দেশের ৩০ শতাংশ সম্পদের মালিক ১০ শতাংশ ধনী পরিবার
দেশের মোট সম্পদের ৩০ শতাংশের মালিক ১০ শতাংশ ধনী পরিবার। এদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ কর আদায় করা গেলে সরকার অতিরিক্ত ২ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থ পাবে। ফলে নিজস্ব অর্থায়নে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন করতে পারবে। এতে কমবে সরকারের ঋণ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। যে কোনো দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয়। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে এমন ব্যয় বর্তমানে ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। যা নিম্ন আয়ের একটি দেশের গড় ব্যয়ের চেয়েও ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। একটি নিম্ন আয়ের দেশও উন্নয়নের জন্য জিডিপির অনুপাতে ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ ব্যয় করে। মধ্যম আয়ের দেশে ব্যয়ের পরিমাণ ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ আর বৈশ্বিক গড় ব্যয় ৩৫ দশমিক ২২ শতাংশ। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, বাংলাদেশে এই ব্যয় উচিত ৩৫ শতাংশ। আর মধ্যম আয়ের দেশ হতে ব্যয় নিয়ে যেতে হবে সাড়ে ৩৬ শতাংশে। এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, অনেক কারণে সরকারি ব্যয় দরকার।
বিশেষ করে অবকাঠামো। সরকার এমন অনেক জায়গায় বিনিয়োগ করে যার ফল আমরা ভবিষ্যতে পাই। শিক্ষায় যদি বিনিয়োগ না করি তাহলে দক্ষ মানবসম্পদ পাওয়া যাবে না। ফলে ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি আমাদের নিচের দিকে নামতে পারে। পিআরআই বলছে, সরকারি ব্যয় বৈশ্বিক মানদণ্ডের কম হওয়ার প্রধান কারণ অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়ে পিছিয়ে থাকা। সরকারি হিসাবে বর্তমানে রাজস্ব-জিডিপির অনুপাতে ৮ শতাংশের মতো। এ আয় অন্তত ২ শতাংশ বাড়ানো গেলে আয়কর থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা আয় বাড়ানো সম্ভব। মূল্য সংযোজন কর থেকে ৬৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং কাস্টমস থেকে ৬৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে পিআরআই পরিচালক ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশে মোট সম্পদের প্রায় ৩০ শতাংশ রয়েছে ১০ শতাংশ ধনী পরিবারের হাতে। এই ১০ শতাংশ পরিবারকে যদি ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা যায়, তাহলে অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ কর আদায় হবে। বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে কর আদায় বাড়ানোর বিকল্প নেই।
ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য সরকার বাজেটের ১২ থেকে ১৩ শতাংশ ব্যয় করছে। এটা চিন্তা করলেও ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো দরকার। না হলে আমাদের ঋণ করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে, সেটার বরাদ্দে বেড়ে অনেক বেশি ব্যয় হচ্ছে। তার সঙ্গে আমাদের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাই উন্নয়ন কর্মসূচির একটি অংশ আমাদের নিজস্ব কর আয়ের অর্থে হওয়া উচিত। পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমি কর না দিলেও সরকার ব্যয় করবে, কীভাবে সেটা হলো সরকারের কাছে আমার ইনফ্লাশন ট্যাক্স হিসেবে সারেন্ডার করে। সবচেয়ে ভালো কর প্রদান করা। এতে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।