Hot

দেশের সর্বত্রই দ্বিতীয় স্বাধীনতার ঢেউ, ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে গণমাধ্যম!

‘স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়/দাসত্ব-শৃংখল বল কে পরিবে পায় হে, কে পরিবে পায়’ (রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়)। সত্যিই দীর্ঘ ১৮ বছর বাংলাদেশের মানুষ হিন্দুত্ববাদী ভারত ও তাদের পুুতুল শেখ হাসিনার দাসত্ব-শৃংখলে আবদ্ধ ছিল। শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানে জাতি দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারিণী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন ভারতে। ১৮ বছরের দুর্বিষহ জুলুম-নির্যাতন ও বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে ৬ আগস্ট বাংলাদেশের পূর্ব দিগন্তে নতুন সূর্য উঠেছে। দেশের ১৭ কোটি মানুষ দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত। ঈদের খুশির মতো আনন্দে আত্মহারা মানুষ। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ গণমাধ্যমের গায়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতার নতুন সূর্যের রোদ যেন পড়েনি। তারা ‘কিসে পতিত হাসিনা ও দিল্লির দাদাদের সুখ’ সেটা প্রচারেই প্রাধান্য দিচ্ছে।
হাসিনা রেজিমের ১৮ বছরের হাজারো মানুষের জীবন বলিদান, শত শত গুম, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন, লাখো মানুষের ঘর ছেড়ে পালিয়ে থাকা, জেল-জুলুম, প্রকাশ্যে পুুলিশের গুলিতে শত শত মানুষের প্রাণদানের চিত্র মিডিয়াগুলোর খবরে গুরুত্ব পায়নি, পাচ্ছে না। তবে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে ফুল দিতে না দেয়া, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করছে। এমনকি বিদেশ থেকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ‘বাংলাদেশে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে ভারতের হস্তক্ষেপের’ আহবান তাদের ব্যথিত করেনি। উল্টো গণমাধ্যমগুলো হিন্দুত্ববাদী মোদি এবং ভারতের কিছু গণমাধ্যমের মতোই বাংলাদেশের নতুন সরকারকে খাটো করার অপচেষ্টা করছে। মোদি গং বুঝে গেছে, রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশে আর হাসিনার মতো ‘নাচের পুতুল’ বসিয়ে ‘ভারতের অঙ্গরাজ্য’ বানানো সম্ভব নয়। তাই চানক্যনীতির ভারত সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বকীয়তাকে ধ্বংস করতে চায়। আর তাদের ক্রীড়নক হিসেবে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যম ‘অগ্রণী ভূমিকায়’ নেমেছে। দিল্লির তাবেদার একটি ইংরেজি ও একটি বাংলা পত্রিকা (হাসিনা-বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত) এবং পতিত হাসিনার শাসনামলে বৈধ-অবৈধ পথে বিপুল অর্থবিত্ত কামানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত কয়েকটি গণমাধ্যম মোদি ও পতিত হাসিনার তাবেদারিতে কোমর বেঁধে নেমেছে।
গতকালও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, পতিত হাসিনা সরকারের কারণে এতদিন হয়তো গণমাধ্যম গণমানুষের পক্ষে লিখতে পারতো না। তারা শাসকদের চাপে ছিল। এখন আশা করি, তারা ভূমিকা পালন করবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কিছু গণমাধ্যমের সহায়তা পেয়েছি।
সিবিপির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানে পতিত স্বৈরাচার ও স্বৈরাচারী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, গণঅভ্যুত্থানের সফলতা রক্ষা করে পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জন না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। নানা অপশক্তি এ সফলতা তাদের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাইবে, এ বিষয়ে সতর্ক থেকে এগোতে হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নতুন সূর্য উদয়ের ঢেউ দেশের বেশির ভাগ গণমাধ্যমে লাগেনি। প্রিন্ট মিডিয়াগুলো হাসিনা রেজিমের পতনে ফলাও করে খবর প্রচার করলেও ৫ আগস্ট বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর খবর-অনুষ্ঠান প্রচার ছিল অন্য দিনগুলোর মতোই। