Hot

দ্রুত জামিনে বেরিয়ে এসে ফের অপরাধে কিশোর গ্যাং

গ্রেপ্তার হয়ে কারাবাস করলেও দ্রুত জামিনে বেরিয়ে আসছে কিশোর অপরাধীরা। জামিনে মুক্তির পর দ্বিগুণ উৎসাহে জড়িয়ে পড়ছে একই ধরনের অপরাধে। ফলে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে চুরি, ছিনতাইসহ কিশোর অপরাধ বেড়েই চলেছে।

প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, আইনের সুবিধা নিয়ে দ্রুত জামিন পেয়ে ফের একই অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।

অভিযোগ রয়েছে, তাদের নেপথ্যে শক্তি জোগাচ্ছেন কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা।

দ্রুত জামিনে বেরিয়ে এসে ফের অপরাধে

অনুসন্ধান বলছে, রাজধানীর কিশোর গ্যাং সদস্যরা গ্রেপ্তারের পর মাত্র ১০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে আসছে। তাদের জামিনে ছাড়াতে এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ প্রভাব খাটিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরাধীরা বয়সে কিশোর—এটিই তাদের জামিনের ক্ষেত্রে বড় সুযোগ হয়ে ওঠে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, কিশোর অপরাধ বা কিশোর গ্যাং সংশ্লিষ্ট অপরাধ ঠেকাতে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। যেসব অপরাধী বয়সের বিবেচনায় কিশোর, তারা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি এবং মহল্লায় দেশীয় অস্ত্র উঁচিয়ে হঠাৎ বিশৃঙ্খলা ঘটানোর মামলার আসামি হলে প্রাথমিকভাবে তাদের ‘কিশোর গ্যাং’ সদস্য বলে গণ্য করে পুলিশ। মামলা দায়ের হয় ৩৯৩ ধারায় পেনাল কোড ১৮৬০ আইনে। এই আইনে গ্রেপ্তার আসামিরা সহজে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হচ্ছে।

প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, মাদক ব্যবসা, দস্যুতা, দস্যুতার উদ্যোগ ও ডাকাতির প্রস্তুতি সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তারকৃতরা যাতে সহজে জামিনে মুক্ত হতে না পারে, এ জন্য শক্ত আইন প্রয়োজন। শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জামিন বন্ধ রাখার বিধান রেখে আইন করার পরামর্শ তাঁদের।

ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর-পিপি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু বলেন, এসব অপরাধে গ্রেপ্তারকৃতদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্ক হওয়া যেতে পারে। এই কিশোর গ্যাং সদস্যদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তদন্ত করে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। সমাজে কোনো গডফাদার থাকতে পারে না।

অপরাধীরা জামিনে মুক্ত হওয়ার পর পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কি না, এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ দেন এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।

সূত্র জানায়, রাজধানীর আদাবর থানায় গত চার মাসে মাদক, দস্যুতা, দস্যুতার উদ্যোগ ও ডাকাতির প্রস্তুতির ঘটনায় মামলা হয়েছে ৬৮টি। এসব মামলায় ১১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। এখন এসব আসামির বেশির ভাগই জামিনে মুক্ত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতায় অপরাধীরা গ্রেপ্তার হলেও আইনগত সুবিধার ফাঁকে জামিন পাচ্ছে তারা। পুনরায় জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে।

আদাবর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আদাবর এলাকায় এ ধরনের ঘটনা অনেকটা কমেছে। মহল্লায় সংঘবদ্ধ হয়ে এই অপরাধীদের আড্ডা দেওয়ার ঘটনা বন্ধ করেছি। চোখের অগোচরে দু-একটি ঘটনা ঘটছে, তবে এই অপরাধীদের দমনে পুলিশ আগের চেয়ে অনেক বেশি তৎপর।’

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি (তদন্ত) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘অপরাধীরা গ্রেপ্তার হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সহজে জামিনে মুক্ত হচ্ছে। জামিনে সহজে মুক্ত না হলে এসব অপরাধ অনেকটা কমে যাবে। আমাদের পক্ষ থেকে এই অপরাধীদের দমনে চেষ্টার ত্রুটি নেই।’ 

গত ছয় মাসে মোহাম্মদপুর থানায় মাদক ব্যবসা, দস্যুতা, দস্যুতার উদ্যোগ ও ডাকাতির প্রস্তুতির মতো অপরাধের ঘটনায় হওয়া ১০৮টি মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গ্রেপ্তারকৃত দুই শতাধিক আসামির বেশির ভাগই জামিনে মুক্ত। সমাজের কিছু প্রভাবশালী বিত্তবান এসব অপরাধীকে পৃষ্ঠপোষকতা করে জামিন পেতে সহযোগিতা করেন। তা ছাড়া আসামিরা বয়সে কিশোর, এই সুযোগে সহজে জামিন মিলছেও তাদের।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একই ধরনের ঘটনার পেছনে একই কিশোর অপরাধীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিশেষ করে জামিনে মুক্তির পর ওরা আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠে। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, পল্লবী, আদাবর, যাত্রাবাড়ী এবং ঢাকার চারপাশের উপশহরগুলোতে কিশোর গ্যাং ভয়াবহভাবে বিস্তার লাভ করেছে। তাদের অত্যাচার-নিপীড়নে মুখ খোলার সাহস পায় না ভুক্তভোগীরা।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি কিশোর গ্যাং ‘ডাইল্যা গ্রুপের’ প্রধান হৃদয় ওরফে ডাইল্যা হৃদয়কে ছিনতাইয়ের অভিযোগে মোহাম্মদপুর এলাকার রায়েরবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় জামিনে মুক্ত হয়ে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে একই এলাকায় পুলিশের একজন সোর্সকে কুপিয়ে আহত করে। এ সময় পাশে রাখা এক পুলিশ সদস্যের স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে সে। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে আবার আদালতে পাঠায়।

থানা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানোই শেষ কথা নয়, শিগগিরই সে জামিনে মুক্ত হলে আবার বড় ধরনের অপরাধে জড়াতে পারে। অতীতেও তা-ই ঘটেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘সমাজের অনেক প্রভাবশালী নিজেদের স্বার্থে এসব অপরাধীকে পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। তাঁদের সহযোগিতায় গ্রেপ্তারের পর খুব কম সময়ে এসব অপরাধী জামিনে মুক্ত হচ্ছে। এরপর নির্বিঘ্নে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।’

মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলার এজাহারে দেখা যায়, গত বছরের ২০ নভেম্বর চাঁদা দাবিপূর্বক মারপিট ও ভাঙচুরের ঘটনায় সাত লাখ টাকা ক্ষতিসাধন উল্লেখ করে মামলা করা হয়। মামলা নম্বর ৬১/১৭১৭। মোহাম্মদপুর থানার শেরশাহ সুরি রোডের মৃত ফরহাদ হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ আরমান হোসেন বাদী হয়ে মোহাম্মদী হাউজিং এলাকার মো. শাহজাহানের ছেলে মুহাম্মদ ইমরান, একই এলাকার মো. সাব্বির, নাজমুল হোসেন এবং আর্মি আলমগীরকে আসামি করে এ মামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাজেদুল ইসলাম বসুনিয়া জানান, এই মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে তাদের প্রত্যেকে জামিনে মুক্ত। জামিনে থাকাকালে এসব অপরাধী অবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d