েছে এমন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে যারা কথায় কথায় আমাদের ওপর খবরদারি করতো; আর ভাবখানা ছিল যে, তারা ছাড়া বাংলাদেশ চলতেই পারবে না। তাদের সেই মানসিকতাটা বদলে গেছে। এখন বাংলাদেশ শুনলে সমীহ করে আন্তর্জাতিকভাবে।’

প্রধানমন্ত্রী সমাবেশে পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত সকলকে ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে যারা জমি দান করেছেন তাদের প্রতি কৃতঙ্গতা জানান। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘অনেক ঝড় ঝাপটা পার করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে হয়েছে। সাধারণত কোনো প্রকল্প শেষ হলে সেই শেষ হওয়ার অনুষ্ঠান হয় না। কখনো করা হয় না, শেষ হয়ে যায়। তবে অনেক ঝড় ঝাপটা পার করে, অনেক বাধা অতিক্রম করে পদ্মা সেতুু নির্মাণ করতে হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর সঙ্গে যারা জড়িত, যারা জমি দিয়েছেন, তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাতে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। এটি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানোর অনুষ্ঠান।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে জাতি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করলো, সে জাতি কেন মাথা নিচু করে চলবে? অকুতোভয় জাতিকে একেবারেই মর্যাদাহীন করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি জানান, এক ব্যক্তির পদে থাকার লোভের কারণে সেতু নির্মানের শুরুতে অর্থ ছাড়ে বিশ্বব্যাংক সরে যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা পদ। সেটা হলো একটা ব্যাংকের এমডির পদ। এ পদটা নিয়ে যত জটিলতা, যত সমস্যা। এখন ব্যাংকে যদি আইন থাকে, একজন ২০ বছর থাকতে পারবে। এরই মধ্যে তার বয়স ৭০ হয়ে গেছে। অতিরিক্ত সময় (এমডি পদে) থেকে ফেলেছেন। তারপরও তিনি সেখানে থাকেন কী করে? একজন নামিদামি নোবেল বিজয়ী সামান্য একটা এমডি পদের জন্য লালায়িত কেন? এই প্রশ্নের উত্তর কখনো পেলাম না।’

গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে কী আছে- এমন প্রশ্নও রেখেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যে বড় দেশে তাকে (ড. ইউনূস) প্রমোট করে, সে দেশের রাষ্ট্রদূত আমার অফিসে আসেন। আমার অফিসারদের ধমকান। বলেন, এই এমডির পদ না থাকলে এই টাকা (পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন) বন্ধ হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘এই এমডি পদের জন্য আমার কাছে তদবির করতে হিলারি ক্লিনটন দুইবার ফোন করলেন। শেরি ব্লেয়ার ফোন করলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি আসলো। পৃথিবীর অনেকেই আসলো। আমি শুধু জিগ্যেস করলাম, এই এমডি পদে কী মধু আছে?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরশাদ ব্যাংক করলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরকে এনে এমডি হিসেবে বসালেন। সেই প্রফেসর আর ওই চেয়ার ছাড়তে চান না। আমাদের অর্থমন্ত্রী মুহিত (আবুল মাল আবদুল মুহিত) ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী উনার (ড. ইউনূস) কাছে গিয়ে বললেন, আপনি আর এমডি থাকবেন কোন, আপনি বরং এখানে উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন। তাতেও তিনি রাজি না। তিনি মামলা করলেন সরকারের বিরুদ্ধে। দুটি মামলা। সবাই ঘাবড়ে গেলো। আমি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বললাম, এটা তো তেমন কিছু না। খালি আইনটা উপস্থাপন করবেন। কোর্ট যদি পারে কারো বয়স বাড়াতে বাড়াক। পরে উনি মামলায় হেরে গিয়ে আরো ক্ষেপে গেলেন। আর তার ওই রাষ্ট্রদূতের আনাগোনা তো চলছেই। বার বার পিএমওতে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে) আসেন আর একই কথা শোনান। পরে একজন আন্ডার সেক্রেটারি আসলেন, ওই একই কথা বললেন। এর পর আমি বললাম, আর কেউ আমেরিকা থেকে আসলে আমি দেখা করবো না, কথা বলবো না। পরে আমি আর কারো সঙ্গে দেখা করিনি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও একই প্রশ্ন। আমি খালি বলেছি, ওই পদে কী মধু আছে? এখন একটা কথা বলি। এমডি পদে যে কী মধু, এখন যদি দেখেন খোঁজ পাবেন। শ্রমিকরা মামলা করলে, গ্রামীণ ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট আসলে আরও তথ্য বের হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালী জাতিকে মাথা উঁচু করে চলতে শিখিয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি দেশকে একটি আতœমর্যাদাশীল জাতি, রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, গ্যাস বিক্রি করে ক্ষমতায় যেতে স্বীকার করেননি বলে ২০০১ সালে সরকার গঠন করতে পারেনি। আমি বলেছি, দেশের চাহিদা পূরণ করে রিজার্ভ থাকবে তার পর গ্যাস বিক্রি হবে। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার ভাগ্যে যা হবার তা হলো। জাতির জনক দেশ বিক্রি করে ক্ষমতায় যেতে চায়নি। আমিও চাইনি। তাই সরকার গঠন করতে পারলাম না। ২০০১ সালে ভিত্তি প্রস্তর করেও ক্ষমতায় আসতে না পারায় নির্মাণ কাজ করতে পারলাম না।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আরো বক্তব্য রাখেন প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মনজুর হোসেন। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d