দ্রুত গলছে অ্যান্টার্কটিকার থোয়াইটস হিমবাহ, বড় বিপদের মুখে বিশ্ব?
পৃথিবীর তাপমাত্রা যতোই বাড়ছে, এর মেরুগুলোর চারপাশের সমুদ্রের হিমবাহও ক্রমেই গলতে শুরু করেছে। অ্যান্টার্কটিকার ফ্লোরিডায় ৮০ মাইল প্রস্থের পৃথিবীর সবচেয়ে প্রশস্ত হিমবাহ থোয়াইটস বা ডুমসডে হিমবাহটি দ্রুত গলে যাচ্ছে।
হিমবাহটির গলে গিয়ে দ্রুত অবস্থার পরিবর্তনের কারণে মহাসাগরগুলিতে জলের স্তর অতিরিক্ত বেড়ে যাবে যা গোটা পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি একটি নেচার জার্নালে প্রকাশিত দুটি গবেষণাপত্রে দেখা যাচ্ছে অ্যান্টার্কটিকার দৈত্যাকার থোয়াইটস হিমবাহের দুর্বল অংশগুলোতে গরম পানি প্রবেশ করছে। পাশাপাশি ক্রমশ বাড়তে থাকা তাপমাত্রা অর্থাৎ গ্লোবাল ওয়ার্মিংও হিমবাহের গলে যাওয়াকে আরও বেশি তরান্বিত করছে।
অ্যান্টার্কটিকার থোয়াইটস হিমবাহকে ‘ডুমসডে গ্লেসিয়ার’ বা ‘কেয়ামতের হিমবাহ’ বলেও ডাকা হয়। এটি অ্যান্টার্কটিকার ফ্লোরিডায় ৮০ মাইল প্রস্থের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হিমবাহ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই হিমবাহটি গলে গিয়ে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রের স্তর ১০ ফুট পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়ে মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে। যার ফলে থোয়াইটস হিমবাহকে ‘কেয়ামতের হিমবাহ’ বলে ডাকা হয়। এক বছর আগেই বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছিলেন যে, ক্ষয়ে যাওয়া থোয়াইটসের শেষ বরফের তাকটিই এর একমাত্র বাঁধন। যা হিমবাহটির ধসে যাওয়া থেকে আরও কয়েক বছর আটকে রাখবে।
পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে হিমবাহটির নীচ দিয়ে সমুদ্রের গরম পানি প্রবাহিত হচ্ছে এবং এটিকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এর চূড়ান্ত পতনের দিকেও নিয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে বিশালাকার এই হিমবাহ থেকে প্রতি বছরে পাঁচ হাজার টন বরফ মহাসাগরে মিশে যাচ্ছে।
গবেষকরা কি বলছেন?
১৩ জন মার্কিন ও ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা একটি দল ২০১৯ ও ২০২০ সালে প্রায় ছয় সপ্তাহের মতো এই হিমবাহে অবস্থান করে গবেষণা চালিয়েছেন। জলের নীচে চলাচলে সক্ষমতাসম্পন্ন একটি রোবট আইসফিনের মাধ্যমে তারা তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সম্প্রতি সেই গবেষণার ফল প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এই প্রথম হিমবাহ গলে যেখানে সমুদ্রে মিশছে, সেই জায়গার তথ্য বিজ্ঞানীদের হাতে এসেছে।
জানা গিয়েছে, এই গরম পানি জমা হয়ে হিমবাহ গলে যাওয়া তরান্বিত করে তুলেছে। প্রতি বছর ৩০ মিটার করে বরফ গলছে বলে জানা গিয়েছে। গরম পানি হিমবাহের সবচেয়ে দুর্বল অংশগুলোতে প্রবেশ করছে এবং পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে। এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে গোটা বিশ্ব ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হবে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং তার জেরে জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে বড় প্রভাব পড়বে। জলের তাপমাত্রা বাড়বে ও সামুদ্রিক প্রাণীরা বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাবে।