দেশে বাড়ছে বজ্রপাত, সন্দ্বীপে টানা দুই ঘণ্টার বজ্রপাতে উদ্বেগ
![](https://miprobashi.com/wp-content/uploads/2024/06/Bazrapat-2406211655-780x457.jpg)
দেশে বড় দুর্যোগের নাম বজ্রপাত। আকস্মিকতা ও হতাহত বিবেচনায় এই দুর্যোগ যেন মৃত্যুদূত। বজ্রপাত প্রতিবছরই বাড়ছে। সে সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু। মানুষের পাশাপাশি প্রাণ যাচ্ছে গবাদি পশুর। সর্বশেষ চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে টানা দুই ঘণ্টার বজ্রপাত চরম উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ কী বজ্রপাতের দেশ হতে চলেছে? সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বায়ুমন্ডলের অস্থিরতা ও নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় বজ্রপাতের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি অপর্যাপ্ত আগাম সতর্কতা এবং বড় গাছের অনুপস্থিতি ক্ষতি বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। বজ্রপ্রতিরোধক যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে তা কার্যকরী নয়। ফলে হতাহতের ঘটনা কমার পরিবর্তে ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান বলেন, বজ্রপাত আগেও ছিল, এখনো আছে। কিন্তু এর তীব্রতা ও ধ্বংসযজ্ঞ বেশি দেখা যাচ্ছে। যার প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। এর ফলে প্রকৃতি নিজে থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র বসিয়ে এটিকে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও বনায়নের কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।
বিশ্বে মিনিটে বজ্রপাত হয় ৮০ লাখ বার। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৮৪ লাখ বজ্রপাত হয়। যার ৭০ শতাংশই এপ্রিল থেকে জুন মাসে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগের ক্ষেত্রে কিছু প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকলেও বজ্রপাতের বিষয়টি অনেকটা ভূমিকম্পের মতোই আকস্মিক। এমন অবস্থায় আকাশে কালো মেঘ ও বিদ্যুৎ চমকাতে দেখলেই সবাইকে খোলা জায়গা ছেড়ে দ্রুত নিরাপদে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। বজ্রঝড় সাধারণত ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করলে মৃত্যুর সংখ্যাও কমিয়ে আনা সম্ভব।
বাংলাদেশের জাতীয় দুর্যোগের তালিকায় ২০১৬ সালের ১৭ মে বজ্রপাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, ভারতের কয়েকটি অংশে এবং নেপালেও বজ্রপাত হয়। তবে এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা অনেক বেশি। গত এক যুগে দেশের আয়তনের তুলনায় হতাহতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে বজ্রপাত যেন নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে। ওই দিন দুপুরে আকাশে ছিল মেঘ। সন্দ্বীপে সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় তুমুল বজ্রবৃষ্টি। টানা দুই ঘণ্টা ধরে চলে বজ্রপাতের গর্জন। বিকট শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয়রা। যে যার মতো সুবিধাজনক স্থানে আশ্রয় নেন। কোনো মানুষের হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও চর এলাকায় মহিষের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও তীব্র বজ্রপাতে এলাকাটি ছিল সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। স্থানীয়রা জানান, জীবদ্দশায় টানা বজ্রপাতের এমন দৃশ্য তারা দেখেননি। গেল কয়েক বছরে এ অঞ্চলে বজ্রবিদ্যুতের হারও কয়েকগুণ বেড়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। কারণ সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক নুরুল করিম জানান, কিছুটা ফানেলের মতো জায়গায় সন্দ্বীপের অবস্থান। বাতাসের প্রবাহের বিষয়টি বিবেচনা আনলে তা মেঘের চলাচলেও প্রভাব ফেলতে পারে। বজ্রপাতের ক্ষেত্রেও এটির কিছু প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ ফারুখ জানান, বিশ্বের বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে ভেনিজুয়েলা এবং ব্রাজিলে। কিন্তু সেখানকার তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর ঘটনা অনেক বেশি। খোলা স্থানে মানুষের কাজ করা এবং বজ্রপাতের বিষয়ে তাদের অসচেতনতা এর কারণ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এর বেশি শিকার হন খোলা মাঠে কাজ করা কৃষক বা জেলেরা। বিশেষ করে হাওড়াঞ্চলে খোলা জায়গায় কৃষি কাজের কারণে সেখানে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটছে। গত কয়েক দশকে বড় বড় গাছ কেটে ফেলাও অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে এই প্রাকৃতিক ঘটনার ওপর ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে গবেষণা চালিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৮৪ লাখ বজ্রপাত হয়। যার ৭০ শতাংশই হয় এপ্রিল থেকে জুন মাসে। ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতে মারা গেছেন ১ হাজার ৮৭৮ জন এবং তাদের ৭২ শতাংশই কৃষক বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি। তবে গেল এক দশকের মধ্যে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ২০১৬ সালে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে কিছুটা কমলেও বাকি বছরগুলোতে তিনশ’র ওপরে ছিল মৃত্যুর সংখ্যা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০১১ সালে ১৭৯ জন মারা গেছেন। ২০১২ সালে ২০১ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫, ২০১৪ সালে ১৭০, ২০১৫ সালে ২২৬, ২০১৬ সালে ৩৯১, ২০১৭ সালে ৩০৭, ২০১৮ সালে ৩৫৯, ২০১৯ সালে ১৯৮, ২০২০ সালে ২৫৫ এবং ২০২১ সালে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ৩১৪ জনের। সাম্প্রতিক সময়ে যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে আফ্রিকা মহাদেশের মালাবিতে প্রতিবছর ১০০৮ জন মানুষ বজ্রপাতে প্রাণ হারান। জিম্বাবুয়েতে এই সংখ্যা ১৫০ পর্যন্ত। চীনে ওই সময়টাতে বছরে ৩৬০ জন বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতে এই মৃত্যুর হার ও সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। ১৯৬৭ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত ভারতে প্রতিবছর গড়ে ১৭৫৫ জন মারা যায় বজ্রপাতে। উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোতে ১৯৭৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ২৩০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
এদিকে চলতি বছর মার্চ মাসে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে ২ হাজার ১৪২ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৫৩৮ জন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে গড়ে ৩০০ মানুষ মারা যায়। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে বজ্রপাতের কারণে বছরে ২০ জনেরও কম মৃত্যু ঘটে।
বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই ॥ বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা, খুলনা ও ভোলায় বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। একদিনেই মারা গেছেন ৫ জন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ বজ্রপাতের সময় আশ্রয়ের খোঁজ করার সময় প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়াও অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। জেলার স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতারা জানান, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় বজ্রপাতে দুইজন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনজন। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের গাগড়ামারি ও নেবুবুনিয়া গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শ্যামনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, শ্যামনগরের বাড়ি থেকে আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন এনায়েত ও নাজমুল। পথে বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে, খুলনায় বজ্রপাতে পৃথক স্থানে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বজ্রপাতে পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নে ডেউবুনিয়া গ্রামের পতিত মন্ডলের ছেলে শ্রীকান্ত মন্ডল (২৫) ও বটিয়াঘাটা উপজেলার খারাবাদ গ্রামের মনি চৌকিদারের ছেলে আল মামুন (১৭) মারা যান। পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওবাইদুর রহমান জানান, শ্রীকান্ত মন্ডল বিকেল ৪টার দিকে ডেউবুনিয়ার একটি মাছের ঘেরের ঝুপড়ি ঘরে অবস্থানকালে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা ঘেরের ঘর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে।
বটিয়াঘাটা থানার ওসি রিপন মন্ডল জানান, আকাশে মেঘ দেখে আল মামুন খারাবাদ গ্রামের কড়িয়া ভিটায় গরু আনতে যান। ওইসময় বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হয়। ফাঁকা বিলে কোনো নিরাপদ স্থান না পেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসার সময় পথিমধ্যে বজ্রপাতে আল মামুন মারা যান।