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে নতুন স্বাধীনতার দিনে টিভিগুলোতে ঢেউ লাগেনি। বিজয়ের আনন্দে দেশাত্মবোধক গান শোনা যায়নি। মূলত হাসিনা রেজিমের সুবিধাভোগী এবং রাষ্ট্রের সম্পদ লুটপাটকারী ব্যবসায়ীরা ঢাল হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রিন্ট ও রেডিও-টিভি প্রতিষ্ঠা করে গণমাধ্যমের মালিক হয়েছেন। দীর্ঘ ১৫ বছর তারা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে কখনো পণ্যমূল্য বাড়িয়ে, কখনো আমদানি-রফতানির নামে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নিয়ে, কখনো রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা নিয়ে, কখনো বা ব্যাংক বীমা ও নানা কোম্পানীর মালিক হয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের আগে এবং পরে ব্যবসায়ী সম্মেলন করে যে কোনো ভাবেই হোক হাসিনাকে ক্ষমতায় আনার লক্ষ্যে দলবদ্ধভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন। এমনকি আজীবন হাসিনার পাশে থাকার অঙ্গীকারের পাশাপাশি মৃত্যুর পরও (নাউজু বিল্লাহ) হাসিনার সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন; নানা প্রক্রিয়ায় এমপি-মন্ত্রী হয়ে সুবিধা আদায় করেছেন; তাদের মালিকানাধীন গণমাধ্যম তথা প্রিন্ট-টিভি মিডিয়াগুলোয় এখনো পরিবর্তনের ঢেউ লাগেনি। ওসব মিডিয়া কার্যত ভারতের কিছু মিডিয়ার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ‘পতিত হাসিনার সুবিধা হয়’ এমন খবরকে প্রচারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ জন্যই অনেকটা বিক্ষুব্ধ হয়েই গত ১১ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন চাটুকারিতা করলে গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হবে জানিয়ে দেন। তিনি বলেছেন, ‘বিগত সরকারের সহিংসতা নিয়ে গণমাধ্যমগুলো অনেক মিথ্যাচার করতো। তারা হাসিনা রেজিমের সরকারের চাটুকারিতা করেছে। ছাত্র আন্দোলনের সময় মিডিয়া সঠিক তথ্য তুলে ধরলে এত পুলিশ মারা যেত না। একটা দেশ ডোবে যখন, মিডিয়া তখন মিথ্যা প্রচার করে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘আগে যা হয়েছে, নতুন করে কাউকে চাটুকারিতা করতে দেওয়া হবে না। মিডিয়া স্বাধীনভাবে কাজ করবে। এরপরও যারা চাটুকারিতা করবে, সেসব মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
হাসিনা আমলে ডিজিটাল নিরাপত্তাসহ কিছু কিছু আইন করে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টা হয়েছে। সংবাদকর্মীদের নানাভাবে হেনস্তা, হামলা, মামলা, কারাগারে নিক্ষেপ এবং বিজ্ঞাপনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন পতিত হাসিনা। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্র্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ ও মুজিব বন্দনায় ব্রতী করে তোলা হয়েছে বিগত ১৮ বছর ধরে। পাশাপাশি ভারতের তাবেদারি, দেশজ সংস্কৃতিকে চাপা দিয়ে হিন্দুত্ববাদী বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চার অভায়ারণ্যে দেশকে পরিণত করা হয়। কিন্তু অবৈধ সুবিধা নিয়ে হাসিনা রেজিমে ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা মিডিয়াগুলো হাসিনা রেজিমকে খুশি করতে দলদাসের ভূমিকা পালন করেছে। কয়েক বছর ধরে গণভবনে আয়োজিত পতিত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের সামনের সারিতে গণমাধ্যমের চাটুকার মালিক-সম্পাদকদের জটলা ও তোয়াজে খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া রিপোর্টাররা পেছনের সারিতে বসে থেকেছেন। এমনকি যারা হাসিনাকে বেশি তোষামোদ করতে পারেন শুধু তাদেরকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হতো। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বিগত ১৮ বছর দেশের বেশির ভাগ গণমাধ্যম মুজিব-হাসিনা তোয়াজে মেতে ছিল। রীতিমতো দালালির প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন অনেক সংবাদকর্মী ও মালিক। যারা তোয়াজে ছিলেন না তাদের নানাভাবে হয়রানি এবং বিজ্ঞাপন থেকে বঞ্চিত, এমনকি কিছু গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
