USA

দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ট্রাম্পের সমর্থকেরা কতটা প্রভাবিত হবেন

ফৌজদারি মামলায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর সমর্থকদের ওপর এর কতটা প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে কয়েক মাস ধরেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা পূর্বাভাস দিয়ে আসছেন। তাতে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন অটুট থাকার কথা বলে এসেছেন তাঁর সমর্থকেরা। এর মধ্যে মাস ছয়েক শুনানি শেষে নিউইয়র্ক আদালতে গত বৃহস্পতিবার জুরিবোর্ড ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। ১২ সদস্যের জুরিবোর্ড ফৌজদারি মামলায় ৩৪টি অভিযোগের সব কটিতেই ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। ট্রাম্প প্রথম কোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

নিউইয়র্ক আদালতে ট্রাম্পের মামলায় শুনানি চলাকালে বেশ কয়েকটি জরিপে ভোটারদের প্রশ্ন করা হয়েছিল যে ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। এসব জরিপের ফল অনুযায়ী, ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন কিছুটা সুবিধা পাবেন বলে মনে করা হয়।

নিজ দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা প্রাইমারির সময় ট্রাম্প তাঁর মামলা থেকে সুবিধা নিতে পেরেছিলেন। কারণ, সেখানে তাঁর সমাবেশে সমর্থকেরা পাশে ছিলেন। এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কাছ থেকে সমালোচনাও কম শুনতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি তাঁর জন্য বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে জরিপের ফল খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখার কিছু নেই। কারণ, অনুমানমূলক ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে ভোটাররা ভালো প্রতিক্রিয়া দেখান না। এতে ট্রাম্পের সমর্থকেরা দল পাল্টে বাইডেনকে ভোট দেবেন, এমন ধারণা করা ঠিক হবে না। তাঁদের মধ্যে পরিবর্তন হলে বড়জোর সিদ্ধান্তহীনতা পর্যন্ত গড়াতে পারে।

অনেক ভোটার বিস্মিত হবেন

ট্রাম্পের অভিযুক্ত হওয়ার ঘটনা ভোটারদের বিস্মিত করতে পারে। সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজের জরিপে দেখা গেছে, দোদুল্যমান রাজ্যের ভোটারদের ৩৫ শতাংশ ধারণা করেছিলেন, ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হবেন। তবে অর্ধেকের বেশি ভোটার ধারণা করেছিলেন, তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে না। অন্য জরিপেও একই রকম ফল দেখা যায়। অনেক মার্কিন নাগরিক মনে করেন, ট্রাম্প আইন লঙ্ঘন করেছেন। আবার অধিকাংশই মনে করেন, এতে তাঁর কিছু হবে না। কারণ, তার আগে কিছুই হয়নি। তাই এখন নিউইয়র্ক আদালতের জুরিরা তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করায় অনেকে বিস্মিত হবেন। যাঁরা বিস্মিত হবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এ ঘটনা বড় প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, এসব ভোটারের মধ্যে প্রার্থী সম্পর্কে বড় ধরনের কোনো আবেগ কাজ করে না।

কম তথ্য জানা ভোটাররা প্রভাবিত হবেন

যেসব ভোটার নিয়মিত মার্কিন গণমাধ্যম এমএসএনবিসি, ফক্স বা সিএনএন দেখেন, তাঁদের মনে এ ঘটনা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। রাজনীতি ও জনগণকেন্দ্রিক ঘটনার ওপর যাঁরা বেশি গুরুত্ব দেন বা যাঁরা মাইকেল কোহেন বা ডেভিড পেকার সম্পর্কে জানেন, তাঁরা খুব বেশি প্রভাবিত হবে না। যেসব ভোটারের ভোটে হার-জিত নির্ধারিত হয়, তাঁরা সে দোদুল্যমান ভোটারের তালিকায় পড়েন না। কিন্তু যাঁরা দোদুল্যমান ভোটার, তাঁদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে। রাজনৈতিক কৌশলবিদেরা তাঁদের কম তথ্য জানা ভোটার হিসেবে দেখেন। তাঁদের নির্বাচনের প্রার্থী সম্পর্কে খুব বেশি জ্ঞান থাকে না। এসব প্রার্থী কেন নির্বাচন করছেন, তাঁরা সে খোঁজও রাখেন না। এসব ভোটার আগামী দিনে কোন দিকে মোড় নেন, তা দেখতে হবে।

বড় ধরনের পরিবর্তন আশা করা ঠিক নয়

ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করার আগে বাইডেনের সঙ্গে তাঁর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এ ঘটনার পর সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও বাড়বে। উদারনৈতিক ডেমোক্র্যাট হিসেবে পরিচিত অনেক ভোটার তাঁদের মনস্থির করতে সমস্যায় পড়বেন। ৯ বছর আগে ট্রাম্প যখন নির্বাচনী মঞ্চে আবির্ভূত হন, তখন থেকে অনেকেই মনে করেন, অ্যাক্সেস হলিউড টেপ, মুলারের তদন্ত, কোভিড-১৯-এর বিশৃঙ্খল প্রতিক্রিয়া, ফৌজদারি অপরাধের মতো কোনো একটি ঘটনায় ট্রাম্প মানুষের মন থেকে মুছে যাবেন। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। ট্রাম্পের সমর্থকেরা তাঁর ওপর যথেষ্ট আস্থা রেখেছেন। বিশ্লেষকেরা বলেন, ‘আমরা একটি অত্যন্ত মেরুকৃত রাজনৈতিক যুগে বাস করি, যেখানে কেউ নিজ দলের বাইরে যান না। এবারের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ৮০ শতাংশ ভোটার আগে থেকেই মনস্থির করে রেখেছেন। তাঁদের মন ঘুরবে কি না, তা বলা কঠিন।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button