ভোলার চরফ্যাশনে বজ্রপাতে মো. আক্তার তালুকদার (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শশীভূষণ থানার ওসি এনামুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ভৌগোলিক অবস্থানে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ ॥ বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাস আসে এবং উত্তরের হিমালয় থেকে আসে ঠান্ডা বাতাস। এই দুই বাতাসের সংমিশ্রণে বজ্র মেঘ তৈরি হয় এবং এসব মেঘের সঙ্গে মেঘের ঘর্ষণে বজ্রপাত হয়। আবহাওয়াবিদরা জানান, একদিকে অনেক গরম আবহাওয়া, অন্যদিকে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে ভূপৃষ্ঠের গরম বাতাস ওই জলীয় বাষ্পকে ওপরে ঠেলে দেয়। তখন এটি ওপরের শীতল বাতাসের সঙ্গে মিলে সঞ্চালিত মেঘমালা তৈরি করে। এই মেঘের ভেতরে অনেক বৈদ্যুতিক চার্জ থাকে। সেখান থেকে আলোর ঝলকানি দিয়ে বজ্রপাত হয়। বজ্রপাত বা উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ মেঘ থেকে সরাসরি ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়লেই এ ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটে।
২০২১ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে একসঙ্গে ১৭ জনের বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। উত্তরাঞ্চলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলার শিবগঞ্জ ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। পদ্মা নদীর ঘাটে হঠাৎ বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে ওই ১৭ জন নদীর ঘাটে টিনের দোচালা ঘরে আশ্রয় নেন। সেখানেই বজ্রপাত হলে একসঙ্গে তাদের মৃত্যু হয়।
সব জেলায় ঘটছে মৃত্যু ॥ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএ ফারুখের নেতৃত্বে এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় সুনামগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। বজ্রপাত বেশি হচ্ছে: সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, পাবনা, নওগাঁ, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, জামালপুর, গাইবান্ধায়। সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দেশের মোট প্রাণহানির ৪.৮২ শতাংশ ঘটে। তবে দেশের সব জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আশরাফ দেওয়ান জানান, দেশে বছরে বজ্রপাত হয় ৮০ থেকে ১২০ দিন। যা বাড়ছে। উন্নত দেশগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ও সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে প্রাণহানি কমাতে পারলেও, তা সম্ভব হয়নি বাংলাদেশে। দেশে প্রতিবছর গড়ে ৮৪ লাখ বজ্রপাত হয়। যার ৭০ শতাংশই এপ্রিল থেকে জুন মাসে।
এ থেকে বাঁচার সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কিন পদ্ধতির নাম থার্টি সেকেন্ড টু থার্টি মিনিটস। বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানোর লক্ষ্যে দেশবাসীকে আগাম সতর্কবার্তা দিতে দেশের ৮টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ঢাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ছাড়াও ময়মনসিংহ, সিলেট, পঞ্চগড়, নওগাঁ, খুলনা পটুয়াখালী এবং চট্টগ্রামে এই সেন্সর বসানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আটটি ডিটেকটিভ সেন্সরের যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উদ্যোগ ॥ বজ্রপাতের ক্ষতির পরিমাণ কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ১৫ জেলায় বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় মনে করছে, এতে বজ্রপাতের ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে। ১৫ জেলার ১৩৫টি উপজেলাতে ৩৩৫টি লাইটনিং অ্যারেস্টার (বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া, গ্রামীণ রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি নামে সরকারের একটি প্রকল্প আছে, যেটা গ্রামে টিআর প্রকল্প নামে পরিচিত। এ কর্মসূচির টাকা দিয়েও বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন করা যাবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, যেসব খোলা মাঠে গাছ কম সেখানে লাইটনিং অ্যারেস্টার স্থাপনের অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে তারা একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
তবে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘বাংলাদেশে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে আবহাওয়ার ধরন ও বৈশিষ্ট্য ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, যার ফলে দীর্ঘ তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ এবং ঋতু পরিবর্তনের মতো চরম জলবায়ু সংক্রান্ত এ কারণেই আমরা বজ্রপাতের প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি। তিনি মনে করেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। তিনি মনে করেন, বর্ষা পূর্ববর্তী মৌসুম এবং বর্ষা ঋতুতে তীব্র সৌর বিকিরণ থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন বজ্রপাত হয়ে থাকে। এই সময়ই মেঘ থেকে মাটিতে বজ্রপাতের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি অপর্যাপ্ত আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা এবং বড় গাছের অনুপস্থিতির কারণে মৃত্যু বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।