দীর্ঘ ১৮ বছর গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জুলুম-নির্যাতন, আদালতপাড়া ও কারাগারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। এসময় দেশে হাজার হাজার মানুষ জুলুম নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছেন। বিরোধী রাজনীতি করায় হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য খুইয়েছে অসংখ্য মানুষ। পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের নির্যাতনে এলাকায় টিকতে না পেরে হাজার হাজার ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মী এলাকাছাড়া হয়ে বছরের পর বছর অন্যত্র মানবেতর জীবন যাপন করেছেন। অন্য জেলায় গিয়ে কেউ ভ্যান চালিয়ে, কেউ রিকশা চালিয়ে জীবন ধারণ করেছেন। ছাত্র বয়সে গ্রাম ছেড়ে মধ্যবয়সে বাড়ি ফিরেছেন। অনেকেই ৫ বছর ১০ বছর স্ত্রী-সন্তানের মুখ দেখতে পাননি।
বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় আইনশৃংখলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ যুবলীগ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর পৈশাচিকতা চালিয়েছে তা অবর্ণনীয়। জুলুম থেকে বাঁচতে মানুষ রাতে নৌকায়, ধান-পাট ক্ষেতে, জঙ্গলে, নদীর ধারে এমনকি সড়কের পাশের ঝোপঝাড়ে রাত কাটিয়েছেন। এসব মর্মস্পর্শী ও পৈশাচিক নির্যাতন নিয়ে টিআইবি, আইন ও সালিস কেন্দ্র, অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সিপিডি, অধিকারসহ দেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো তীব্র প্রতিবাদ করেছে। এমনকি জাতিসংঘ পতিত হাসিনা সরকারের জুলুম-নির্যাতন-গুম-খুন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। অথচ সেগুলো নিয়ে পতিত হাসিনার তাবেদার ও দিল্লির পদলেহি গণমাধ্যমগুলো খবর প্রচারে গুরুত্ব দেয়নি। শুধু কি তাই! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রায় এক হাজার মানুষ শহীদ হয়েছে পুলিশ-বিজিবি আর ছাত্রলীগের গুলিতে। জাতিসংঘ গতকালও বলেছে, কোটাবিরোধী আন্দোলনে ৬৫০ জন মারা গেছে। গুলিবিদ্ধ কয়েকশ’ মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেছে। ৫ শতাধিক ছাত্রজনতা চোখ হারিয়েছেন। কয়েকশ’ মানুষ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়েছেন। সেসব খুন-জুলুমের ভয়াবহ চিত্র নিয়ে তাবেদার গণমাধ্যমের মাথাব্যাথা নেই। তাদের মায়াকান্না কেবল ১৫ আগস্ট নিয়ে। গত ১৫ আগস্ট প্রতিবিপ্লবের ঘোষণা দেয়া আওয়ামী লীগের কিছু অনুসারী ধানম-ির ৩২ নম্বরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার হাতে হেনস্তা হন। বিদেশ থাকা হাসিনা ও তার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের প্রতিবিপ্লব ঘটানোর হুঙ্কার প্রতিহত করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এটার সচিত্র খবর ফলাও করে প্রচার করা হয় তাবেদার গণমাধ্যমগুলোয়।
ভারতের কিছু গণমাধ্যমের সঙ্গে সুর মিলিয়ে দিল্লির ‘নাচের পুতুল’ হাসিনা ও তার পিতার জন্য মায়াকান্না করছেন। ১৫ আগস্ট পালন করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অথচ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবকে হত্যার পর দৈনিক ইত্তেফাক ১৭ আগস্ট সংখ্যার কয়েকটি শিরোনাম দিয়েছে ‘জনসাধারণের মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস’ ‘পবিত্র ঈদের খুশির মতো একে অপরকে আলিঙ্গন করিয়া কুশল বার্তা বিনিময় করে’। ওই সময়ের বাকশাল এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মালেক উকিল ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের খবর শুনে বলেছিলেন, ‘ফেরাউনের পতন হয়েছে’। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ইউরোপের দেশ থেকে দিল্লি চলে গেছেন, পিতা-মাতার লাশ পর্যন্ত দেখতে আসেননি।
গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন হত্যাকা- ঘটে পুরো বাংলাদেশে মিষ্টি বিতরণ হয়েছিল। কারণ কী? কারণ ওই ’৭২ থেকে ’৭৫-এর ঘটনাগুলো যদি দেখেন তখন স্বৈরাচার বা ফ্যাসিস্টের চরম একটি মাত্রা ছিল। ইতিহাস ঘাঁটলেই এটি দেখতে পাই যে, তখন আসলে আলটিমেটলি যা হয়েছিল এক জায়গারে নির্দেশ থেকে হয়েছিল। এমনকি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তার যে বিচার সেটি পাইনি। ওই সময় সামগ্রিক একটি বিপ্লবের ফল এলে ওটি (১৫ আগস্ট) ছিল। সিঙ্গেল কয়েকজন মেজর বা আর্মি অফিসার মিলে ১৫ আগস্ট ঘটাতে পারত না। বরং এটি একটি সামগ্রিক ক্ষোভ ছিল।’ তিনি আরো বলেন, আজকে ’২৪ সালে যা হয়েছে এটি ’২৪ সালের ঘটনা না। বিগত ১৬ বছরে যা হয়েছে তার ঘটনা। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের মতিঝিলের সমাবেশে পুলিশকে অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে। আলেম-ওলামাকে কান ধরে উঠবস করিয়েছিল। সেই সচিত্র ছবি এবং ভিডিও এখনো আমাদের কাছে আছে। আমরা মনে করি, শুধু আমাদের জায়গা না, বরং রাষ্ট্রীয়ভাবে ১৫ আগস্ট শোকটি পালন করা উচিত নয়।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের (বর্তমানে পলাতক) দলের নেতাকর্মীদের প্রতিপক্ষ দলের কর্মীদের ওপর লেলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে একদিনে ১০ লাখ লোককে বিএনপি মেরে ফেলবে।’ ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা পালানোর পর জনতা গণভবনে বিজয়নৃত্য করেছে। ১৫ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকে হাসিনার ব্যবহৃত জিনিসপত্র তছনছ করেছে। কিন্তু সেখানে প্রাণহানি ঘটেনি। শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীলতা সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে ১৮ বছর ধরে নির্যাতিত বিএনপি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। বছরের পর বছর ধরে আওয়ামী সুনামিতে আক্রান্ত জামায়াত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে।
শেখ হাসিনা পালানোর পর সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথিত কল্পকাহিনী প্রচার করে ভারতীয় গণমাধ্যম। বিদেশি ওই গণমাধ্যমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের কিছু গণমাধ্যম ও টিভি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে পুরনো ছবি নিয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবর প্রচার করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা, বিবিসি, ডয়েচে ভেলে, ভয়েস অব আমেরিকাসহ প্রভাবশালী গণমাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের দিল্লির সেবাদাস গণমাধ্যমের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়। বরং আন্তর্জাতিক ওই গণমাধ্যমগুলোতে সারাদেশের মাদরাসার ছাত্র, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী, বিএনপির নেতাকর্মী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-দোকানপাট এবং মন্দির পাহারার সচিত্র খবর প্রচার করা হয়। বাংলাদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত মাদরাসাছাত্রদের মন্দির পাহারা দেয়ার দৃশ্য দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ষড়যন্ত্র থেমে নেই। শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। সকলকে সাবধান থাকতে হবে।
সংখ্যালঘু নির্যাতন ট্রাম্পকার্ড, জুডিশিয়াল ক্যু ট্যাম্পকার্ড এবং ১৫ আগস্টে প্রতিবিপ্লবের ট্রাম্পকার্ড ব্যর্থ হয়ে গেছে। এখন ভারত সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ট্রাম্পকার্ড খেলার অপচেষ্টা করছে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসকরা বুঝে গেছে বাংলাদেশে আর তাদের পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। অতএব প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দিল্লির কিছু কেনা তথাকথিত সংস্কৃতিসেবী ও দেশের ভারতীয় সেবাদাস মিডিয়ার বদৌলতে হিন্দুত্ববাদী অপসংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান আধিপত্যে দেশজ সংস্কৃতি কার্যত হুমকিতে! গণমাধ্যম থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র ভাচ্যুয়াল মিডিয়া, সঙ্গীত এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজাতীয় সাংস্কৃতির আধিপত্য প্রচার করছে। কিছু তরুণ সমাজ অপসংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়েছে। বর্তমান সমাজে নানা অবিচার অনাচার দেখে মনে হয় তরুণ-তরুণীরা প্রতিনিয়ত বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনে দলিত-মথিত হচ্ছে। কিন্তু বাঙালি জাতির রয়েছে হাজার বছরের গৌরবময় ইতিহাস। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেভাবে সর্বস্তরের মানুষ রাজপথে নেমে স্বৈরাচারিণী হাসিনাকে পালাতে বাধ্য করেছে; সে তরুণরা অবশ্যই ভারতের সাংস্কৃতির আগ্রাসন রুখে দেবে। তবে শর্ষের ভেতরে ভূত রয়েছে ওই দিল্লির তাবেদার গণমাধ্যম। নতুন সরকারের দায়িত্বশীলদের সেদিকে নজর রাখতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor