দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ

দেশি-বিদেশি চাপ অব্যাহত সেনাবাহিনী প্রস্তুত, ইসিতে প্রস্তুতি চলছে ‘ফুল গিয়ারে’ নির্বাচনী আবহে দেশ
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দেশি-বিদেশি চাপ অব্যাহত রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে বিএনপিসহ মিত্র দলগুলো ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা শোনার জন্য মুখিয়ে আছে। জামায়াতে ইসলামী মুখে নানান রকম কথা বললেও ইতোমধ্যে তিন শ’ আসনে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এনসিপি দ্রুত তাদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। মুখে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দাবি না তুললেও কার্যত তারাও নির্বাচনী প্রচারণায় সারা দেশে সভা-সমাবেশ করছে। গত মাসে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেড় ঘণ্টার আলোচনায় ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যৌথ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এরপর থেকেই দেশে একটি নির্বাচনী আবহ সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ যেমনÑ চীন, জাপান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও চাচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার আসুক। আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমনÑ আইএমএফ, এডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, জাইকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণার পর তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় করেছে। আইএমএফ তো একসাথে ঋণের দুই কিস্তির টাকা ছাড় দিয়ে এবারই প্রথম রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, জাইকা, ইউএনডিপিসহ অন্যান্য সাহায্য সংস্থাও প্রস্তাবিত বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ অনুদান অব্যাহত রখেছে। যা গত বছরের আগস্টের পর বন্ধই ছিল বলা যায়। সর্বশেষ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে টেলিফোন আলাপেও উঠে এসেছে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ৩০ জুন সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, খুব চমৎকার পরিবেশে কথাবার্তা হয়েছে। আমি সামনে বসা ছিলাম। সেখানে সংস্কার কার্যক্রমে তাদের সমর্থনের কথাও বলেছেন এবং কথায় কথায় উঠে এসেছে যে, যথা শিগগিরি সম্ভব নির্বাচন করা হোক।
কোন পক্ষ থেকে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছেÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু’পক্ষের কথাবার্তাই হচ্ছিল আন্তরিক পরিবেশে। তার মধ্যে এই কথাগুলো উঠে এসেছে। নির্বাচন প্রসঙ্গে তারা জিজ্ঞাসা করেছেন এবং এ ব্যাপারে আমাদের যে সংস্কার কার্যক্রম চলছে, সেটির বিষয়েও তাদের সমর্থনের কথাও ব্যক্ত করেছেন। তখন তাদের জানানো হয়েছে, আসলে যত শিগগিরই সম্ভব নির্বাচন করা হবে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। ১ জুলাই মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচন ভবনে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে বলে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভোটের প্রস্তুতি এখন ফুল গিয়ারে চলছে। যথাসময়ে নির্বাচনের তারিখ ও শিডিউল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
অন্যদিকে, সেনাবাহিনী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে সেনা সদর দফতর। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে এমনটিই বলেন মিলিটারি অপারেশন্স ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা পাওয়া মাত্র আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য সব ধরনের সহায়তা করব। ভোটের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৫ আগস্ট ও পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে লুট হওয়া ৮০ শতাংশ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বাকি যে ২০ শতাংশ অস্ত্র ও গুলি রয়েছে, সেগুলো নির্বাচনের আগে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অস্ত্রগুলো উদ্ধার হলে সেটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীকে কোণঠাসা করে রেখেই প্রহসনমূলক তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের বিজয় নিশ্চিত করেছিল। নির্বাচনের সময় সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা পুলিশ কর্মকর্তাদের মতোই নির্বাচনী অপরাধের জন্য কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারবেনÑ এই বিধান সে সময় ক্ষমতাসীনরা মেনে নিতে পারেনি। সশস্ত্রবাহিনীর ওই ক্ষমতাকে তারা তাদের ভোট লুটের অন্তরায় মনে করে এবং ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২’ সংশোধন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞা থেকে প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগগুলোকে (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী) বাদ দেয়া হয়। এর ফলে নির্বাচনী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে একজন আনসার সদস্যের যে ক্ষমতা ছিল সেনা সদস্যদের তা ছিল না। স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেও সেনাবাহিনীকে একইভাবে ক্ষমতাহীন করে রাখা হয়। শুধু তা-ই নয়, নির্বাচনগুলোতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯ থেকে ১৩১ ধারায় এবং সেনা বিধিমালা ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সেনাবাহিনী মোতায়েনেও গড়িমসি ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ‘২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী নিয়োগের জন্য সরকারকে চিঠি দেয়। কিন্তু সেনা নিয়োগ তো দূরের কথা সরকার সেই চিঠির জবাব পর্যন্ত দেয়নি।’ এ ছাড়া ২০১৫ সালের তিন সিটির নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন চার দিনের জন্য সেনা নিয়োগের ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। পরে জানানো হয়, সেনাবাহিনীকে সেনানিবাসেই রিজার্ভ অবস্থায় রাখা হয়েছে। তবে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সংস্থার সংজ্ঞায় আবারো ফিরে আসছে সশস্ত্রবাহিনী। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় সশস্ত্রবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। আজ যে ছবিসহ ভোটার তালিকা, এনআইডিÑ এগুলো সশস্ত্রবাহিনীরই অবদান। সশস্ত্রবাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া এই বিশাল কাজ করা সম্ভব ছিল না। দেশে যে কটি জাতীয় নির্বাচন অনেকাংশে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে সেগুলোতে সশস্ত্রবাহিনীর কার্যকর সহযোগিতা ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৎকালীন সরকার সেনাবাহিনীকে কার্যকরভাবে নির্বাচনী দায়িত্বে রাখতে চায়নি। কারণ সেনাবাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় নির্বাচনী অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশের মতো কোনো দলের নেতাকর্মীদের চেনেন না। তারা নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীনভাবে দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এই অবস্থান ভোট লুটের অন্তরায়। সেনা সদরের বক্তব্যে এটিই স্পষ্ট যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।
নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত, সেনাবাহিনী প্রস্তুত, রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুত, বিদেশিরাও চাচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাধ্যমে নির্বাচিত সরকার আসুক। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কেন নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হচ্ছে না। কেউ কেউ এর মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে যেকোনো উপায়ে নির্বাচনে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের ষড়যন্ত্র অনেকটাই স্পষ্ট। অভিজ্ঞজনদের মতে, ভারত দিয়ে তো আর দেশ চলবে না। ইতোমধ্যে ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমদানি-রফতানি নিষিদ্ধসহ বহু বাধার সৃষ্টি করেছে। তাতে কিন্তু দেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়েনি; বরং বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে আমদানি-রফতানির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের নজরও নির্বাচনকেন্দ্রিক। ভেতরে ভেতরে তাদের চাপও ক্রমে বাড়ছে। যা এখনো অব্যাহত আছে।
বিদেশি কূটনীতিকরা সরকারের উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে জানা ও বোঝার চেষ্টা করেন নির্বাচনের ডেটলাইন সম্পর্কে। শুরু থেকেই সরকার নির্বাচনের আগে সংস্কারের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে সেদিকেই বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু তা কার্যত বিফলই হয়। বিশেষ করে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ও দাতারা মৌন চাপ হিসেবে সাহায্য, সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়নে ধীর গতি দেখায়। এক পর্যায়ে সরকার ঘোষণা দেয়, আগামী বছরের জুনের আগে নির্বাচন নয়। এ নিয়ে যখন পরিস্থিতি অনেটাই উত্তপ্ত তখন গত মাসের ১৩ তারিখে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত বৈঠক থেকে যৌথ ঘোষণা আসেÑ আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার পরই পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। তবে ফেব্রুয়ারির কত তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবেÑ সেই ঘোষণা এখনো আসেনি। বিষেশজ্ঞদের ধারণা, সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশসহ দাতাদের চাপ ক্রমেই কমবে, সেই সাথে বাড়বে সাহায্য-সহযোগিতাও।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচনের সময় প্রকাশের পর দাতারা অর্থছাড় শুরু করেছে। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ জানতে চেয়েছিল। নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময় প্রকাশ পাওয়ার পর আইএমএফসহ দাতা সংস্থাগুলোর বাজেট সহায়তার অর্থছাড় শুরু হয়েছে। এর আগে বিশ্বব্যাংক ৫০ কোটি ডলার, এডিবি ৯০ কোটি ডলার এবং এআইআইবি ৪০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা অনুমোদন করেছে, যা ৩০ জুনের মধ্যে ছাড় হওয়ার কথা। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যেকোনো দেশেই অর্থনৈতিক কর্মকা- ও সংস্কার রাজনীতির ওপর নির্ভর করে। এসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখন নির্বাচনের একটা সময় প্রকাশ পাওয়ায় আইএমএফসহ সবাই সন্তুষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন. তাদের (দাতাদের) চিন্তা ছিল ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি-না। আমাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে হবে। আইএমএফের দৃষ্টিতে, অর্থনীতির মূল সমস্যাগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অন্তর্বর্তী বা অস্থায়ী সরকারের উপর আসলে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী বা সংস্থাগুলো আস্থা রাখতে পারে না। তারাও অপেক্ষায় ছিল একটি নির্বাচন তারিখের ঘোষণা আসুক। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা আসায় তারা এখন আস্থা ফিরে পেয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে দেশে দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী রাষ্ট্র। ইতোমধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বারবার একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমেরিকা সফরকালেও বাইডেন সরকারও একই কথা বলেছে। সর্বশেষ চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েডং বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে তারা নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বলে জানিয়েছেন চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সংস্কারের উপর জোর দিলে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা সরকারের উপদেষ্টা বা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎকালে সংস্কারের প্রতি সমর্থন জানালেও নির্বাচনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। বিশেষ করে আমেরিকা, ব্রিটেন, চীন, জাপান, ফ্রান্স, ইটালি, পাকিস্তান, রাশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা দ্রুত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতি গুরুত্বরোপ করেন, এখনো করছেন। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। একমাত্র তিনিই শুধু সংস্কারের প্রতি বেশি জোর দিয়েছেন। তবে তিনিও দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরবেÑ আশা প্রকাশ করেছেন। গত মাসে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বৈঠকের আলোচনার বিষয় তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, সবার আগে নির্বাচন। এ নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসে হতে যাচ্ছেÑ এ জন্য সবার একটা প্রস্তুতি আছে। সন্তুষ্টি আছে। তারা আশা করছেন, দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ ফিরে যাবে। তারা তো সবাই অপেক্ষা করছেন, একটি নির্বাচিত সরকারের উপর তাদের কর্মকা- কী হবে।