দেশে ভোগ্য পণ্যের দাম বেড়েছে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত
দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে সমন্বয়হীনতা ও মূল্যবৃদ্ধির চিত্র ফুটে উঠেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নতুন প্রতিবেদনে। তাদের হিসাবে চাল, ডাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা ও রসুনের দাম পাঁচ বছরের ব্যবধানে ১২ থেকে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।
মূলত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দেওয়া নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকা থেকে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারির মূল্যের সঙ্গে ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বরের মূল্য তালিকার তুলনা করে এসব তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি।
গতকাল শনিবার সকালে ধানমণ্ডিতে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির কার্যালয়ে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ‘ইনডিপেনডেন্ট রিভিউ অব বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট’ (আইআরবিডি) প্রগ্রামের অংশ হিসেবে প্রস্তুত করা ‘স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি ইন এফওয়াই ২০২৩-২৪ (ফার্স্ট রিডিং)’ শীর্ষক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে বৈষম্য আরো প্রকট হচ্ছে। এতে আমরা আবারও এক দেশে দুই অর্থনীতির পথে চলে যাচ্ছি। অথচ দুই অর্থনীতির বিরুদ্ধেই বঙ্গবন্ধু লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন।
কিন্তু এখন সম্পদের বণ্টনব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে আবারও দুই সমাজ বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠছে।’
প্রতিবেদনে সিপিডি বলছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে মিনিকেট চাল (প্রতি কেজি) ছিল ৫৮ টাকা। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস তা ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শতাংশের হিসাবে দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ।
পাঁচ বছরের ব্যবধানে খোলা পাম অয়েলের (প্রতি লিটার) দাম বেড়েছে ১০২ শতাংশ। ২০১৯ সালে পাম অয়েলের দাম ছিল ৬৩ টাকা। বর্তমানে তা ১২৮ টাকা। দেশীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৮২ শতাংশ। ২৭ টাকার দেশি পেঁয়াজ হয়েছে ১০৫ টাকা। আমদানীকৃত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৩৩ শতাংশ। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজ ছিল ৩০ টাকা। বর্তমান বাজারে তা ১৩০ টাকা।
দামের দিকে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রসুনের দাম, শতাংশের হারে তা প্রায় ৪০০শতাংশ। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে দেশি রসুনের দাম ছিল ৫০ টাকা। বর্তমানে তা ২৫০ টাকা।
এ ছাড়া শুকনা মরিচ প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ১২৩ শতাংশ। আদার দাম বেড়েছে ১১৮ শতাংশ। প্রকারভেদে গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ৪৪ থেকে ৮১ শতাংশ। চিনির দাম বেড়েছে ১৭৭ শতাংশ। প্রকারভেদে মসুর ডালের দাম বেড়েছে গড়ে ৫৬ থেকে ৯৬ শতাংশ পর্যন্ত।
এর আগে ব্রিফিংয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক সুদের হার বাড়ানো হলেও উদ্যোগটা অনেক বিলম্বে নেওয়া হয়েছে, যার প্রভাবে পণ্যের দাম কমা শুরু হয়নি।’ তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের জন্য আরো নজরদারি বাড়াতে হবে। মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে মজুরির হার বাড়ানোর পাশাপাশি নগদ সহায়তা ও পণ্য সহায়তা বাড়ানোর পরামর্শও দেন তিনি।